হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শুরু হতে যাচ্ছে তরুণ কূটনীতিকদের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ‘হাবিপ্রবি আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন ২০২৫’। আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন, যা তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব ও কূটনীতি চর্চায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল ফাহিম আল মাহমুদ বলেন, “এই সম্মেলন কেবল একটি মডেল ইউনাইটেড নেশন্স নয়; এটি তরুণদের জন্য এক নেতৃত্বের পাঠশালা। আমরা চাই তরুণরা নিজেদের মধ্যে গবেষণা, কূটনীতি, সমঝোতা এবং নেতৃত্বের চর্চা করুক।”
তাঁর সঙ্গে সমন্বয় করছেন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সালমা নবিলা, ডিরেক্টর জেনারেল নূহাস আলি আরনব, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইসরাত ফারজানা আরশি, চিফ অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নুসরাত জাহান এবং চিফ অব স্টাফ ইকরামুল হাসান তুর্জো।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ১৮৫৫ সালের ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, সিধু মুরমু ও কানু মুরমুর নেতৃত্বে সাঁওতালদের স্বাধীনতার ডাক ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানবতার সংগ্রাম।
ফাহিম আল মাহমুদ বলেন, “সাঁওতাল বিদ্রোহ কেবল ইতিহাস নয়, এটি শোষিত মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতীক। আমরা চাই এই বিদ্রোহের চেতনা তরুণদের মধ্যে জাগুক — যাতে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সাহস পায়।”
১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভগনাডিহিতে ঘোষিত সেই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বৃহৎ আদিবাসী গণআন্দোলন। হাবিপ্রবি মডেল ইউনাইটেড নেশন্স এবার সেই চেতনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা, ন্যায় ও মানবাধিকারের আলোচনাকে মূল থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, এবার দেশের ৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ৩০০-এরও বেশি প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, এবং আরও অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ৭০ জন সেক্রেটারিয়েট সদস্য প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তাঁরা রেজিস্ট্রেশন, লজিস্টিক, কমিটি কাঠামো, কর্মশালা ও সাইড ইভেন্ট—সবকিছুই সুচারুভাবে পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্ণ সহায়তা ছাড়া এই আয়োজন সম্ভব হতো না। তাঁরা সম্মেলনস্থল, প্রযুক্তিগত সহায়তা, নিরাপত্তা এবং অতিথি অভ্যর্থনার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সালমা নবিলা বলেন, “আমাদের শিক্ষক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এখন সবকিছু প্রায় প্রস্তুত। আমরা চাই এই আয়োজন তরুণদের জন্য এক প্রেরণার জায়গা হয়ে উঠুক।”এই সম্মেলনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা বাস্তব জাতিসংঘ কনফারেন্সের মতো বিতর্ক, কূটনীতি ও নীতি প্রণয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বৈশ্বিক সংকট নিয়ে আলোচনা করবেন, প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন।
চিফ অব স্টাফ ইকরামুল হাসান তুর্জো বলেন, “আমরা চাই তরুণরা যুক্তি ও কূটনীতির ভাষায় কথা বলুক—এটাই আসল নেতৃত্বের অনুশীলন।”
আয়োজক কমিটি আশা করছে, দেশের গণমাধ্যমগুলো এই আন্তর্জাতিকমানের আয়োজনকে সামনে এনে তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরবে। তাঁদের মতে, এমন আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ বাড়াবে, যা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরিতে সহায়ক হবে।
ডিরেক্টর জেনারেল নূহাস আলি আরনব বলেন, “আমরা চাই সংবাদমাধ্যম এই উদ্যোগের অংশ হোক। তরুণরা যা করছে, তা গোটা দেশের জন্য অনুপ্রেরণা।”
তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলন তরুণ প্রজন্মের মাঝে নেতৃত্ব, কূটনীতি ও নৈতিকতার বিকাশে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে যাচ্ছে। আয়োজক কমিটির প্রত্যাশা—হাবিপ্রবির এই উদ্যোগ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন হিসেবে নতুন উদাহরণ তৈরি করবে।
যেভাবে সাঁওতাল বিদ্রোহের মন্ত্র ছিল স্বাধীনতার চেতনা, তেমনি এই সম্মেলনের বার্তা— “ন্যায়, সাহস ও ঐক্য—এই তিনেই নিহিত ভবিষ্যতের নেতৃত্ব।”
একে