কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহীতাদের ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যারা পূর্বেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি এন্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারী ২০৯ জন টিকা গ্রহীতার মাঝে পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া যায়।
সোমবার (২ আগস্ট) শহীদ ডা. মিল্টন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও “Haematological Parameters and Antibody Titre After Vaccination Against SARS-CoV-2” শীর্ষক গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
উপাচার্য বলেন, কোনো ধরণের আতঙ্ক নয়। অবশ্যই করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি একেবারেই কম। উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে দেশের সকল মানুষের টিকাদান নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষাণা অনুযায়ী দেশেই টিকা উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে অবশ্যই টিকা নিতে হবে ।
তিনি আরো জানান, আজকের এই গবেষণা থেকে বাংলাদেশে জনগণের উপর টিকা প্রয়োগের পর কার্যকর এন্টিবডি তৈরির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে সময়ের সাথে এন্টিবডির উপস্থিতি এর পরিবর্তন এবং পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচীতে নতুন অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য টিকার এন্টিবডি তৈরির কার্যক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য আরো গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন চার মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিলে কি পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি হয় সেই বিষয়েও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কোভিড মোকাবিলায় টিকাদান কর্মসূচিকে সার্থক করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারীতে সমস্ত বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস অতিমারীর তৃতীয় ঢেউ চলমান। দেশে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ হাজার ৯১৬ জন এবং মোট শনাক্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে কোভিড অতিমারী মোকাবেলায় দেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচী চলমান আছে এবং বর্তমানে তা আরো বেগবান হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আরো কয়েক ধরণের টিকা এ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। টিকাদান এর উদ্দেশ্য হল মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো এবং আক্রান্ত হলে রোগের জটিলতা হ্রাস এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমানো।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণকারীদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ এবং অর্ধেকের বেশী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সাথে জড়িত। অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশের পূর্বে কোভিড সংক্রমিত হবার ইতিহাস আছে। অর্ধেকেরও বেশি অংশগ্রহণকারী পূর্ব থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানীসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এ ধরনের রোগের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকা গ্রহণের পর এন্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় নি। ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকাগ্রহণের পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামান্য জ্বরসহ মৃদু উপসর্গের কথা জানিয়েছেন। রক্ত জমাট বাঁধা বা এরকম অন্য কোনো জটিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়নি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এর সাথে এন্টিবডি এর উপস্থিতির কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। টিকা গ্রহণকারীদের মাঝে ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডি এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যে ২ শতাংশের এন্টিবডি পাওয়া যায়নি তারা জটিল রোগে আক্রান্ত, অনেক বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম।
এই গবেষণা কার্যক্রমটিতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ সহ-গবেষক হিসেবে এই গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন।