রামিন কাউছার, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) বাংলা বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সামসুল আলমের বড় ভাই মো. মহিনূর সাত দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) থেকে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সামসুল আলম।
২৯ নভেম্বর নিজের ফেসবুক পোস্টে সামসুল আলম লিখেন,
“আমার বড় ভাই মো. মহিনূর, পিতা মৃত মো. আব্দুল মালেক। স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম—ভৈষাড়পাড় বালুরচর, ওয়ার্ড-৯, ইউনিয়ন—সুরমা, পোস্ট—মঙ্গলকাটা, সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ।
বর্তমান ঠিকানা: গত ৬–৭ মাস ধরে গাজীপুর মহানগরের কলমেশ্বর মোল্লাবাড়ী এলাকায় থাকেন।
গতকাল বিকেল ৫টায় তিনি জীবিকার উদ্দেশ্যে নিজের অটোগাড়ি (মিশুক) নিয়ে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন বাড়িতেই রেখে গিয়েছিলেন। পারিবারিক কোনো কলহও ছিল না।”
তিনি আরও লেখেন,
“আমি তো পারতেছি না… আমার ভাইয়ের খোঁজ কেউ দেয় না!
পুলিশ স্টেশন থেকে পুলিশ স্টেশন, ডিবি, পিবিআই…
সরকারি মেডিক্যাল, অজ্ঞাতদের ওয়ার্ড, হাসপাতালের মর্গ, ময়লার স্তুপ, ডাস্টবিন—এতো বড় গাজীপুরে আমি কোথায় গেলে আমার ভাইকে পাবো?”
২ ডিসেম্বর আরেক পোস্টে সামসুল লিখেন,
“আজ পাঁচ দিন হয়ে গেলো! আমার ভাইকে আমি কবে পাবো?
এই রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ—এখানে ব্যক্তির কোনো নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নিতে চায় না। আমি এই রাষ্ট্রকে চরমভাবে ঘৃণা করি।
আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই! মা, ভাবি, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজিদের কারও কাছে কোনো খবর দিতে পারছি না। অথচ সবাই বিশ্বাস করেছিল—আমি পারবো, আমি আমার ভাইকে খুঁজে বের করবো।”
তিনি আরও লিখেন,
“মা আমাকে বলেছে, ‘তোকে না পড়াইলাম! আমার পুতেরে বের করতে পারলি না? মানুষ না ফেসবুক দিয়া, মানুষ খুইজে বাইর কইরা লয়—তুই পারতাছস না কেন!’
মায়ের এই কথার কোনো উত্তর দিতে পারি না। তার কান্নায় যেন আসমান-জমিন কেঁপে ওঠে।
আমি আর কোনোদিন মায়ের সামনে যেতে পারবো না।
আমার ভাইকে ছাড়া আমি আর কখনো বাড়িতে ফিরবো না।
নিজেকেই এখন চরম ঘৃণা লাগে… আমি নিজেকে ঘৃণা করি।”
আজ এক ভিডিও বার্তায় সামসুল আলম বলেন,
“রাষ্ট্র কি আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ নয়?
গত ২৮-১১-২৫ তারিখ বিকেল ৫টা থেকে আমার ভাই নিখোঁজ। আজ সাত দিন হয়ে গেলো। সে গাজীপুর জেলার গাছা থানাধীন ভুসির মিল এলাকায় অটোরিকশা চালাতো।
অটোরিকশাসহ সাত দিন ধরে একটি মানুষ নিখোঁজ, অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পূর্ণ নির্বিকার।
মানুষটা বাঁচে আছে কি না সেটাও জানি না। আমি এই রাষ্ট্রকে ঘৃণা করি!
মায়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছি না, তার ফোন ধরতেও পারছি না।
আমাকে আপনাদের সহযোগিতা করুন—আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই।”
একে