আহসান হাবিব, চবি প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শামসুন্নাহার হলে প্রথমবারের মতো সীরাত সন্ধার আয়োজন করেছে চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে মেয়েদের হলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। হলের শিক্ষার্থীরা জানান, এ ধরনের ধর্মীয় ও আদর্শিক আয়োজন আগে কখনো কোনো মেয়েদের হলে হয়নি; তাই অনুষ্ঠানটি ক্যাম্পাসে ব্যতিক্রমী একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ ও নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. শহিদুল্লাহ হক। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “নবী করিম (সা.) এর চরিত্রই আমাদের নৈতিকতা ও মানবিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড। পড়াশোনা একটি ইবাদত যদি আমরা ইবাদতের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারি।” তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও রাসুলের আদর্শ অনুসরণের কারণে তিনি একবার বিমানে করে বিশেষভাবে এসে ক্লাস নিয়েছিলেন, যা তাঁর কাছে নৈতিক দায়িত্ব পূরণের অংশ।
এ ছাড়া চাকসুর ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দীপা, সহ–ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা এবং নির্বাহী সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস সানজিদাও বক্তব্য রাখেন। বক্তারা সীরাতের আদর্শ মানুষের ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা, আচরণ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শামশুন্নাহার হলের প্রভোস্টসহ দায়িত্বরত শিক্ষকরা এবং বিভিন্ন হল সংসদের প্রতিনিধিরা। আয়োজক ও উপস্থিতদের ভাষ্য হলের টিভি রুমে এত বেশি ভিড় হয় যে শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানোর জায়গাও মিলছিলো না। অনেকেই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
শামসুন্নাহার হল সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাইরোজ ফেরদৌস বলেন, “মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম এমন ভিন্নধর্মী ধর্মীয়–সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পেরেছি। সংসদের সদস্যরা দিনরাত কাজ করেছে। চাকসুর সহযোগিতা আমরা পেয়েছি, তবে হল প্রশাসনের প্রত্যাশিত সহায়তা পাইনি।” তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে মেয়েদের হলে এ ধরনের আয়োজনের চাহিদা অনেক বেশি।
সীরাত সন্ধায় আলোচনা সভার পাশাপাশি ছিল রচনা প্রতিযোগিতা, আবৃতি, নাতে-এ-রাসুল পরিবেশনা এবং মনোমুগ্ধকর কাওয়ালি। শিক্ষার্থীরা জানান, কাওয়ালি এবং এ ধরনের সমন্বিত ধর্মীয় সাংস্কৃতিক আয়োজন আগে কখনো কোনো মেয়েদের হলে হয়নি; তাই এটি ছিল তাদের জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, সীরাতের আলোচনায় নিজেদের জীবনদর্শন নতুনভাবে ভাবার সুযোগ মিলেছে। তাঁদের দাবি শিক্ষার্থীদের নৈতিক উন্নয়ন, সৃজনশীলতা ও মননশীলতা বৃদ্ধিতে মেয়েদের হলগুলোতে এমন অনুষ্ঠান নিয়মিত করা উচিত।
এমআই