সময় জার্নাল প্রতিবেদক: বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন (বিডব্লিউএসএফ) সকল ধরনের হুইলচেয়ার স্পোর্টসের মাধ্যমে বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়ানুরাগীদের সমাজের মূল ধারায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছে ২০১৮ সাল থেকে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নের জন্য ইতোমধ্যে সংগঠনটি অর্জন করেছে ইয়াং বাংলার ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২০’।
খেলাধুলার পাশাপাশি নিবন্ধিত প্যারা ক্রীড়াবিদদের দক্ষ জনশক্তির অংশ হিসেবে যুক্ত করার লক্ষ্যে এই সংগঠন নানা ধরনের কর্মমুখী শিক্ষাকার্যক্রম আয়োজনের ব্যবস্থাও করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন গ্রহণ করেছে ‘স্কিলস ফর ইউরসেলফ’ উদ্যোগ। যার মাধ্যমে নিবন্ধিত প্যারা ক্রীড়াবিদরা সুযোগ পাবেন বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে। এই উদ্যোগের অধীনে প্রথম কর্মশালায় হিসেবে ১৩ জুলাই ২০২১ থেকে ০৫ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত ৩টি ভাগে ১২ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ‘অনলাইন ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কোর্স’। এ কর্মশালায় ই-লার্নিং স্ট্র্যাটিজিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মেন্টরিয়ান। এ কর্মশালায় মেন্টরিয়ানের ৩ জন ট্রেনারদের তত্ত্বাবধানে বিডব্লিউএসএফ-এর নিবন্ধিত ১৪ জন প্যারা ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অংশগ্রহণ করেন। আজ ০৭ আগস্ট ২০২১ শনিবার অনলাইনের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সার্টিফিকেট প্রদানের মধ্য দিয়ে কর্মশালাটি শেষ হয়। সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন ও ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মেন্টরিয়ানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ প্রকল্প পরিচালক মো. মজিবুর রহমান, বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান, বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নূর নাহিয়ান ও ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মেন্টরিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা রাসেল এ কাউসার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহমেদ ওয়াসিফ রেজা। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী মাহি আশফাক।
কর্মশালার আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নূর নাহিয়ান জানান, “আমরা দেখছি বিশ্ব কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে করোনা মহামারীতেও। তাই, আমরা আমাদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সর্বাত্মকভাবে কাজে লাগাচ্ছি। আমরা গতবছর অনলাইনে দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এ বছর এসে আমরা স্কিলস ফর ইউরসেলফ এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি যার মাধ্যমে আমাদের নিবন্ধিত অ্যাথলেটদের আমরা ই-লার্নিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সি সেক্টরে যুক্ত করতে চাচ্ছি। আমরা চাই খেলাধুলার পাশাপাশি তারা যেন ফ্রিল্যান্সি সেক্টরে নিজেদের কর্মদক্ষতাকে কাজ লাগিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে জোরালো করতে পারে। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
ই-লার্নিং স্ট্র্যাটিজিক পার্টনার মেন্টরিয়ারনের প্রতিষ্ঠাতা রাসেল এ কাউসার বলেন, “ আমাদের মেন্টরিয়ানের একটি অবজেক্টিভ হলো রেসের ময়দানে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করা। সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে মার্কেটিং-এ সম্পৃক করার লক্ষ্যে প্রাথমিক কলা কৌশল আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য যেন তারা ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারে। আমরা চাই তারা যেন ঘরে বসে নিজেদের সময়কে সঠিক কাজে প্রয়োগ করে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. মজিবুর রহমান বলেন, “এই সংকটকালে অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম যারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই ধন্যবাদের যোগ্য। তদুপরি বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন এখানে যাদেরকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে সময়োপযোগী দক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। আমি এবারের মতো ভবিষ্যতও এরকম কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকব।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. আমিনুর রহমান সুলতান আয়োজক, কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থীদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং বলেন যে, “মানবতা মানুষকে অনেকদূর নিয়ে যায়। আমি চাইব সমাজের বিত্তশালীরা আরো মানবিক হবেন। আমরা যেমন তাদের পাশে আছি, আপনারাও থাকবেন।”
কর্মশালার কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ নয়ন, প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সিলেট থেকে প্যারা ক্রীড়াবিদ জাবেদ আহমেদ, পটুয়াখালী থেকে হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদ মো. হেলাল, সীতাকুণ্ড থেকে হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদ মো. মাইনুল এই কর্মশালা নিয়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান বলেন, “ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন ছিল ও তা বাস্তবায়নে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই শোকের মাসে এই যে আয়োজন শোককে শক্তিতে পরিণত করার বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের যে প্রয়াস তা প্রশংসনীয়। আমাদের দরজা সবসময় তাদের জন্য খোলা আছে। আমরা তাদের পাশে সবসময় আছি, থাকব।”
সবশেষে সভাপতির বক্তব্যে ড. আহমেদ ওয়াসিফ রেজা বলেন, “বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষরা কর্মক্ষেত্রে যেন প্রবেশ করতে পারে ও স্বাবলম্বী হতে সুযোগ পায়। এই মহামারীতে যে একের পর এক কার্যকরী উদ্যোগে গ্রহণ করায় ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূর নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যে সকল বাঁধা আছে তা দূর করার জন্য, পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়াসহ জাতীয় অর্থনীতিতে তারা যেন অবদান রাখতে পারে তার জন্য বিডব্লিউএসএফ উদ্যোগ সাধুবাদ জানাই। আমরা সবসময় এই সকল উদ্যোগে সাথে আছি।”
উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে সার্টিফিকেট স্লাইড সো-এর মাধ্যমে কর্মশালার সমাপ্তি করা হয়।
সময় জার্নাল/এমআই