আহসান শামীম, চবি প্রতিনিধি:
৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নানান প্রতিশ্রুতি লক্ষ করা গেছে।
আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) শুরু হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রচারণাও। নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ৯০৭ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪১৫ জন, হল ও একটি হোস্টেল সংসদে ৪৯২ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন নারী প্রার্থী ও ৩৬৬ জন পুরুষ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে ভোটার ২৭ হাজার ৫১৭জন। এরমধ্যে ছাত্র ভোটার ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং ছাত্রী ভোটার ১১ হাজারন ৪৩৪ জন।
নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৬০টি কক্ষের প্রতিটিতে গড়ে ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিটি অনুষদ ভবনের ডিনকে রিটার্নিং অফিসার এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থী ছাড়া বহিরাগত কেউ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবেন না।
ছাত্রদল ভিপি প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি:
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ছাত্রদল নির্বাচিত হলে তারা সন্ত্রাস ও ভয়ভীতিমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলছে। সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘নির্বাচনের আট দফা ইশতেহারেহন বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ, সেশনজট নিরসন, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণ এবং আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতা বৃদ্ধি, হলে আসন সংরক্ষণ, ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গঠন করব। এছাড়া খাদ্য ও আবাসন খাতে ক্যান্টিনে ভর্তুকি বৃদ্ধি, খাবারের মান যাচাই কমিটি গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ক্যাম্পাসে রূপান্তর করার কথা বলেছে এ নেতা। তাদের লক্ষ্য, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট, একটি পড়ার টেবিল’ নিশ্চিত করা।
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ফোকাস রাখার কথা বলেছেন এই নেতা। ছাত্রদল তাদের ইশতেহারে নারীদের পোশাক ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স; প্রতি হলে স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন; নারী চিকিৎসক এবং নিরাপদ কমনরুম সুবিধা; ইনডোর স্পোর্টস সুবিধা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এছাড়া, শাটল ট্রেনে বগি সংকট, পাওয়ার কার বিকল—এগুলোও সমাধান করতে হবে।’ শহর ও উপজেলা পর্যায়ে বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, "আমরা শিক্ষার্থীদের আমানত রক্ষা করব,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করব"।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ৯টি ফোকাস পয়েন্ট দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি তারা আরও ৩৩টি দফা দিয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত চাকসু নির্বাচন নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ বাস সার্ভিস চালু, সেশনজট নিরসন, কটেজ-মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সুবিধা বৃদ্ধি, ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের কথা বলা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নারীবান্ধব কমনরুম নিশ্চিত করার বিষয়গুলো ইশতেহারে যুক্ত করেছে।
এমআই