নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক মোল্লা ওরফে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা, ভাঙচুর, কবর অবমাননা ও মরদেহে আগুন দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। এতে ঘটনাটিকে আমাদের মূল্যবোধ, আইন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং প্রতিটি মানুষের জীবনের পবিত্রতা, জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সরকার জানায়, আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করছি, এ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতে দ্রুত ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ঘৃণা ও সহিংসতাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করুন, সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং ন্যায়বিচার ও মানবতার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গড়ে তুলুন।
বণিক বার্তার রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, বহু বছর আগে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল হক মোল্লা ওরফে নুরাল পাগলা নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন। এক সময় নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। সারা দেশে গড়ে উঠে তার ভক্ত। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরাল পাগল। পরে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উপরে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। এ বিষয়ে তখন থেকে বিভিন্ন মহল আপত্তি জানিয়ে আসছে।
আজ দুপুরে জুমার নামাজের পর কবরটি স্বাভাবিক করার দাবিতে গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এক পর্যায়ে মিছিল থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরে মিছিলটি নুরাল পাগলার মাজারের দিকে এগিয়ে যায়। একই সময় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিক্ষোভ মিছিল এক হয়ে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ সময় মাজারে থাকা ভক্ত-অনুসারীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
বিক্ষুব্ধদের দাবি, বিক্ষোভ মিছিলটি মাজারের সামনে পৌঁছলে নুরাল পাগলার ভক্ত-অনুসারীরা তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর ঘণ্টাখানেক পর আবারো মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে আসতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধা অতিক্রম করে পুনরায় মাজারে ভাঙচুর চালায় তারা। আগুন দেয়া হয় মাজারে। এর এক পর্যায়ে কবর থেকে তোলা হয় নুরাল পাগলার কফিনবন্দি মরদেহ। পরে উপজেলার পদ্মার মোড়ে নিয়ে গিয়ে পেট্রোল ঢেলে এতে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, উত্তেজিত জনতা ও নুরাল পাগলার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতে সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় তার ও ওসির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থার বিরাজ করছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, উত্তেজিত জনতা ও নুরাল পাগলার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকা এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
একে