আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে দেখা করবেন। ৩৪ বছর বয়সী এই 'গণতান্ত্রপন্থি সমাজতান্ত্রিক নেতাকে কয়েক মাস ধরে সমালোচনায় বিদ্ধ করা ও হুমকি দেওয়ার পর তার সঙ্গে এই বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এজেন্ডা প্রতিরোধ করবেন বলে উল্লেখ করেছেন মামদানি।
বুধবার সন্ধ্যায় এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা একমত হয়েছি যে এই বৈঠকটি শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ওভাল অফিসে হবে।'
মামদানির প্রচার দল বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মামদানির মুখপাত্র ডোরা পেকেক এক বিবৃতিতে বলেন, ওই বৈঠকে জননিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার ব্যয়-সাশ্রয় সংক্রান্ত এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করবেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকেই মামদানির সঙ্গে দেখা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প। রোববার রাতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা একটা ব্যবস্থা করে নেব।'
আগামী ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন মামদানি।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ট্রাম্প মামদানির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট হলেও কুমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছিলেন।
মামদানির বিভিন্ন নীতির কারণে ট্রাম্প তার ওপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে গেছেন। মামদানির এসব নীতির মধ্যে রয়েছে সিটি বাসে বিনামূল্যে যাতায়াত, ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটের ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করা, সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন গ্রোসারি স্টোর চালু করা এবং বিনামূল্যে ফ্রি আআরলি চাইল্ডকেয়ার নিশ্চিত করা।
মেয়র নির্বাচনের আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি জিতলে তিনি নিউইয়র্কের তহবিল কমিয়ে দেবেন এবং শহরটি 'দখল' করে নেবেন।
নিউইয়র্ক সিটিতে ফেডারেল তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ সালের পরিচালন বাজেটের জন্য শহরটি ৭.৪ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিলের ওপর নির্ভরশীল।
মামদানি যদি নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর (আইস) অভিযানে বাধা দেন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করার হুমকিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিভিন্ন সময়ে তিনি মামদানিকে 'ভয়ংকর', 'দুঃসংবাদ' ও 'বদ্ধ উন্মাদ' বলে ডেকেছেন।
কিছু ট্রাম্প সমর্থক ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা মামদানিকে একের পর এক ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণ ও তার নাগরিকত্ব নিয়ে ভিত্তিহীন প্রশ্ন তুলেছেন। টেনেসির রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু ওগলস। চলতি বছরের শুরুর দিকে মামদানিকে 'ছোট মুহাম্মদ' বলে সম্বোধন করেন তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বিচার বিভাগকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার অনুরোধ করেন।
মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। তার বাবা-মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। মামদানির বয়স যখন ৭ বছর, তখন তার পরিবার নিউইয়র্ক সিটিতে চলে আসে। ২০১৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
ট্রাম্পের অপমান ও হুমকির মুখে মামদানি পিছু হটেননি। বিজয়-ভাষণে মামদানি বলেছিলেন, ট্রাম্পকে কীভাবে পরাজিত করা যায়, নিউইয়র্ক তার একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার চারটি শব্দ আছে: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)।'
তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের এজেন্ডা, বিশেষত ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোকে লক্ষ্য করে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের সোচ্চার সমালোচক। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মামদানি বলেছিলেন, তিনি 'দ্বৈত সংকট' মোকাবিলা করবেন—যার একটি 'স্বৈরাচারী প্রশাসন', অপরটি 'জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট'।
এমআই