ইবতেশাম রহমান সায়নাভ, বেরোবি প্রতিনিধি :
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচন আগামী ২৪ ডিসেম্বর এবং শীতকালীন অবকাশ ২৫ ডিসেম্বর শুরু হবে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা শেষে উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ও বেরোবির সিন্ডিকেট সদস্য ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, “তোমাদের উপাচার্য স্যার নিরলসভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের সিন্ডিকেট সভায় আমরা শিক্ষার্থীদের সার্বিক মঙ্গল ও সুবিধার্থে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একাডেমিক উন্নয়নে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। হল, টিএসসি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ যে মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে, তা আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করি।”
উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “শীতকালীন ছুটি ডিসেম্বরেই রাখার জন্য শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তক্রমে ছুটি ডিসেম্বরেই বজায় রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে নির্বাচনও চায়, আবার শীতকালীন ছুটিও চায়। এদিকে প্রথম সমাবর্তনের তারিখও নির্ধারিত রয়েছে—যা শীতকাল ছাড়া আয়োজন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে সমাবর্তন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে।”
নারী শিক্ষার্থী হল নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মেয়েদের নতুন হলের কাজ শুরু করতে নানা জটিলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছিলো। এটা প্রশাসনিক জটিলতা। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আশা করি খুব শীগ্রই মেয়েদের হল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।”
শীতকালীন অবকাশ প্রসঙ্গে উপাচার্য জানান, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল ২১ ডিসেম্বর। তবে তা পিছিয়ে ২৫ ডিসেম্বর করা হয়েছে। ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। ৯ ও ১০ ডিসেম্বরের পূর্বঘোষিত ছুটিসহ মোট ১৭ দিনের ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ব্রাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট কখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে না। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, পুরো নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তাদের। ব্রাকসু আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন। এটি ভেস্তে যেতে দেওয়া যাবে না।”
সব পক্ষকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তোমরা সবাই বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হও। আমরা সেই সিদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহণ করব।”
তবে নির্বাচন এবং শীতকালীন ছুটির তারিখ ঘোষণার পর সিন্ডিকেট রুমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায় এবং আরেকদল ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেয়।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, “চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদে পরাজিত যে গোষ্ঠী তারাই আজকে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার তাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তাই তারা নির্বাচন পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছেন।"
আরেক শিক্ষার্থী রিফাত রাফি বলেন “যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী যথাসময়ে শীতকালীন ছুটি পুনর্বহালের দাবিতে গণস্বাক্ষর দিয়েছে, সেখানে আজকের সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে ২৫ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। ডিসেম্বরের ১১ তারিখের পর মাত্র তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে শুধুমাত্র নির্বাচনের কারণে—এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে কেউই ১৫ দিন অকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করবে না। এতে বহু বিভাগের সম্ভাব্য সেশনজটসহ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
উল্লেখ্য, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শীতকালীন ছুটি পূর্ন বহাল এবং এবছরেই ব্রাকসু নির্বাচনের দাবিতে সিন্ডিকেট চলাকালীন সময়ে সিন্ডিকেট রুমের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এমআই