অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর চরবংশী, রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীতে মৌসুমের আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও চাহিদা মাফিক ইলিশ ধরা পড়ছে না। যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে তার দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ইলিশ মাছের ঘ্রাণে সরকারি চাকরিজীবীদের বাসা-বাড়ী বিভোর। দামের উত্তাপে পুড়ছে সাধারন ক্রেতারা। কিনতে পারছে না স্বপ্নের ইলিশ। তবে বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলো ঘুরে এ সময়ে ইলিশের কিছুটা দেখা পেলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। বিশেষ করে এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ এখন প্রায় অনুপস্থিত।
জানা যায়, প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টাকে ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে বিভিন্ন আকারের ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও এ বছর সেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। এতে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের।
রায়পুর উপজেলার চরবংশীতে থাকা বিভিন্ন ইলিশ ঘাট, সদরের চরমনীতে করাতিরহাট, মজুচৌধুরী ঘাট, বুড়ির ঘাট, কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাসিরগঞ্জ, বাত্তির খালের ঘাট, লুধুয়া, রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, রামগতি বাজার, টাংকিরঘাটসহ বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মাছঘাটগুলোতে জেলে ও পাইকারদের হাঁকডাকে কিছুটা সরগরম হলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এ প্রতিবেদকের সামনেই প্রায় এক কেজির ইলিশ ডাকে ৩ হাজার ৯শ ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। যা কিনেছেন খুচরা বিক্রেতা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম - এ মাছ বিক্রি করবেন কতো? তিনি নানা প্রসঙ্গ টেনে বলেন - কোনো মাছে লস দিতে হয়, আবার কোনো মাছে লাভ করতে হয়। প্রতিযোগিতার ডাকে অনেকেই ইলিশ না কিনেই খালি হাতে ফিরছেন। কেউবা ইলিশ না কিনে অন্য মাছ নিচ্ছেন। তবে মাছ বিক্রেতারা বলছেন, সঠিক সময় নিরুপণ না হওয়ায় মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। মা ইলিশ ধরার সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার এক মাস পরেও প্রচুর পরিমাণে ডিমঅলা মা ইলিশ নিধন এবং কোষ্টগার্ড ও নৌপুলিশদের ম্যানেজ করে ঝাটকা ধরার কারনে এখন নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে না পারায় ইলিশের সরবরাহ কমেছে। আকাশছোঁয়া দাম দেখে অনেকেই ইলিশ না কিনেই হতাশ হয়ে ফিরছেন বাড়িতে। এই সংকট অল্প সময়ের মধ্যে কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা। মাছ ব্যবসায়ীদের অনেকেই সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে জানান, বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকায়, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের দাম বাড়তে বাড়তে এখন নিম্ম ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে স্বপ্নের ইলিশ স্বপ্নই থেকে যাবে।
রামগতি বাজার এলাকার জেলে খলিল মাঝি বলেন, ‘মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে, সারাদিন নদী ঘুরে সামান্য কিছু ইলিশ পেয়েছি। দামও কিছুটা বেশি। এই মাছ বিক্রি করে আমাদের জ্বালানি খরচও উঠবে না।’
আলেকজান্ডার মাছঘাটে মাছ কিনতে আসা আব্দুর রব মিয়া বলেন, ‘বাজারে মাছ কম। কিছু ইলিশ দেখলাম, তবে দাম বেশি। তাই চলে যাচ্ছি। দেশি প্রজাতির মাছ নেবো।’
কমলনগরের নাছিরগঞ্জ মাছঘাটের জেলে ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা জেলেরা সম্পূর্ণ নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদীতে মাছ না থাকলে আমাদের বেচা-বিক্রির অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। আগের তুলনায় এখন কিছুটা ইলিশ পড়া শুরু হয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লে দাম কমতে শুরু করবে।’
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, ‘ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম। এখন জেলেরা সমুদ্র থেকে ফিরছে, আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করছি।’
রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ-উজ-জামান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের দিকে ইলিশ পড়তে শুরু করবে। বাজারে ইলিশ কম আসছে, তাই দাম একটু বেশি।’
এমআই