সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাবিতে মধ্যরাতে উচ্চস্বরে গান, বন্ধ করতে বলায় প্রক্টরকে গালিগালাজ বামপন্থী নেতার

সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাবিতে মধ্যরাতে উচ্চস্বরে গান, বন্ধ করতে বলায় প্রক্টরকে গালিগালাজ বামপন্থী নেতার

রামিন কাউছার,জাবি প্রতিনিধি:
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেফতার ও দেশজুড়ে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘বাউলের দ্রোহ’ শীর্ষক গানের আসর আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। 

রবিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল পাঁচটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ অনুষ্ঠান চলে।

এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান বাজানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানমি শাহারিন বলেন, “কেমন প্রশাসন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে তা স্পষ্ট। সন্ধ্যা থেকেই প্রচণ্ড শব্দ পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এমন হয় জানি না। দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারিনি। এত শব্দে কি কেউ থাকতে পারে? প্রশাসনের কি কিছুই আসে যায় না? শিক্ষার্থীদের কষ্ট কি তাদের কাছে কিছুই না? আর যারা এভাবে গান বাজাচ্ছেন, তাদের কি কোনো সভ্যতা নেই?”

আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, “রাত ২টা পর্যন্ত এমন শব্দ সহ্য করা সম্ভব নয়। সাংস্কৃতিক চর্চা ভালো, কিন্তু তা যদি অন্যের বিশ্রাম নষ্ট করে তাহলে সেটি সংস্কৃতি নয়, বরং বিপর্যয়।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পর রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আয়োজকদের উচ্চস্বরের গান বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “এটা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এভাবে গান বাজানো ঠিক নয়।”

প্রক্টরের এ অনুরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু আয়োজক তাঁর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, প্রক্টরের সামনে দর্শন বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচ তাঁকে গালিগালাজ করেন। এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশেদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাদের পরীক্ষা চলছে।অনেকেই মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। সে অনুযায়ী আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে অনুরোধ করলে তারা ১০–১৫ মিনিট সময় চায় এবং পরবর্তীতে আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।”

অন্যদিকে, রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে শব্দ কম না হওয়ায় আরেকদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজানোর ঘোষণা দেয়। পরে সোয়া একটার দিকে তারা হ্যান্ডমাইক ও সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকে।

তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের ভিপি সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, “রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছে—শব্দের কারণে তারা পড়তে পারছে না। কিন্তু আয়োজকরা বিষয়টি মানেননি, প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে গান বাজিয়েছি।”

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, “পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেকদল শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হয় এবং তুলনামূলক উচ্চস্বরে কিছু কার্যক্রমে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণও কাম্য নয়।”

এর আগে ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১০টার পর যে কোনো অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়। নির্দেশনা অমান্য করলে প্রচলিত বিধি ও রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাত ১০টার পর অনুষ্ঠান চলতে থাকায় শিক্ষার্থীদের ঘুম ও পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আয়োজকরা ‘বাউল দ্রোহ’ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে সাউন্ড ব্যবহার করেন, এতে আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

ফেসবুক গ্রুপ ‘জাবির সকল সংবাদ’ এ বিভিন্ন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক শিক্ষার্থী লেখেন, “পরীক্ষার পড়া নিয়ে বসেছি, কিন্তু সাউন্ডের কারণে মনোযোগ দিতে পারছি না। নিয়ম করে কী লাভ, যদি প্রয়োগ না হয়?”

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল গালিব লেখেন, “যতদূর জানি, আজকের বাউল সন্ধ্যা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও উচ্চ শব্দে পুরো সময় অনুষ্ঠান চালানো হচ্ছে। হলের ভেতর থেকেও থাকা যাচ্ছে না। অথচ পাশের লেকেই অতিথি পাখির আবাস।”

তিনি আরও বলেন, “প্রাণ–প্রকৃতি নিয়ে নিয়মিত চিল্লানো হিপোক্রেটরাই নিজেদের প্রোগ্রামের বেলায় পরিবেশের কথা ভুলে গেছে। প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। নিয়মের তোয়াক্কা না করে এমন প্রোগ্রামে জাকসু নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন ও সাংবাদিকরা নীরব কেন? ফাইনাল পরীক্ষার সময় নিয়মবহির্ভূত এমন প্রোগ্রাম চললে জাকসুর দরকারটা কী?”

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল