স্পোর্টস ডেস্ক : গত রাতের ম্যাচে জুভেন্টাস পোর্তোকে হারাতে পারলেও গোল অ্যাগ্রিগেটে এগিয়ে থেকে জুভেকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে পোর্তো। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল'র দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে পোর্তোকে আতিথ্য দেওয়ার আগে নানান সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়েছিল জুভেন্টাস। পরের রাউন্ডে জায়গা করে নিতে তাই তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে ছিল তুরিনের ওল্ড লেডীরা। কিন্তু তাদের হতাশ করে টানা দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল থেকে বিদায় নিয়েছে জুভে।
এদিন ম্যাচের আগে সমীকরণ ছিল পোর্তোকে ১-০ ব্যবধানে হারাতে পারলেই পরের রাউন্ডে চলে যাবে জুভে। তবে ম্যাচের প্রায় অর্ধেক সময় ১০ জনের দল নিয়ে খেলা পোর্তোর বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকে জুভে। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময় সেখানে ৩-২ ব্যবধানে জুভেন্টাস জিতলে দুই লেগ মিলিয়ে ফলাফল দাঁড়ায় ৪-৪। আর তাতেই অ্যাওয়ে ম্যাচে দুই গোল করার সুবাদে কোয়ার্টারে জায়গা করে নেয় পোর্তো।
এদিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যদিও দলের প্রথম গোলে অবদান ছিল পর্তুগিজ যুবরাজের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যেতে ব্যর্থ রোনালদো। কেননা পরের রাউন্ডে উতরে যাওয়ার জন্য রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে ছিল তুরিনের বুড়িরা।
ঘরের মাঠে ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারত জুভে। তবে ডান দিক থেকে হুয়ান কুয়াদরাদোর ক্রসে আলভারো মোরাতার জোরালো হেড ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আগুস্তিন মারচেসিন। এর কিছুক্ষণ পরেই গোল হজম করতে বসেছিল জুভে। প্রতিপক্ষের ভালো একটি প্রচেষ্টা ডি-বক্সে ডিফেন্ডার লিওনার্দো বনুচ্চি রুখে দলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ছন্দে থাকা ফরোয়ার্ড মেহদি তারেমির হেড পোস্টের ওপরের দিকে লেগে ফিরলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় স্বাগতিকরা।
খুব বেশি সময় অবশ্য পোর্তোকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। ম্যাচের ১৯ মিনিটের মাথায় ডি বক্সে তারেমিকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় পোর্তো। স্পট কিক থেকে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার সার্জিও অলিভেইরার। এরপর ম্যাচের ২৭ মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ হাতছাড়া করেন মোরাতা। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে বল বুক দিয়ে নামিয়ে দুরূহ কোণ থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। অবশ্য সঠিক সময়ে এগিয়ে পথ আগলে দাঁড়ানোয় মারচেসিনের কৃতিত্ব কোনো অংশে কম নয়। এভাবেই আক্রমণ পালটা আক্রমণ দিয়ে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
বিরতি থেকে ফিরে ৪৯তম মিনিটে ম্যাচে সমতায় ফেরে জুভে। বনুচ্চির উঁচু করে বাড়ানো বল ডি-বক্সে পা দিয়ে নামিয়ে সামনেই দাঁড়ানো চিয়েসাকে শট নিতে ইশারা করেন রোনালদো। কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নিতে ভুল করেননি প্রথম লেগের শেষ দিকে দলকে অ্যাওয়ে গোল পাইয়ে দেওয়া এই ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড।
এরপর ম্যাচের ৫৪ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মেহদি তারেমি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। আর ম্যাচের বাকি থাকা প্রায় অর্ধেক সময় ১০ জনের দলে পরিণত হয় পোর্তো। ১০ জনের দলকে চেপে ধরে ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন চিয়েসা। ডান দিক থেকে কুয়াদরাদোর দারুণ ক্রস ছয় গজ বক্সে পেয়ে হেডে ব্যবধান ২-১ করেন এই তারকা। আর তাতেই দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই পাওয়া যেতে পারত ম্যাচের ফলাফল। কিন্তু ৭৮ মিনিটে কুয়াদরাদোর আরেকটি দারুণ ক্রস দারুণ পজিশনে পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেডে হতাশ করেন রোনালদো। চার মিনিট পর চিয়েসার আরেকটি শট রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মারচেসিন। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মোরাতা জালে বল পাঠালেও গোল মেলেনি। দুই মিনিট পর কুয়াদরাদোর বুলেট গতির শট ক্রসবারে বাধা পেলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের ১১৫তম মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রিকিক গোলে পোর্তোকে ২-২ গোলে সমতায় ফেরান অলিভেইরা। এর মিনিট দুই পরে ফেদেরিকো বার্নারদেস্কির ক্রসে হেডে দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন ৪-৪ করেন রাবিওট। কিন্তু বাকি সময়ে পোর্তোর রক্ষণ আর ভাঙতে পারেনি তারা। ফলে ৩-২ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতেও অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থেকে শেষ ষোল থেকেই বিদায় নিতে হলো জুভেন্টাসকে।
সময় জার্নাল/এমআই