সময় জার্নাল প্রতিবেদক: ক্যাম্পাসের মাঠে একদল ছেলে-মেয়ে ঘুরে ঘুরে ক্যাম্পাসে আসা নবীন আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে যেয়ে জানাচ্ছে রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা উদ্বুদ্ধ করছেন রক্তদানের জন্য। তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই যোগ দেয় বাঁধনে, আগ্রহী হয় রক্ত দিতে। ক্যাম্পাসের মাঠে ঘুরে অন্যদের রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করা এই ছেলে-মেয়েগুলো হলো রক্তযোদ্ধা, বাঁধনের কর্মী। তাদেরই একজন মো. মঈন সরকার বাপ্পি।
রক্তের অভাবে যেন কোনো মুমূর্ষু রোগীর জীবন থমকে না দাঁড়ায়। সেজন্য পরিচিত-অপরিচিত, আত্মীয়-অনাত্মীয় যে কেউ, যেকোন সময় রক্তের জন্য যোগাযোগ করলেই নেমে পড়েন রক্তের সন্ধানে। হন্যে হয়ে খোজেন ডোনার, রক্ত না পাওয়া পর্যন্ত ছুটে চলে বাপ্পি। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি বাঁধন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ ২০২১-২২ এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনে বাপ্পির যুক্ত হওয়া ২০১৬ সালে রংপুরে। বাঁধন কারমাইকেল কলেজ ইউনিটে কাজ করতেন তার স্কুলের বড় ভাই মোশারফ হোসেন বোরহান। সেখানে বাঁধনের মাধ্যমেই প্রথমবার ব্লাড টেস্ট করেন বাপ্পি। পরবর্তীতে বাঁধন কর্মীদের আন্তরিকতা ভালোবাসা দেখে রক্ত নিয়ে কাজ করায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
২০১৭ সালে তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পান। ভর্তির পর ক্যাম্পাসে এসে দ্বিতীয় দিনেই যুক্ত হয়ে যান বাঁধন, সরকারি তিতুমীর কলেজ ইউনিটে। এরপর থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই সংগঠনের হয়ে। কাজের সুবাধে তিনি বাঁধন, ঢাকা সিটি জোনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব ছিলেন। সর্বশেষ তিনি বাঁধন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ ২০২১-২২ এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেলেম।
কেন্দ্রীয় পরিষদের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) ১৯৯৭ সালে ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মোট ৫৩টি জেলায় ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছে। আমার চাওয়া সারাদেশে বাঁধনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ুক, রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাঁধনকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ করতে যাই।
রক্তের প্রয়োজনে নিজ জেলার মানুষের জন্যও কাজ করেন বাপ্পি। তিনি জানান, এই কাজে তাকে পরিবার সবসময় সাপোর্ট দিয়েছে। এমনকি কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তার বাবাই সন্তানের ফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। এটিকে পরিবারের বড় সমর্থন হিসেবে দেখছেন তিনি।
এই মহৎ কাজে যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাপ্পি বলেন, এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রথম ও প্রধান কারণ আমি প্রত্যক্ষভাবে অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পারছি। আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে সরাসরি যুক্ত করতে পারি। একজন ব্যক্তি চার মাস পর পর বছরে তিন বার রক্ত দিতে পারেন। এভাবে আমরা যদি রক্ত দেই তবে আমরা শুধু এক একটি মানুষকে বাঁচাতে পারব তাই নয়, এক একটি পরিবারের মুখেও হাসি ফোটাতে পারি। একজন ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারার যে আত্মতৃপ্তি, তা বলে বোঝানো যাবে না।
অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা প্রথমে রক্তদানের উপকারিতাগুলো রক্তদাতাদের সামনে তুলে ধরি। একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন, তারা রক্ত পাচ্ছে না- এ অবস্থায় মানুষের কষ্টগুলো তাদের সামনে যখন তুলে ধরি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে অবশ্যই তারা রক্তদানে উৎসাহিত হয়। অনেকেই নিয়মিত রক্তদান করে এবং অনেকেই আর্তমানবতার সেবায় সরাসরি কাজ করার জন্য আমাদের প্লাটফর্মে যুক্ত হয়।
রক্ত নিয়ে কাজ করার অনুভূতি জানতে চাইলে বাপ্পি বলেন, রক্ত নিয়ে কাজ করার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। একজন মা, একজন বাবা অথবা একজন সন্তান যখন হাসপাতালের বিছানায় রক্তের জন্য হাহাকার করছে, পরিবারের সদস্যরা খুঁজে হয়রান কিন্তু রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছে না- এ অবস্থায় রক্তদাতা খুঁজে দিয়ে তাদের সাহায্য যারা করে তারাই শুধু এর আনন্দটা অনূভুতিটা বুঝতে পারবে।
সময় জার্নাল/এমআই