ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম :
বাংলাদেশে মহামারীর প্রথম ঢেউয়ে একশ্রেনীর ডাক্তার সবাইকে খাওয়া শেখালেন উঁকুননাশক ওষুধ আইভারমেকটিন।
আর তৃতীয় ঢেউয়ে এসে আরেক শ্রেনীর ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হলেই রোগীকে আইভারমেকটিনের সাথে খাওচ্ছেন ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেটসহ আরো অনেক ধরনের ওষুধ যেমন রেভারক্সাবান এবং এন্টিবায়োটিক্স।
একজন যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে উঠে এবং ফুসফুসে প্রবেশকৃত ভাইরাস এবং ভাইরাসে আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।
ডেক্সামেথাসন বা অন্যান্য স্টেরয়েড জাতিয় ওষুধ এই ইমিউন সিস্টেমের সক্রিয় হওয়াকে বাঁধাদেয় বা নিস্ক্রিয় করে। এর ফলে ফুসফুসে প্রবেশকৃত ভাইরাস ধ্বংস না হয়ে বরং রিপ্লিকেশন বা বংশবৃদ্ধি শুরু করে এবং সংক্রমণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে মাইল্ড কোভিড সিভিয়ার আঁকার ধারন করতে পারে।
গত বছরে যুক্তরাজ্যের ‘রিকভারি ট্রায়াল’ থেকেই মূলত কোভিড চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসনের ব্যবহার রিকমেন্ডেশন করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করে দেয়া হয় যে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর যখন অক্সিজেন থেরাপীর প্রয়োজন হবে, ঠিক তখনই প্রতিদিন ৬ মিলিগ্রাম করে ডেক্সামেথাসন দিতে হবে ৭ দিন। যে সকল কোভিড রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই তাদের কোন ভাবেই ডেক্সামেথাসন বা প্রেডনিসোলন দেয়া যাবে না।
অর্থাৎ, কোভিডের শুরুতে ভাইরাস যখন রিপ্লিকেশন স্টেজে থাকে তখন ডেক্সামেথাসন দেয়া যাবে না। সিভিয়ার কোভিডে যখন সাইটোকাইন স্টোর্ম বা অতিমাত্রার ইনফ্লামেশন শুরু হবে তখনই ডেক্সামেথসন দিতে হবে।
আপনারা যারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিচ্ছেন তারা মূলত মহাবিপদ ডেকে আনছেন। যেখানে আপনি আপনা আপনিই ভাল হয়ে যেতে পারতেন সেখানে ডেক্সামেথাসনের কারনে আপনি হয়তো সিভিয়ার কোভিডে ভুগতে পারেন, এমনকি এতে আপনার মৃত্যুও হতে পারে।
এছাড়াও কোভিডের সময় উচ্চ মাত্রার ডেক্সামেথাসন বেশীদিন ধরে সেবন করলে আপনি ব্ল্যাক ফাংগাস রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।
সুতরাং সতর্ক হোন। ইচ্ছেমত ওষুধ সেবন বন্ধ করুন। করোনায় আক্রান্ত হলে ৯০-৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই আপনি শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং কাশির সিরাপেই একদম সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
লেখক : ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম,
এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি,
সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট,
শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য