রামিন কাউছার,জাবি প্রতিনিধি:
প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ১৫তম প্রজাপতি মেলা। মেলা উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দর্শনার্থীরা ভিড় করেন।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।
দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল—শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রকৃতি ও প্রজাপতি বিষয়ক কুইজ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, পাপেট শো ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে চলে মেলার মূল আয়োজন। সেখানে সাদা জালের ভেতরে রাখা ছিল বাহারি রঙের ফুলের টব, আর জালের ভেতর উড়ছিল বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি।
দিনব্যাপী মেলা উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছিলেন দর্শনার্থীরা। দুই সন্তানকে নিয়ে উত্তরা থেকে ঘুরতে আসা নাহিদা আক্তার বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে মেলার কথা জানার পর সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছি। ঢাকা শহরে চিত্তবিনোদনের জায়গা কম। এখানে এসে প্রজাপতি, পাপেট শো, গান ও ছবি আঁকা দেখে খুব ভালো লাগছে।”
এবারের মেলায় প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদানের জন্য বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও সংরক্ষণবিদ ড. আলী রেজা খানকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বাটারফ্লাই ইয়াং এনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নুরে আফসারী ও শাহরিয়ার রাব্বি তন্ময়। আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছেন সৈয়দ আব্বাস, মাহমুদুল বারি ও প্রিন্স পাল জয়। মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মো. আহসান হাবীব (একুশে টিভি), মো. মিজানুর রহমান (দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন) ও মাহ আলম (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, “প্রজাপতিসহ সব প্রাণীর প্রতি আমাদের মানবিক ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এসব প্রাণী আমাদের ওপর নির্ভরশীল—তাই সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে টেকসই উপাদান ব্যবহারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় ও পারস্পরিক বিভাজন দূর করতেও প্রাণী সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব, প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস মো. মাজহারুল ইসলামসহ জাকসুর অন্যান্য সদস্য, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি, মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক কাজী রাজিউদ্দীন আহমেদ চপল, সাউথইস্ট ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুম উদ্দীন খান, বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী, আইইউসিএনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও সাবেক প্রধান বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মানছুরুল হক।
একে