শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

নেপালে বিক্রি হওয়া গাড়ির ৭৬ শতাংশই বৈদ্যুতিক, বদলে দিচ্ছে পরিবহনব্যবস্থা

শুক্রবার, আগস্ট ৮, ২০২৫
নেপালে বিক্রি হওয়া গাড়ির ৭৬ শতাংশই বৈদ্যুতিক, বদলে দিচ্ছে পরিবহনব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। শহরের সরু রাস্তাগুলো মূলত পথচারী ও রিকশা চলাচলের উপযোগী হলেও এখন সেগুলো ঠাসা ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে। বাস, মোটরবাইক, ছোট ট্রাক ও ট্যাক্সির কারণে শহরবাসী প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তবে সম্প্রতি শহরের জনজীবনে এক নতুন ধরনের যানবাহনের কারণে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। আর তা হলো বৈদ্যুতিক গাড়ি। দেশজুড়ে বিভিন্ন শোরুমে এই গাড়িগুলো দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। আর মহাসড়কের এসব গাড়ির চার্জিং স্টেশনগুলো রূপ নিচ্ছে চালকদের বিশ্রামকেন্দ্রে।

নেপালে বেশ দ্রুত এই পরিবর্তন ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশটিতে যতগুলো যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার ৭৬ শতাংশই ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। বাণিজ্যিক হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে এই হার ৫০ শতাংশ। যেখানে পাঁচ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত দুটি বড় কারণ রয়েছে। প্রথমত, নেপালের সরকারি নীতিমালা, যেখানে দেশীয় জলবিদ্যুৎ সম্পদের ব্যবহার বাড়ানো, আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বায়ুদূষণ হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিকভাবে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের প্রধান উৎপাদক চীনের প্রভাব।

নেপালের কাস্টমস বিভাগের মহাপরিচালক মহেশ ভট্টরাই বলেন, 'আমাদের জন্য ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহার সুবিধাজনক ও লাভজনক। চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈশ্বিক বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এর প্রতিফলন আমরা নেপালেও দেখতে পাচ্ছি।'

বর্তমানে অনেক দেশই পরিবহন খাতে বৈদ্যুতিক রূপান্তরের দিকে এগোচ্ছে। তবে নেপাল এই পরিবর্তনে প্রাকৃতিকভাবে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলোতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এখানে।

২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে নেপাল সরকার জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিড অবকাঠামোয় ব্যাপক বিনিয়োগ করে। এর ফলে দেশটি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়। এখন সেখানে লোডশেডিংয়ের যুগ শেষ হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।

এই বিদ্যুৎ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের প্রসারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে নেপাল সরকার। দেশটির রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হলো আমদানি শুল্ক। আমদানি কর থেকে শুরু করে শুল্কেও দেওয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য ছাড়। ২০২১ সালে নেপাল সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কম রাখার জন্য এসব গাড়ির ওপর শুল্ক ও আবগারি কর মিলিয়ে মোট ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করে, যেখানে গ্যাসচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে এই হার ১৮০ শতাংশ। পাশাপাশি, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ৬২টি চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করেছে।

সরকার যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপাদান ট্রান্সফরমার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয়, চার্জিং স্টেশনগুলোর জন্য বিদ্যুতের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ কম। এ কারণে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মহাসড়কের পাশের ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চার্জিং স্টেশন স্থাপন শুরু করেছেন। ইলেকট্রিসিটি অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০ চার্জিং পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে, রয়েছে উদ্বেগও

প্রথমদিকে নেপালের গাড়ি বিক্রেতারা বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু চীনের শীর্ষ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা 'বিওয়াইডি'–এর যমুনা শ্রেষ্ঠা এক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন।  ২০১৬ সালে শেনজেন সফরে গিয়ে নতুন মডেলের কয়েকটি বৈদ্যুতিক গাড়ি দেখে মুগ্ধ হন তিনি। এর কয়েক বছরের মধ্যেই 'বিওয়াইডি'-এর লাইসেন্স নিয়ে নেপালে এসব গাড়ি বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তার ১৮টি ডিলারশিপ রয়েছে। তিনি চলতি বছর চার হাজার গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এখন অবশ্য অসংখ্য চীনা ব্র্যান্ড দেশটির বাজারে প্রবেশ করেছে।

নেপালের পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিত বাহাদুর শাহী (৪৩) প্রায় ৩৩ হাজার ডলার দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক মিনিবাস কিনেছেন। তিনি কাঠমান্ডু থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী জনকপুর শহরের মধ্যে এ গাড়ি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন। 

তিনি বলেন, 'গাড়ি ভালো চলছে, আমি সন্তুষ্ট। তবে সমস্যা হলো- চার্জিং স্টেশন সবখানে নেই।' তবে গাড়ির ওয়ারেন্টি শেষ হলে মেরামত ব্যয় এবং ব্যাটারি নষ্ট হলে করণীয় নিয়ে তিনি কিছুটা শঙ্কায় আছেন।

এদিকে কিছু ব্যবসায়ী ও পরিবেশবিদের আশঙ্কা- সরকার ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে তাদের আগের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছে। যেমন, এই বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ডাউন পেমেন্ট দ্বিগুণ করেছে। পাশাপাশি, গাড়ি আমদানির ফলে রাজস্ব কমে যাওয়ায় সরকার আবার শুল্ক বাড়াচ্ছে।

সবার জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি

যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে নেপালে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তবে দেশটির বেশিরভাগ নাগরিকেরই ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। তারা সস্তা মোটরবাইক কিংবা পেট্রোল ও ডিজেলচালিত বাসে যাতায়াত করেন। বায়ুদূষণ সত্যিই কমাতে চাইলে জনপরিবহন ব্যবস্থাতেও বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যবহার বাড়াতে হবে।  

তবে সমস্যা হলো, বৈদ্যুতিক বাসের দাম অনেক বেশি, আর গণপরিবহনের ভাড়া নেপালে অত্যন্ত কম। সর্বোচ্চ মাত্র ৩৬ সেন্ট। ফলে বাসে বিনিয়োগ করা অনেক কঠিন। এ অবস্থায় সরকার বৈদ্যুতিক বাস কেনার জন্য প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। তবে 'সাজহা যাতায়াত' নামের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বাস কোম্পানির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান কানক মণি দীক্ষিত মনে করেন, এই সহায়তা যথেষ্ট নয়।

এই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চীন এগিয়ে এসেছে। সম্প্রতি তারা বিনামূল্যে ১০০টি বৈদ্যুতিক বাস দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

বর্তমানে কাঠমান্ডুর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটরবাইকের অপ্রতিরোধ্য বিস্তার, যা স্থানীয় নানা কারণে এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে কানক মণি দীক্ষিতের বিশ্বাস, কেউ না কেউ এগিয়ে এসে একদিন এই শহরকে আরও সুন্দর ও দূষণমুক্ত করে তুলবে। আর আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক এই সময়ে শহরের রাস্তায় হাজির হয়েছে বৈদ্যুতিক বাস। হয়তো মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আশাবাদী তিনি। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল