বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

গাজায় ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ, অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৮, ২০২৫
গাজায় ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ, অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ। এমন সতর্কবার্তাই উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই উপত্যকাটিতে অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে আরও এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধ ও অব্যাহত হামলার কারণে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশ করতে না পারায় শিশুদের ক্রমবর্ধমানভাবে না খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বিবৃতিতে কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ও ব্যাপক ক্ষুধা “ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট মানবসৃষ্ট বিপর্যয়”।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জয়েস মুসুইয়া জানান, উত্তর-মধ্য গাজায়, বিশেষ করে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহার, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন। সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গাজার কার্যত কোনো মানুষই ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচতে পারছেন না।”

মুসুইয়া আরও জানান, পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজারেরও বেশি শিশু আগামী মাসগুলোতে জীবন-সংকটের মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, “এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খরার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ নয়। এটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট— একটি সংঘাতের পরিণতি, যা বিপুল প্রাণহানি, আহত, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি ডেকে এনেছে।”

এর আগে বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় “দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে” আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে, যার মধ্যে ১১৯ শিশু।

অন্যদিকে, ইসরায়েল জাতিসংঘ সমর্থিত দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)–কে গাজার দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এডেন বার টাল ওই প্রতিবেদনকে “ত্রুটিপূর্ণ, অপেশাদার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য প্রত্যাশিত মানের বাইরে” বলে মন্তব্য করেছেন।

তবে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪ সদস্য দেশ আইপিসি–র প্রতিবেদনকে সমর্থন জানায়। তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজায় দুর্ভিক্ষ অবিলম্বে অবসান ঘটাতে হবে”। একইসঙ্গে “অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির” আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

এদিকে শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্বশক্তিগুলোর নীরবতাকে নিন্দা করে বলেন, “গাজায় দুর্ভিক্ষ এসে গেছে— এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। গাজার শিশুদের পরিকল্পিতভাবে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবেই ক্ষুধাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, গাজার ক্লিনিকগুলো “কঙ্কালসার শিশুতে ভর্তি, তারা এতটাই দুর্বল যে তারা ব্যথায় কাঁদতেও পারছে না। অনেকেই নিস্তব্ধ হয়ে আছে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।”

অ্যাশিং জানান, আগে শিশুদের আঁকায় শান্তি, শিক্ষা আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা যেত, কিন্তু এখন তারা শুধু খাবারের ছবি আঁকে। সম্প্রতি অনেক শিশু এমনকি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করছে। একটি শিশুর লেখা তুলে ধরে তিনি বলেন: “ইশ, আমি যদি আমার মায়ের কাছে স্বর্গে থাকতে পারতাম। সেখানে ভালোবাসা আছে, খাবার আছে, পানি আছে।”

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল