ইবতেশাম রহমান সায়নাভ, বেরোবি প্রতিনিধি :
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনের তফসিল স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
গত সোমবার (১ডিসেম্বর) বিকেলে দ্বিতীয় দিনের মনোনয়ন বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে কমিশন নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে।
নির্বাচন কমিশনার ড. মোহসীনা আহসান বলেন, আমাদের আবেদনের পর রেজিস্ট্রার অফিস যে ভোটার তালিকা সরবরাহ করে, তাতে একাধিক গুরুতর ভুল, অসঙ্গতি ও অসম্পূর্ণতা পাওয়া গেছে। এমন ভুল তালিকার ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ অব্যাহত রাখা নির্বাচনের ন্যায়সংগততা ও স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এতে প্রার্থীরা বৈধতা–সংক্রান্ত জটিলতায় পড়বেন।
তিনি আরও বলেন, “কমিশন সন্দেহ প্রকাশ করছে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রদান করে কমিশনকে বিব্রত করার কোনো হীন উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারো ছিল কি না, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তা খতিয়ে দেখতে হবে।"
এমন অবস্থায় কমিশন ঘোষণা করে, হল ভিত্তিক ভোটার তালিকার সব অসঙ্গতি দূর না হওয়া পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণসহ তফসিলের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
স্থগিতাদেশের পর সাবেক ছাত্র সমন্বয়ক ও বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদের নেতারা প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলায় নির্বাচন অফিসের বাইরে তালা লাগানোর ঘোষণা দেন। তারা তালা লাগানোর চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় উভয় পক্ষ তুমুল হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন।
ছাত্র সমন্বয়ক খোকন ও আশিকের সঙ্গে সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের সহসভাপতি তুহিন রানাসহ অন্য নেতাদের তীব্র বিতর্ক হয়। দুই পক্ষই পরস্পরের দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ছাত্রদল সভাপতি ইয়ামিন এবং সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হান নিজের দলের নেতাকর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয় এবং উপাচার্যকে প্রায় পাঁচ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করে উপাচার্য। এবিষয়ে এজিএস পদপ্রার্থী হাজিমুল হক বলেন, আমরা গত দুইদিন উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করেছি। কিন্তু হঠাৎ বিকেল ৫ঘটিকায় নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয় ভোটার তালিকার ত্রুটির কারণে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এর দায়ভার তারা দিলো রেজিস্ট্রার দপ্তরকে। কিন্তু রাতে ভিসি স্যার আমাদের কথা দিলেন নির্ধারিত সময়েই ব্রাকসু নির্বাচন হবে। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন আমরা বাস্তবে দেখতে পারছি না। এ বিষয়ে ভিপি পদপ্রার্থী আশিক জানান, প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করতে নির্বাচন বানচালের একটি পায়তারা হাতে নিয়েছে। যে প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য নেই, তারা কিভাবে এই ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে তা আমার বোধগম্য নয়। নির্বাচন বিষয়ে যদি প্রশাসন কোনো স্পষ্ট বার্তা ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা ৬ডিসেম্বরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা বেরোবি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে দিব না।
এবিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মো. শাহজামান বলেন, ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি রয়েছে। এসব ত্রুটি নিয়ে আমরা বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন করতে চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে। তাই ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা রেজিস্ট্রার অফিস কর্তৃক নির্বাচন কমিশনকে প্রদান না করা পর্যন্ত তফসিল অনুযায়ী সকল নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই যাতে দ্রুততম সময়ে আমাদের পূর্নাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রদান করে। যাতে আমরা কাল বিলম্ব না করে যথাসময়ে ব্রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলী বলেন, “এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এখানে কিছু ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে দ্রুততম সময়ে সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনারকে প্রদান করতে।পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন অসংগতিগুলো আলোচনা করে সমাধান করতে পারত। নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি, কার্যক্রম চালিয়ে যেতে।"
এমআই