বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দিয়ে ট্রাম্পকে কাছে টানছে পাকিস্তান

বুধবার, অক্টোবর ১, ২০২৫
যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দিয়ে ট্রাম্পকে কাছে টানছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বিগত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে পাকিস্তানের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক ক্ষয় হতে থাকে। বিশেষ করে ট্রাম্পসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল অভিযোগ তোলে, ইসলামাবাদ দ্বিমুখী আচরণ করছে এবং তারা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে খুঁজে পাওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরও গভীর হয়।

কিন্তু গত ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের উপস্থিতিতে ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ছিল পাকিস্তানের খনিজ ও রেয়ার আর্থ (বিরল মৃত্তিকা) উপাদান যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এর আগে জুলাইয়ে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, পাকিস্তানের বৃহৎ তেলসম্পদ উন্নয়নে তিনি ইসলামাবাদের সঙ্গে কাজ করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় এক মার্কিন কোম্পানি পাকিস্তানের খনিজ খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের এই কৌশল কার্যকর হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক এত দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠবে, বিশ্লেষকরা তা কল্পনাও করেননি। গত মার্চে কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ট্রাম্প পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে গত জুনে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্ত সংঘাত মেটাতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সমর্থন জানায় পাকিস্তান।

বাণিজ্যিক সম্পর্কেও নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানি পণ্যে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কহার সর্বনিম্ন- ১৯ শতাংশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধানকে আতিথ্য দেন প্রেসিডেন্ট নিজে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি পরিবর্তনের অন্যতম কারণ পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।

গত এপ্রিলে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শরিফ দাবি করেছিলেন, পাকিস্তান যদি তার খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারে, তাহলে দেশের অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে।

এর পাঁচ মাস পর পাকিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রিত প্রকৌশল ও নির্মাণ সংস্থা ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এফডব্লিউও) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিসৌরির কোম্পানি ইউনাইটেড স্টেটস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস (ইউএসএসএম)-এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শরিফের কার্যালয় জানায়, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে অ্যান্টিমনি, তামা, সোনা, টাংস্টেন এবং রেয়ার আর্থ উপাদানসহ সহজে পাওয়া যায় এমন খনিজের রপ্তানি অবিলম্বে শুরু হবে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্রুত বেড়ে চলা প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার কারণে রেয়ার আর্থ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। এসব উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক যান, সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা শিল্পে।

তবে সম্প্রতি হওয়া খনিজ উন্নয়ন সংক্রান্ত এমওইউ স্বাক্ষর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কোনো মন্ত্রী বা কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে করাচিভিত্তিক একজন বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএসএসএম আসলেই পাকিস্তানের খনিজ স্বপ্ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখে কিনা। কারণ, ইউএসএসএম-এর মূল দক্ষতা খনিজ অনুসন্ধান বা খনন নয়; বরং এর কার্যক্রম সীমিত ব্যাটারি থেকে ধাতু পুনর্ব্যবহার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে অবস্থিত কোবাল্ট খনি থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর অবশিষ্ট উপাদান (টেইলিংস) পুনর্সংশোধনের মধ্যে। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এ চুক্তি পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের সক্ষমতাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। কারণ পাকিস্তান একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক ইউনুস মনে করেন, খনিজ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাকিস্তানের এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

পাকিস্তানেরে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা জেনারেলের মতে, দেশকে সফল হতে হলে সামরিক নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে এসে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে। স্থানীয় জনগণকে তাদের জমির অভিভাবক হিসেবে ক্ষমতায়িত করতে হবে, রয়্যালটির স্বচ্ছ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে এবং এমন অবকাঠামো তৈরি করতে হবে যা শুধু সম্পদ আহরণ নয়, মানুষের মর্যাদাকেও সমুন্নত রাখে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল