বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

ট্রাম্প-মোদীর ‘বন্ধুত্ব’ নষ্টের নেপথ্যে গরুর দুধ?

মঙ্গলবার, আগস্ট ১২, ২০২৫
ট্রাম্প-মোদীর ‘বন্ধুত্ব’ নষ্টের নেপথ্যে গরুর দুধ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ, কারণ তারা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। তবে দেশটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের কারণ কেবল ভূরাজনীতি নয়। কৃষি এবং দুগ্ধখাতই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়। আর কৃষি নিয়ে তো রীতিমতো লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরদিন গত ৭ আগস্ট তিনি বলেন, ভারত কখনোই কৃষক, দুগ্ধশিল্প ও জেলেদের স্বার্থে আপস করবে না।

দুগ্ধশিল্পে ভারতের গৌরব
মোদীর মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের কাছে দুগ্ধশিল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হিন্দুধর্মে গরু পবিত্র প্রাণী। পাশাপাশি এটি দেশটির জাতীয় গৌরবেরও প্রতীক। ভারত এখন দুগ্ধশিল্পের এক পরাশক্তি। প্রায় তিন দশক ধরে দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উৎপাদক, যা এখন বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করে।

ভারতের সমবায়গুলো কৃষকদের দুধ কিনে নেওয়ার নিশ্চয়তা দেয় এবং দাম বাড়লে বোনাস দেয়। কিছু সমবায় জাতীয় পর্যায়ে বড় ব্র্যান্ডেও পরিণত হয়েছে—যেমন গুজরাটের আমুল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ভারতের বাণিজ্য অংশীদারদের দৃষ্টিতে এই শিল্পই ভারতের সমস্যার কারণ। এটি ভর্তুকিনির্ভর, দূষণকারী (মিথেন নির্গমন) এবং উচ্চ শুল্ক ও জটিল অশুল্ক বাধায় বেষ্টিত।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে টানাপোড়েন রয়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আগের আলোচনায়ও এটি ছিল সবচেয়ে জটিল ইস্যুগুলোর একটি। এমনকি ২০১৯ সালে বড় আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি থেকে ভারতের সরে যাওয়ার অন্যতম কারণও দুগ্ধখাত।

উৎপাদনশীলতায় পিছিয়ে ভারত
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিমাংশু বলেন, মোদী ও ট্রাম্প দুজনেই ‘প্রো-ফার্মার’, কিন্তু তাদের কৃষকরা, বিশেষত দুগ্ধচাষিরা, সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতে প্রায় ২০ কোটি গবাদিপশুর মধ্যে ৬ কোটি ২০ লাখ দুধের গরু—গড়ে প্রতিটি খামারে চারটিরও কম, আর জমি মাত্র এক হেক্টর। প্রায় ৮ কোটি পরিবার এক বা একাধিক গরু/মহিষ পোষে। তুলনায়, যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে মাত্র ২৪ হাজার দুগ্ধ খামার, কিন্তু প্রতিটি খামারে গরু গড়ে ৩৯০টি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও ভারতীয় গরু ও কৃষকদের উৎপাদনশীল অপ্রতুল। গড়ে একটি মার্কিন গরু ভারতীয় গরুর চেয়ে সাতগুণ বেশি দুধ দেয়।

তাছাড়া, ভারত দুগ্ধচাষিদের সুরক্ষায় আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে—মাখন ও চিজে ৪০ শতাংশ, গুঁড়োদুধে ৬০ শতাংশ। ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে যে শুল্ক বাসিয়েছেন, এটি তার কাছাকাছি। দক্ষিণ ভারতের বেসরকারি জৈব-দুগ্ধ প্রতিষ্ঠান অক্ষয়কালপার প্রধান শশী কুমারের মতে, এই সুরক্ষা না থাকলে ভারতের ক্ষুদ্র খামারগুলো ধসে পড়বে।

কৃষকদের স্বার্থে কঠোর অবস্থান
ট্রাম্পের আলোচকরা শুধু শুল্ক নয়, আরও কিছু বিষয়ে আপত্তি করেন। ভারত তুলা ছাড়া কোনো জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ফসল আমদানি করে না। আবার দুগ্ধপণ্যে ‘নন-ভেজ মিল্ক’ নিষিদ্ধ—যেখানে আমদানি করা পণ্যে প্রমাণপত্র দিতে হয় যে গরুকে কোনো পশুজাত খাবার, যেমন- হাড়ের গুঁড়ো খাওয়ানো হয়নি। সমালোচকেরা একে হিন্দু জাতীয়তাবাদের আড়ালে থাকা অশুল্ক বাধা বলেন। তবে আইনটি প্রথম প্রণীত হয় ২০০৩ সালে, ইউরোপে ‘ম্যাড কাউ’ রোগের আতঙ্কের প্রতিক্রিয়ায়।

তবুও, ভারত সরকার কৃষকদের সুরক্ষায় যেকোনো কৌশল ব্যবহার করবে—এ ধারণা পুরোপুরি অমূলক নয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কৃষি সম্পাদক হরিশ দামোদরন জানান, ভারতীয় কৃষকেরা গত চার বছরে দুবার সংস্কারের প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছেন। ২০২১ সালে দিল্লিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর মোদী সরকার তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে ট্রাম্প কূটনৈতিক চাপ দিয়ে যে পরিবর্তন আনতে চাইছেন, সেটি সম্ভবত ব্যর্থ হবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল