ডা. তারেক রেজা আলী :
শিশুটা জন্মেছে স্বাভাবিক সময়ের একটু আগে, ৩৪ সপ্তাহে। ওজন কিন্তু অনেক ভালো, ২.১ কেজি। অর্থাৎ কম ওজন বলার কোন উপায় নেই। কিন্তু জন্মের পরেই ছিল শ্বাসকষ্ট, নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে অনেক দিন। অক্সিজেন তো লেগেছেই, শ্বাস নেওয়ার জন্য আরো যন্ত্রের সাহায্য লেগেছে। তিনবার রক্তও দিতে হয়েছে।
এই শিশুটিকে যখন আরওপি (রেটিনোপ্যাথী অফ প্রিম্যাচ্যুরিটি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও কম ওজনের নবজাতকের রেটিনার সমস্যা) স্ক্রীণিং বা এই রোগটা আছে কী না এটা পরীক্ষা করতে আমার কাছে আনা হয়, আমি ভেবেছিলাম সব কিছু ঠিকই পাব এই শিশুর। কারণ যথেষ্ট বড় এই শিশু, বেশ সবল। যদিও স্ক্রীণিং করার কথা ৩০ দিন বয়সে, যে কোন কারণেই চিকিৎসক পিতা তা করে উঠতে পারেন নি, এসেছেন ৩৯ তম দিনে। চোখের ভিতর পরীক্ষা করে দেখি, এই শিশুর রেটিনা প্রায় ছিড়ে যাচ্ছে। অনেক প্যাঁচানো রক্ত নালী (প্লাস ডিজিজ)। রোগ নির্ণয়ের ভাষায় এটা স্টেজ ৪-এ, জোন ২ এন্টেরিয়র। বুকটা কেঁপে উঠলো। পারব কি এই শিশুকে নিশ্চিত অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করতে?
সব কাজ ফেলে গতকালই শিশুর চোখে লেজার করে দিলাম। ধন্যবাদ নবজাতক বিশেষজ্ঞ শিমি কে, এত অল্প সময়ের নোটিশে সময় করে এসেছ তুমি। তোমার সাহায্য ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব ছিল না।
শিশুটির জন্য সবাই প্রার্থনা করবেন। হয়তো আরো লেজার করতে হবে, হয়তো চোখের ভিতর ইঞ্জেকশনও দিতে হবে, কিন্তু একটিই কামনা, রেটিনা যেনো ছিঁড়ে না যায়, এই রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক শিশু হিসাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। অন্ধদের স্কুলে নয়, স্বাভাবিক শিশুদের স্কুলে পড়া লেখা করে জীবনে অনেক বড় হয় আজকের এই অপরিণত শিশুটি।
যে কথা বলার জন্য এত কথা বলা, আমরা জানি অপরিণত শিশুদের চোখের রেটিনা পরীক্ষার নিয়ম (স্ক্রীণিং ক্রাইটেরিয়া)ঃ
শিশুর জন্ম যদি হয় ৩৫ সপ্তাহ বা তার আগে, জন্মের সময় ওজন যদি হয় ২০০০ গ্রাম বা তার কমঃ ৩০ দিন বয়সে চোখের মনি ড্রপ দিয়ে বড় করে রেটিনা পরীক্ষা করতে হবে।
শিশুর জন্ম যদি হয় ২৮ সপ্তাহ বা তার আগে, জন্মের সময় ওজন যদি হয় ১২৫০ গ্রাম বা তার কমঃ ২০ দিন বয়সে চোখের মনি ড্রপ দিয়ে বড় করে রেটিনা পরীক্ষা করতে হবে।
কিন্তু আজ আমরা চাক্ষুষ দেখতে পেলাম, যদি শিশুর জন্মের পর নিওনেটাল আইসিইউতে অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পার করে, অনেক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তার ওজন যদি ২০০০ গ্রামের বেশীও হয়, এই শিশুর রেটিনা পরীক্ষা ৩০ দিন বয়সেই করতে হবে।