বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

একুশ আগস্ট গ্রেনেড মামলার ২১ বছর

মামলা নিষ্পত্তি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২১, ২০২৫
মামলা নিষ্পত্তি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

একুশ বছর পেরিয়ে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। হাইকোর্ট থেকে এ মামলায় খালাসপ্রাপ্ত সব আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে। 

গতকাল বুধবার চতুর্থ দিনের মতো শুনানি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি আছে। চলতি মাসেই এ মামলার আপিল শুনানি শেষ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। হামলায় জিল্লুর রহমানের (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। 

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। 

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল গ্রহণ করে ১ ডিসেম্বর এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়কে বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯ আসামি মামলা থেকে মুক্তি পান। এর পর ১৯ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। 

গত ১৩ মার্চ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। একই সঙ্গে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে বলা হয়। এরপর ২৪ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। 

এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাসপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের পক্ষের (স্টেট ডিফেন্স) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগে এই মামলাটির শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। হাইকোর্ট যে আসামিদের খালাস দিয়েছিলেন সেটি সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

এ আইনজীবী আরও বলেন, রাষ্ট্রের কাজ সঠিকভাবে তদন্ত করে বিচার কার্যক্রমকে সহায়তা করা। এখানে সঠিকভাবে তদন্ত করতে ওই সময় ব্যর্থ হয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিদের পিটিয়ে ও নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করা হয়েছিল। বিচার হয়েছে, কিন্তু ভুল ব্যক্তিদের সাজা হয়েছে। বিচারিক আদালত যে সাজা দিয়েছেন, সেটি সঠিক ছিল না। সে কারণে হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এই মামলায় হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দিয়ে সরকারকে বলেছেন, মামলাটি পুনঃবিচার করতে। কিন্তু এখন এটি করার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে এ মামলায় বিচারিক আদালতে ২২৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার মধ্যে ১২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচারে কোনো গাফিলতি থাকলে সেটি আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। 

জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এ মামলায় তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সবাই খালাস পাওয়ার যোগ্য। কারণ তাদের রাজনৈতিকভাবে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। সাক্ষীদের নির্যাতন ও নিপীড়ন করে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। এ ধরনের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। 

হাইকোর্টে বিচার বাতিল

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায়কে বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্ট বলেন, এ মামলায় দোষীদের দুর্বল ও শোনা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন বিচারিক আদালত। সাক্ষীরা ঘটনার বিভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু কে গ্রেনেড ছুড়েছেন, তা জবানবন্দিতে বলেননি। 

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মুফতি হান্নানের জবানবন্দির আলোকে যে দ্বিতীয় অভিযোগপত্র নেওয়া হয়েছে সেটি ছিল অতিমাত্রায় বেআইনি। এ ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। প্রথম অভিযোগপত্রটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ২০১১ সালের জুলাই মাসে ওই অভিযোগপত্রও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে তৈরি, যা তিনি পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। বড় কথা, তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ২৫ জন সাক্ষীর কেউই বলেননি– কে গ্রেনেড ছুড়েছেন বা কাউকে ছুড়তে দেখেছেন কিনা। ফলে প্রকৃত খুনি কে– এর প্রমাণ নেই। শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অন্য আসামিকে সাজা দেওয়া যায় না।  

জয়নুল কমিশনের প্রতিবেদন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তিন দিন পর হাইকোর্টের বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের একক নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। ৪০ দিন পর তদন্ত শেষে ১৬২ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন সে সময় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের কাছে দাখিল করা হয়। ওই কমিশনের তৈরি করা প্রতিবেদনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে ইঙ্গিত করে একটি বিদেশি শক্তি জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে পড়ে তদন্ত কমিশন।  

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল