সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ৬২২

সোমবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫
আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ৬২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পূর্ব আফগানিস্তানে রোববার গভীর রাতে ৬.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে নানগারহার ও কুনার প্রদেশসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান (আরটিএ)।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল নানগারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে। এর গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। অগভীর ভূমিকম্পে সাধারণত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।

মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশের একাধিক সূত্র বিবিসিকে বলেছে, 'শত শত মানুষ মারা গেছেন'; আরও অনেকে আহত হয়েছেন। 

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, 'শত শত' মানুষ হতাহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করা যায়নি।

কুনার প্রদেশের পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু আকাশপথেই উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে।

তালেবান সরকার এ বিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেন, কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু এই একটি উপত্যকাতেই 'শত শত মানুষ' হতাহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে হতাহতের এই সংখ্যা সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসি বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে, এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।

হেলিকপ্টারে মৃতদেহ পরিবহনের কাজ তদারকি করছেন, এমন একজন তালেবান কর্মকর্তা বলেন, একটি গ্রামেই ২১ জন মারা গেছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

কুনার ও নানগারহার প্রদেশের কয়েকজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, গত রাতে তারা একাধিকবার পরাঘাত (আফটারশক) অনুভব করেছেন। 

২৮ বছর বয়সি পোলাদ নূরী পরাঘাতের ভয়ে মাঝরাতে নানগারহার প্রদেশে তার বাড়ির বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি প্রায় ১৩টি পরাঘাত গুনেছেন বলে জানান। এ সময় শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। 

তিনি আরও বলেন, 'আমি জীবনে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখিনি।' 

ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। আবার অন্যান্য অংশে ভূমিধস ও বন্যার কারণে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে আঘাত হানে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই ঘটনায় অন্তত ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তবে জাতিসংঘ মৃতের সংখ্যা অনেক কম, প্রায় ১ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছিল।

আফগানিস্তানে কেন এত বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়?

আফগানিস্তান অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। কারণ দেশটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বেশ কয়েকটি ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত।

২০২২ সালে পূর্ব আফগানিস্তানে ৫.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত এবং ৩ হাজার মানুষ জন আহত হন। গত দুই দশকে দেশটিতে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

সেই ভূমিকম্পটি মাঝারি মাত্রার হলেও ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হওয়ায় অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল।

রোববারের ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল আরও কম, মাত্র ৮ কিলোমিটার। এ কারণে শত শত মানুষের হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আফগানিস্তানের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের সময় বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। কারণ দেশটির ভবনগুলো কাঠ, কাঁচা ইট বা দুর্বল কংক্রিট দিয়ে তৈরি, যা সাধারণত ভূমিকম্প প্রতিরোধী হয় না।

আফগানিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধসে ঘরবাড়ি চাপা পড়ে, আবার নদীর প্রবাহও আটকে যায় অনেক সময়। 

ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাটও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে উদ্ধারকর্মী ও সরঞ্জাম নিয়ে দুর্গম এলাকাগুলোতে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল