রেজাউল করিম রেজা, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে নদীভাঙন আজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি উঠানামার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক গ্রাম, বসতভিটা, আবাদি জমি, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদীর পাড় ঘেঁষে থাকা শত শত পরিবার রাত-দিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন; অনেকেই ইতোমধ্যে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
গত এক সপ্তাহে সদরের বানিয়াপাড়া, নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস, রোমারীর সোনাপুর, ফুলবাড়ি ও চিলমারীসহ জেলাজুড়ে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে অন্তত ২০টি পরিবার সম্পূর্ণ গৃহহারা হয়েছে এবং ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে শতশত পরিবার। জেলার নদীবেষ্টিত সাতটি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের চৌদ্দঘুড়ী চর এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন চর উন্নয়ন কমিটি। এতে নয়টি নদীঘেরা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, “প্রতিবার শুধু প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে চরাঞ্চল মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।”
চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক বলেন, “এবার আর প্রতিশ্রুতি নয়—আমরা চাই অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা।” জেলা চর উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, “কেবল কথার ফুলঝুরি নয়, এখনই দরকার স্থায়ী বাঁধ। তা না হলে হাজারো পরিবার পথে বসবে।”
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, ভাঙন কবলিত ৯টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সবগুলো পয়েন্টে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলতি বর্ষা মৌসুমেই কুড়িগ্রামে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। চরবাসীর প্রশ্ন—“কতকাল আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি শুনে আমাদের সর্বস্ব নদীতে ভাসতে দেখব? স্থায়ী সমাধান কি আদৌ মিলবে?”
এমআই