প্রযুক্তি ডেস্ক:
২০১০-এর দশকের শুরুর দিকে স্টিফেন স্কিলার যখন ফেসবুকের অস্ট্রেলিয়া প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তিনি ইন্টারনেটের ইতিবাচক শক্তিতে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, এটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করবে। খবর বিবিসি'র।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'শুরুর দিকে একটা প্রবল আশাবাদ ছিল এবং বিশ্বের অনেকেই তা বিশ্বাস করত।' কিন্তু ২০১৭ সালে যখন তিনি ফেসবুক ছাড়েন, তখন তার মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, 'এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক ভালো দিক আছে, কিন্তু খারাপ দিকের পরিমাণ এখন অত্যধিক।'
বিশ্বজুড়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ইউটা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন—বিভিন্ন সরকার শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সীমিত করার চেষ্টা করছে।
তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠোর ও বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ বা 'ব্যান' কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্তের ফলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
নতুন এই আইনে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারে, সেজন্য কোম্পানিগুলোকে 'যৌক্তিক পদক্ষেপ' নিতে হবে। তবে প্রভাবিত কোম্পানিগুলো গত এক বছর ধরে এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা শিশুদের নিরাপত্তা আরও কমিয়ে দিতে পারে এবং তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন 'নেটচয়েস'-এর পল টাস্ক বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া ঢালাওভাবে সেন্সরশিপ বা কণ্ঠরোধের পথে হাঁটছে। এর ফলে তরুণরা কম তথ্য জানবে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে প্রযুক্তির জগৎ বুঝতে তারা পিছিয়ে থাকবে।'
প্রযুক্তি খাতের মূল ভয় হলো, অস্ট্রেলিয়ার এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেট ফাস্ট বলেন, 'এটি যদি সফল হয়, তবে বিশ্বজুড়ে এই ধরনের আইনের জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে।'
তথ্য ফাঁসকারী, মামলা এবং নানা প্রশ্ন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। তথ্য ফাঁসকারী (হুইসেলব্লোয়ার) এবং বিভিন্ন মামলার মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার চেয়ে নিজেদের মুনাফাকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আগামী জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে একটি ঐতিহাসিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। মেটা, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জেনেশুনে তাদের অ্যাপগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করেছে যাতে ব্যবহারকারীরা আসক্ত হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে, এই আসক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো তারা গোপন রেখেছে।
যদিও কোম্পানিগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এবং স্ন্যাপের প্রধান ইভান স্পিগেলকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর করা শত শত অভিযোগকে এই মামলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূল অভিযোগ হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং তাদের শোষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
অন্য একটি চলমান মামলায় সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেছেন, কিশোর-কিশোরীদের মঙ্গলের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলো স্বয়ং মার্ক জাকারবার্গ আটকে দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ইনস্টাগ্রামের 'বিউটি ফিল্টার' ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিজের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতা (বডি ডিসমরফিয়া) এবং খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা তৈরি করে। এই ফিল্টারগুলো সরিয়ে ফেলার একটি প্রস্তাব জাকারবার্গ নিজেই নাকচ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাম থেকে ডানে: ডিসকর্ডের সিইও জেসন সিট্রন, স্ন্যাপের সিইও ইভান স্পিগেল, টিকটকের সিইও শৌ জি চিউ, এক্স-এর সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো এবং মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ—গত জানুয়ারিতে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির এক শুনানিতে। ছবি: সংগৃহীত
মেটার প্রাক্তন কর্মী সারা ওয়েন-উইলিয়ামস, ফ্রান্সেস হগেন এবং আরতুরো বেজার মার্কিন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিয়ে কোম্পানিতে থাকাকালীন তাদের দেখা বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। তবে মেটার দাবি, কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, ভুল তথ্য, ঘৃণা ছড়ানো এবং সহিংস কন্টেন্ট প্রচারের কারণেও প্রযুক্তিখাত এখন তোপের মুখে। চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ ভিডিও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল, যা দেখতে চাননি এমন মানুষের সামনেও চলে আসে। অন্যদিকে, অনলাইনে ঘৃণা-বিদ্বেষ দমনে এক্সসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলো কী ব্যবস্থা নিচ্ছে—তা প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইলন মাস্ক। এছাড়া মেটা তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ফ্যাক্ট-চেকার বা তথ্য যাচাইকারীদের সরিয়ে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
প্রযুক্তিখাতের কর্তাদের লাগাম টানতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা দলমত নির্বিশেষে একজোট হয়েছেন। গত বছর এক শুনানিতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চাইতে জাকারবার্গকে এক প্রকার বাধ্য করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ট্যামি রদ্রিগেজ, যার ১১ বছর বয়সী মেয়ে সেলেনা ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটে যৌন শোষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
সে সময় জাকারবার্গ বলেছিলেন, 'এ কারণেই আমরা এত বিপুল বিনিয়োগ করছি এবং শিল্পজুড়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে আপনাদের পরিবার যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে, তা আর কাউকে সহ্য করতে না হয়।
জনসমক্ষে সমালোচনা এবং গোপনে তদবির
বিশেষজ্ঞ, আইনপ্রণেতা, অভিভাবক এবং এমনকি শিশুদের পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা উঠছে। তাদের অভিযোগ, এসব কোম্পানি প্রকৃত পদক্ষেপ নেওয়া ও জবাবদিহিতা এড়াতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছে।
অস্ট্রেলিয়ায় যখন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছিল, তখন কোম্পানিগুলো জনসমক্ষে প্রায় নীরব ছিল। এ প্রসঙ্গে স্কিলার বলেন, 'জনসমক্ষে আলোচনার বাইরে থাকা... কেবল সন্দেহ ও অবিশ্বাসই বাড়ায়।'
তবে গোপনে তারা সরকারের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালিয়েছে। স্ন্যাপের প্রধান ইভান স্পিগেল ব্যক্তিগতভাবে অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রী আরও জানান, ইউটিউব তাদের পক্ষে লবিং করতে বিশ্বখ্যাত শিশু-বিনোদনকারী দল 'দ্য উইগলস'-কে পাঠিয়েছিল।
জনসমক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে কোম্পানিগুলো দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। মেটা ও স্ন্যাপ—উভয় প্রতিষ্ঠানই বলছে, বয়স যাচাইয়ের দায়িত্ব অ্যাপ স্টোরগুলোর (যেমন অ্যাপল ও গুগল) নেওয়া উচিত।
অনেকে আবার যুক্তি দিচ্ছেন, সরকার এখানে বাড়াবাড়ি করছে। তাদের মতে, সন্তানদের জন্য কী ভালো, তা অভিভাবকরাই সবচেয়ে ভালো জানেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তাদেরই থাকা উচিত।
তবে অস্ট্রেলিয়া এখানে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে। ১৬ বছরের নিচে মা-বাবার অনুমতি থাকলেও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নিয়ম এনে দেশটি বিশ্বের অন্যতম কঠোর আইন পাস করেছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেটা জানিয়েছে, 'আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে এই আইন নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ জানিয়ে আসছি। এর চেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে—এমন আইন প্রণয়ন, যা অভিভাবকদের অ্যাপ ডাউনলোডের অনুমোদন ও বয়স যাচাইয়ের ক্ষমতা দেয়। সরকার নয়, পরিবারই ঠিক করবে তাদের সন্তান কোন অ্যাপ ব্যবহার করবে।'
মেটার সাবেক প্রকৌশলী আরতুরো বেজার এক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত
সরকার কেন এই যুক্তি মানছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ওয়েলস বলেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে নিজেদের সংশোধনের জন্য যথেষ্ট সময় ছিল। তিনি বলেন, 'স্বেচ্ছায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের হাতে ১৫–২০ বছর সময় ছিল... কিন্তু তারা তা করেনি। এখন আর সেটা যথেষ্ট নয়।'
মন্ত্রী আরও জানান, অন্য দেশের নেতারাও একই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চাইছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফিজি, গ্রিস এবং মাল্টার কথা উল্লেখ করেন।
ইতোমধ্যে ডেনমার্ক ও নরওয়ে অনুরূপ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সিঙ্গাপুর ও ব্রাজিলও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মন্ত্রী ওয়েলস বলেন, 'প্রথম দেশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। অন্য কোনো দেশ এমন উদ্যোগ নিতে চাইলে আমরা তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত।'
বড্ড দেরি হয়ে গেছে?
অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সামনে আসার পর চাপের মুখে পড়ে কোম্পানিগুলো তরুণ ব্যবহারকারীদের জন্য তাদের পণ্যের 'নিরাপদ সংস্করণ' আনতে শুরু করেছে। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক পিনার ইলদিরিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর জন্য অস্ট্রেলিয়া একটি বড় বাজার। গত অক্টোবরে সংসদীয় শুনানিতে স্ন্যাপচ্যাট জানায়, দেশটিতে তাদের ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ব্যবহারকারী প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার। টিকটকের ক্ষেত্রে ১৬ বছরের কম বয়সী অ্যাকাউন্ট আছে প্রায় ২ লাখ, আর মেটার (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে) ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়ে আরও বড় বাজারগুলো যাতে হাতছাড়া না হয়, সে কারণেই কোম্পানিগুলো এখন বিশেষভাবে তৎপর।
গত জুলাই ইউটিউব জানায়, তারা এআই প্রযুক্তি চালু করছে, যা ব্যবহারকারীর বয়স অনুমান করে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে দূরে রাখবে। স্ন্যাপচ্যাট চালু করেছে শিশুদের জন্য বিশেষ অ্যাকাউন্ট, যেখানে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ডিফল্টভাবে নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি সেটিংস সক্রিয় থাকে। গত বছর মেটা চালু করে 'ইনস্টাগ্রাম টিন অ্যাকাউন্ট', যেখানে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য আরও কঠোর প্রাইভেসি ও কনটেন্ট সেটিংস রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হয়।
অধ্যাপক ইলদিরিম বলেন, 'ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা গেলে ক্ষতি কিছুটা কমতে পারে—এমনটাই তারা ভাবছে।'
তবে সমালোচকেরা এতে সন্তুষ্ট নন। মেটার তথ্য ফাঁসকারী আরতুরো বেজার সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইনস্টাগ্রামের টিন অ্যাকাউন্টের নতুন নিরাপত্তা টুলগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অকার্যকর। তিনি বিবিসিকে বলেন, 'মূল সমস্যা হলো—মেটা ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলো কিশোর-কিশোরীদের প্রকৃত ক্ষতি রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।'
বর্তমানে কোম্পানিগুলো আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে আছে। তারা বোঝাতে চাইছে, দ্বিমত থাকলেও তারা অস্ট্রেলিয়ার আসন্ন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার চেষ্টা করছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, কোম্পানিগুলো গোপনে আশা করছে—আইনি চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তিগত ফাঁকফোকর এবং নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলো দেখে অন্য দেশগুলো যেন এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরে আসে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক নেট ফাস্ট এবং স্কিলারের মত, কোম্পানিগুলো আইন মানবে, তবে খুব ভালোভাবে মানবে না। স্কিলার বলেন, 'তারা চাইবে না বিষয়টি এত সফল হোক যে অন্য দেশগুলোও বলে ওঠুক— বাহ! এটা তো দারুণ কাজ করছে, চলো আমরাও একই কাজ করি।'
আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যারি লাইটম্যানের মতে, ভবিষ্যতের বিশাল ব্যবহারকারীগোষ্ঠী ধরে রাখতে চাওয়া বড় কোম্পানিগুলোর জন্য এই জরিমানা 'সাগরে এক ফোটা জলের মতো'। তারা এটিকে ব্যবসার খরচ হিসেবেই দেখবে।
তবে বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও স্কিলার এটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্য এক ধরনের 'সিটবেল্ট মোমেন্ট'—অর্থাৎ গাড়িতে সিটবেল্ট চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, 'অনেকে বলতে পারেন, খারাপ আইনের চেয়ে আইন না থাকা ভালো। কিন্তু আমার মনে হয়, আগে যেটা পুরোপুরি অনিয়ন্ত্রিত ছিল, তার চেয়ে অসম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও ভালো। হয়তো এটা কাজ করবে, হয়তো করবে না—কিন্তু অন্তত আমরা কিছু একটা করার চেষ্টা তো করছি।'
এমআই