এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
অর্থের বিনিময়ে নয়, মেধা আর যোগ্যতা দিয়েই পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়—এমনটাই প্রমাণ করে দেখালেন ফরিদপুরের ২৩ জন তরুণ-তরুণী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন দরিদ্র পরিবার থেকে। মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে তন্দ্রা আক্তার, ট্রাক চালকের ছেলে তামিম মণ্ডল এবং কৃষি শ্রমিকের ছেলে সিয়াম মোল্যার মতো অনেকেই মাত্র ২২০ টাকার সরকারি ফি জমা দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তাঁদের এই সাফল্য পরিবার এবং সমাজের চোখে এনেছে এক নতুন দিগন্ত।
অভাবের সংসারে আলোর ঝলকানি :
ফরিদপুর জেলা সদরের ঘনশ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা তন্দ্রা আক্তার (১৮)। তাঁর বাবা একজন মাহিন্দ্রা চালক। সমাজে এমন একটা ধারণা প্রচলিত ছিল যে, টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না। কিন্তু তন্দ্রা তাঁর মেধা ও যোগ্যতার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, “মানুষ বলাবলি করত টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। আমার বাবার পক্ষে ৮-১০ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়েছে। মাত্র ২২০ টাকায় চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বাবার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।”
একইভাবে, জেলা শহরের রঘুনন্দন এলাকার ট্রাক চালকের ছেলে তামিম মণ্ডলও মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁর চোখে মুখে ছিল বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কৃষি শ্রমিকের ছেলের অদম্য লড়াই :
সিয়াম মোল্যা, যার বাবা একজন কৃষি শ্রমিক, তিনি মৌখিক পরীক্ষায় বন্ধুর পোশাক ধার করে এসেছিলেন। অভাবের সাথে তাঁর লড়াই যেন অন্য সবার চেয়ে বেশি ছিল। সিয়াম বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। বাবার সাথে কৃষি কাজ করে পড়াশোনা করেছি। আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই সাফল্য আমি আমার বাবার হাত ধরেই পেয়েছি।”
মেধা ও যোগ্যতা ছিল মূল ভিত্তি :
ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী, এ বছর কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে ১,২১১ জন আবেদন করেছিলেন। কঠিন শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে মাত্র ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল কঠোর ভূমিকা পালন করেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, “পুলিশের নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও আমরা ফরিদপুরে মেধা ও যোগ্যতাকে একমাত্র ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছি। আমরা কারও পারিবারিক পরিচয় দেখিনি। যারা নির্বাচিত হয়েছে, প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেয়েছে।”
তিনি আরো জানান, এই ২৩ জন তরুণ-তরুণীর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখলে যোগ্যতার ভিত্তিতেই সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। তাঁদের গল্পগুলো অসংখ্য স্বপ্ন দেখা মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে, যারা শুধু মেধা আর পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চায়।
এমআই