বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

দেশের স্বার্থেই কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করতে হবে: বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৮, ২০২৫
দেশের স্বার্থেই কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করতে হবে: বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন

বাকৃবি প্রতিনিধি: 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেছেন, দেশের প্রেক্ষাপটে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য কম্বাইন্ড ডিগ্রি (বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স এন্ড এএইচ) অপরিহার্য। আমরা শিক্ষক হিসেবে চাইব, শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এবং দেশের স্বার্থে কল্যাণকর সেই ডিগ্রি হোক। প্রাণিসম্পদ সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে স্পষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমরা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো মতামত দিইনি, ব্যক্তিগত স্বার্থেও নয়। এতে করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা এগিয়ে যেতে পারবে। 

বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। 

ড. বাহানুর রহমান আরও বলেন, এই ডিগ্রি মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে দুই অনুষদে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে মতামত দিয়েছি। বর্তমান বাস্তবতায় একজন ভেটেরিনারি সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস দেওয়ার সক্ষমতা থাকা জরুরি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা ডিএলএস (ডিপার্টমেন্ট অব লাইভস্টক)-এ যোগ দিতে হলে এই ডিগ্রি আবশ্যক। তাই বাকৃবিতে যদি কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু হয়, তবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও তা অনুসরণ করবে । 

কম্বাইন্ড ডিগ্রি হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যারা ডিভিএম (ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন) ডিগ্রির জন্য ভর্তি হয়েছে তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ভেটেরিনারিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ দেশীয় এবং ২ শতাংশ বিদেশি। এত বিপুল সংখ্যক দেশীয় গ্রাজুয়েটের চাকরির বাজার নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। শুধুমাত্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর অনুষদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। নেপালের শিক্ষার্থীদের তাদের দেশের নিবন্ধন পেতে কোনো সমস্যা নেই। মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তাদের দেশীয় নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই চলছে। এ বিষয়ে মাননীয় ভিসির সাথে আলোচনা হয়েছে এবং শিগগিরই একটি টিম মালয়েশিয়া গিয়ে তাদের ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সাথে বৈঠক করবে। বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণের জন্য বাকৃবিতে ইতোমধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সেল গঠন করা হয়েছে, যা তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ডিন ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন বলেন, ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সে সময় বি.এসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ডারি ডিগ্রিকে ভেঙে আলাদা করে ডিভিএম (ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন) এবং বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি করা হয়। মূলত এটি ছিল একটি পাঁচ বছরের প্রকল্প, যা পর্যালোচনা করার কথা ছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে একই প্রক্রিয়া চালু হলেও পর্যালোচনার পর তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে তা আর সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮০-এর দশক থেকে সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে একাধিক কমিটি গঠন করে— এনাম কমিটি, শামসুল হক বারি কমিটি ও এরশাদুল হক কমিটি। এসব কমিটি বারবারই একটি ইন্টিগ্রেটেড বা কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন হয়নি। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল থেকেও প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়া যায়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম বলেন, ১৯৬১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যেসব অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েট মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের পক্ষ থেকেই কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি উঠেছে। যদি শুধু ভেটেরিনারিরা এই দাবি তুলতেন, তাহলে একপক্ষের দাবি বলা যেত। মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে গ্র্যাজুয়েটরা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো জানাচ্ছেন, আর শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছেন কম্বাইন্ড ডিগ্রির যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব। তাই তারা আন্দোলন করছে। আসলে দেশের জন্য এই ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা এখন আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই যারা উচ্চতর পর্যায়ে নিজেদের বিকশিত করতে পারবে। এজন্য আমাদের বন্ধুপ্রতিম অনুষদগুলোকে অনুরোধ করব, দেশের ও শিক্ষার্থীদের প্রেক্ষাপটে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে। যাতে আমরা দেশের লাইফস্টাইলকে উন্নতির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি এবং বিদেশেও আমাদের লাইভস্টক পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হই।

অনুষ্ঠানে ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, কোনো দেশের কাউন্সিল কোনো ডিগ্রিকে রেজিষ্ট্রেশন দেওয়ার সময় নাম নয়, বরং পাঠ্যক্রমের সময় ও বিষয়বস্তু বিবেচনা করে। বর্তমানে আমাদের ডিভিএম ডিগ্রিতে কিছু ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ফার্ম বা পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে তারা পূর্ণাঙ্গ ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ফিল্ডে প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলও ভবিষ্যতে এ ডিগ্রিকে স্বীকৃতি নাও দিতে পারে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর পর দেশের প্রাণি সম্পদের উন্নতি হয়েছে বলে তারা বক্তৃতা দেন। তাহলে বাকৃবিতে চালু হলে কেন প্রাণি সম্পদের ক্ষতি হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর লক্ষ্যে গত ২৭ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ৩০ জুলাই থেকে একটানা তালাবদ্ধ রয়েছে অনুষদটি। অন্যদিকে একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। গত ২৫ আগস্ট থেকে অনষদে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন তারা।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল