বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

তপশিলের আগে আবারও হতে পারে আরপিও সংশোধন

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৬, ২০২৫
তপশিলের আগে আবারও হতে পারে আরপিও সংশোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে গেজেট জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশে নির্বাচনে জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বাধ্যতামূলক করাসহ একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই বিধানের কট্টর বিরোধিতা করছে বিএনপি ও তাদের সমমনা কয়েকটি দল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ কিছু দল এই সংশোধনীকে স্বাগত জানিয়ে তা বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান দলগুলোর এমন বিভক্তির প্রেক্ষাপটে সংশোধিত আরপিও নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে আবারও সংশোধন হতে পারে। বিশেষ করে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধানটি বাতিল করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

জোটবদ্ধ হয়েও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে গেলে ছোট দলগুলোর প্রতীক পরিচিতি না থাকার কারণে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে— এমন আশঙ্কায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে। আরপিওতে এই সংশোধনীর বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনেও আপত্তি জানিয়েছে তারা। সংশোধিত আরপিওর গেজেট প্রকাশ হলেও দলগুলোর চাওয়া অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের তপশিলের আগেই আরপিও ফের সংশোধন হবে বলে আশাবাদী তারা।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার ভোটের তপশিল বা সময়সূচি ঘোষণা করা হলে সেই নির্বাচনটি তপশিল ঘোষণার সময় বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা অনুসারেই অনুষ্ঠিত হয়। সেজন্য ভোটের তপশিলের আগেই আরপিও সংশোধন হয়ে থাকে এবং সেই আরপিও অনুযায়ী তপশিল ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সাধারণ নিয়ম এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতার দৃষ্টিকোণ থেকে ভোটের তপশিল ঘোষণার পর আরপিও সংশোধন করার সুযোগ সাধারণত থাকে না। তবে সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটের তপশিলের পরও আরপিও সংশোধন হতে বাধা নেই, তবে সেটি হবে ব্যতিক্রম ঘটনা। যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার জন্য তাৎক্ষণিক আইনি পরিবর্তন আবশ্যক, সেক্ষেত্রে সরকার বা নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ক্ষমতাবলে জরুরি ভিত্তিতে বিধি বা উপবিধি পরিবর্তন করতে পারে। ফলে আরপিও নিয়ে সদ্য প্রকাশিত গেজেটই শেষ কথা নয়। তপশিলের আগে বা পরে যে কোনো সময় আরপিও আবার সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন হয়। এর পরই বিএনপির পক্ষ থেকে একই প্রতীকে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আপত্তি ওঠে। অন্তত দুই দফা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একপর্যায়ে বিএনপির আপত্তি আমলে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত বদলের খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। তবে তীব্র বিরোধিতায় নামে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। কোনো দলের চাপের কাছে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় দলগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার রাতে একই প্রতীকে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের সুযোগ না রেখে সংশোধিত আরপিওর গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো আদালত কর্তৃক ‘পলাতক’ ঘোষিত ব্যক্তি সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন। কোনো আসনে একজন মাত্র বৈধ প্রার্থী থাকলে তার বিরুদ্ধে ‘না ভোট’ অপশন থাকবে। ফলে কোনোভাবেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারবেন না প্রার্থীরা। আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড) যুক্ত হয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর থেকে ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য/কনটেন্ট প্রচার দুর্নীতিমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হবে। একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে থেকে এবং নির্বাচিত হয়ে পুরো পাঁচ বছরের মধ্যে ঋণখেলাপি হলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে। বন্ধ করা হয়েছে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগও। এ ছাড়া প্রার্থীর জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইসি শিগগির দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।

সংশোধিত আরপিওর এসব বিধানের মধ্যে বিশেষ করে ‘নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক’ করার বিধানটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেছে। বিএনপি এই বিধানের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এটি তাদের জোটগত নির্বাচন করার কৌশলকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং দলগুলোর মধ্যকার ঐক্য নষ্ট করবে। তারা এই সংশোধনী বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপিসহ সমমনা কয়েকটি দল এই সংশোধনীকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করছে, এই বিধান প্রত্যেক দলের স্বতন্ত্র পরিচয় ও প্রতীককে রক্ষা করবে।

জানা গেছে, সংশোধিত আরপিও নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ বিএনপি ও তার সমমনা ছোটো দলগুলো। তারা একই প্রতীকে নির্বাচনের জন্য ইসির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। দলগুলো মনে করছে, একই প্রতীকে নির্বাচন ছোট দলের বড় বড় নেতার জন্য বাড়তি সুবিধা যোগ করতে পারে। এতে জাতীয় সংসদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর শক্তি বাড়তে পারে, যা কোনো একটি পক্ষ মেনে নিতে পারছে না। সেজন্য ওই পক্ষটি পরিকল্পিতভাবে আরপিওতে বিতর্কিত এই ধারা যোগ করতে উৎসাহিত করেছে। এ কারণে তপশিলের আগ পর্যন্ত আরপিওর এই সংশোধন বিশেষ করে একই প্রতীকে ভোট করতে না দেওয়ার বিধান বাতিল করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

এরই মধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশের পর দিন মঙ্গলবার বিএনপির জোট শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ পরিবর্তনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কমিশন সেটা না করে নিজেদের ইচ্ছে মতো আরপিও সংশোধন করে গেজেট জারি করে দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, দলগুলো নির্বাচনী জোট করে জেতার জন্য। একটা জোটে একাধিক দল থাকে। জোট করার পর আলাদা আলাদা প্রতীকে নির্বাচন করলে প্রচার করা কঠিন। সেজন্য এই অধ্যাদেশ সংশোধন করে আগেরটাই বহাল করতে হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং গণভোট নিয়ে এমনিতেই বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। এ অবস্থায় আরপিও সংশোধনের গেজেট রাজনীতির ময়দানে চলমান উত্তাপ আরও ছড়িয়ে দিবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম কালবেলাকে বলেন, সংশোধিত আরপিওর গেজেট হয়ে গেলেও তা পরিবর্তনে কোনো বাধা নেই। রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে যে কোনো সময় এ অধ্যাদেশ আবার পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে ভোটের তপশিলের খুব একটা সময় বাকি নেই। সেজন্য সময়টা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যাবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এর আগে নির্বাচনের আইন-কানুনে এই ধরনের চূড়ান্ত বিভাজন নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। ফলে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর তীব্র আপত্তি এবং ভোটের তপশিল ঘোষণার এখনো কিছুটা সময় বাকি থাকায় আরপিও সংশোধনের গেজেট জারি হলেও ভোটের তপশিলের আগে আরও একবার সংশোধনী আসতে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় কালবেলাকে বলেন, ‘আরপিওর গেজেট পরিবর্তনের কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। তবে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।’

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল