শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নোয়াখালীতে দীর্ঘ জলবদ্ধতায় এলজিইডির সাড়ে ৪শত কিঃমি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫
নোয়াখালীতে দীর্ঘ জলবদ্ধতায় এলজিইডির সাড়ে ৪শত কিঃমি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

মোঃ আবদুল্যাহ চৌধুরী, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

২০২৪ সালের বন্যার পর চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) আঞ্চলিক ও গ্রামীণ বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দপ্তরটির প্রাথমিক হিসেব মতে এখন পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০কিলোমিটার সড়ক। আর সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওইসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে পানি ক্ষতির হিসেব করে সড়কগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোথাও সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের, কোথাও ভেঙে পাশের জলাশয় বা ক্ষেতের মধ্যে পড়েছে সড়কের সাইড, মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে কাঁদা-মাটি আর পানিতে মাখামাখি এখনও সড়কের অনেকাংশ। এমন চিত্র নোয়াখালীর ৯উপজেলার এলজিইডির বেশির ভাগ সড়কের। যার ফলে এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস’সহ ছোট-বড় অনেক যানবাহন। সড়কে গর্ত থাকায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। যানবাহন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচালকারীরা। এমতাবস্থায় এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে ছোট যানবাহনগুলো। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কের মাঝখানে থাকা গর্তগুলোতে পানি জমে থাকার কারনে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন, যার ফলে বাড়ছে দূর্ঘটনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে খানা-খন্দে ভরা এসব সড়কগুলো মেরামত ও সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও এলজিইডির তথ্যমতে, দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় জেলার সদর উপজেলার উদয়সাধুরহাট-করমুল্যা সড়ক, ওদারহাট-সফিগঞ্জ বাজার সড়ক, বাংলা বাজার-শান্তিরহাট সড়ক। সুবর্ণচর উপজেলার আটকপালিয়া-হালিম বাজার-বগার বাজার সড়ক, জনতা বাজার-কেরামতপুর বাজার সড়ক, পরিষ্কার বাজার-পাঙ্খার বাজার সড়ক, সমিতির বাজার-কাঞ্চন বাজার সড়ক, খাসেরহাট-সমিরহাট সড়ক, জাহাজমারা-ভূইয়ারহাট সড়ক, দক্ষিণ ওয়াপদা-আল আমিন বাজার সড়ক। সোনাইমুড়ী উপজেলার ধন্যপুর-চাঁদপুর সড়ক, আমিশাপাড়া কলেজ-স্যামেরখিল সড়ক, নবগ্রাম রুস্তম কোম্পানী মসজিদ-দূর্গা দৌলতপুর আবদুল জলিল পাটোয়ারী ব্রিজ সড়ক, ধন্যপুর আবু ডাক্তার সড়ক। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বামনি কলেজ-বাঞ্চারাম বাজার সড়ক, বসুরহাট বাংলা বাজার-এসপি আবু সুফিয়ান বাড়ি সড়ক, নতুন বাজার-বামনি সড়ক। কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট-চাপরাশিরহাট-শাহজিরহাট সড়ক, রহমত নগর-নলুয়া ভূইয়ারহাট সড়ক, চাপরাশিরহাট- গুল্লাখালি-মৌলভী বাজার সড়ক। হাতিয়া উপজেলার ডিসি সড়ক-ওয়াপদা সড়ক, কাজীর টেক-মহি উদ্দিন বাজার-দিদার বাজার-টিনের মসজিদ সড়ক। সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া-তেমুহনী সড়ক, বসন্তপুর-বিরাহিমপুর বাজার সড়ক, কুতুবের হাট-চন্দেরহাট-সেবারহাট সড়ক, সিলোনিয়া বাজার-তরিক উল্যা বীর বিক্রম- জমিদারহাট সড়ক এবং চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা-রাহিমগঞ্জ সড়ক, বাজার রোড-সোনাচাকা সড়ক, মানিকপুর-ছান্দিয়া পাড়া-সপ্তগাও সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, সদর উপজেলার উদয়সাধুরহাট-করমুল্যা সড়কের ২১কিলোমিটার ও কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট-গুল্লাখালি-মৌলভী বাজার সড়কের প্রায় ১০কিলোমিটার সড়ক।

কবিরহাট উজেলার চাপরাশিরহাট ইউয়িনের নতুন শাহজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মহি উদ্দিন লিটন বলেন, গত ২০২৪ সালের বন্যায় আমাদের শাহজিরহাট থেকে চাপরাশিরহাট যাওয়ার রাস্তাটি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝে এক বছরে তেমন কোনো কাজ হয়নি। এ বছরও পানি উঠে রাস্তাটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট বাজার’সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অনেকগুলো ছোট বড় গাড়ি ছেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি এমন অবস্থা যে এটি চলাচলের একবারে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার ওদারহাট এলাকার বাসিন্দা মুন্নি আক্তার জানান, জেলা শহর মাইজদীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে আমাকে প্রতিদিন ওদারহাট-সফিগঞ্জ বাজার এ সড়কটি দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। কিন্তু চলতি বছরের মে মাস থেকে আমাদের এ সড়কের বিভিন্ন অংশ বানিতে নিমজ্জিত ছিলো। এখনও পানি নামার পর সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্তের। প্রতিদিন সিএনজিতে যাতায়তের ফলে কোমর ব্যথা’সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে মাইজদীতে হাজার হাজার মানুষ যাতায়ত করে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি মেরামতের দাবি করেন তিনি।

এলজিইডি বলছে, জেলার ৯টি উপজেলায় তাদের পাকা সড়ক রয়েছে প্রায় ৫হাজার কিলোমিটার। এছাড়া আরও কিছু কাঁচা সড়ক রয়েছে। জলাবদ্ধতায় পানির নিচে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪শত কিলোমিটার সড়ক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়। পানিতে জলাবদ্ধ থাকা অবস্থায় এসব সড়কগুলো দিয়ে ছোট-বড় সবধরনের যানবাহন চলাচল করতো। যার ফলে পানিতে নিমজ্জিত সড়কগুলোর সার্ফেস, পেভমেন্ট, সোল্ডার, ঢাল, ফাউন্ডেশন, স্ট্রাকচারাল, সাবগ্রেড, সাব-বেজ’সহ বিভিন্ন লেয়ারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্তের। কোথাও কোথাও আবার সড়কের সাইড ভেঙে পড়েছে পাশ্ববর্তী ক্ষেত ও জলাশয়ে।

সড়কগুলো মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মাহফুজুল হোসাইন বলেন, জলাবদ্ধতা স্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। প্রায় ৪শ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতির উপজেলা ভিত্তিক তালিকা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দ্রুতভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি সড়কের কাজ করা হবে।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল