বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নিজের ন্যায়-অন্যায় ধরতে পারার বিচার বিবেচনা বোধ জাগবে কবে?

বুধবার, আগস্ট ১১, ২০২১
নিজের ন্যায়-অন্যায় ধরতে পারার বিচার বিবেচনা বোধ জাগবে কবে?

মাহবুব কবির মিলন :

ভদ্রলোকের গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়াবার কয়েক সেকেন্ড পরেই তাঁর গাড়ির পিছনে একটি গাড়ি সজোরে এসে ধাক্কা মারল। পিছনের গাড়িটি কন্ট্রোল করতে পারেনি। ভুল বা দোষ, আমরা যাই বলি না কেন, তা পিছনের গাড়ির। সামনের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। অদূরেই ট্রাফিক পুলিশ।
পিছনের গাড়ি থেকে এক ভদ্রমহিলা নেমে এসে সামনের গাড়ির সাথে জড়িয়ে পড়লেন বাক-বিতণ্ডায়। সবার সামনে হেরে গেলেন ভদ্রলোক। শুধু হেরে গেলেই হবে না, পিছনের গাড়ির ক্ষতি হওয়ায় জরিমানা দিতে হবে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা। কেউই সঠিক মিমাংসা বা ফয়সালা করতে পারলেন না ভদ্রমহিলার গলার ধাক্কায়।
ভদ্রলোকের কাছে নগদ টাকা না থাকায় স্পটেই পাঁচ হাজার টাকা বিকাশ করে দিলেন ভদ্রমহিলার মোবাইলে।
টাকা পাঠিয়েই ভদ্রলোক তাঁকে বললেন, টাকা আপনাকে দিলাম না, দিলাম আল্লাহকে।
এপর্যন্ত এসে আমার মেসেঞ্জারে তিনি লিখা শেষ করেছেন। এটা গতকালের ঘঠনা।
আমি লিখলাম, আলহামদুলিল্লাহ। সঠিক কথা বলেছেন। আল্লাহপাকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। যিনি শ্রেষ্ঠ বিচারক, বিচারেরও মালিক।
আজ ভদ্রলোক ইনবক্স করেছেন। ভদ্রমহিলা ফোনে দু:খ প্রকাশ করে পাঁচ হাজার টাকা বিকাশে রিটার্ন করে দিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তিনি অন্যায় করেছিলেন।আলহামদুলিল্লাহ।
এই যে ন্যায় অন্যায় ধরতে পারা। বিচার বিবেচনা বোধ জেগে ওঠা, এটা কিন্তু আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এই বোধটাই আমাদের মরে গেছে।
কয়েকদিন ইনবক্সে এক বোন মেসেজ দিয়েছেন, স্যার হেল্প করুন। খুব মানসিক অশান্তিতে আছি। আল্লাহ যেন আমায় ক্ষমা করেন। জানতে চাইলে তিনি যা বললেন, হতবাক হয়ে রইলাম।
তিনি সরকারি চাকুরি করেন। প্রায় অফিস ফাঁকি দিতেন। সপ্তাহে এক/দুইদিন অফিসে না এসে, পরে গিয়ে ব্যাকডেটে স্বাক্ষর করতেন। এখন তাঁর মনে হচ্ছে তিনি মহা অন্যায় করে ফেলেছেন। অফিস না করেও বেতন নিয়েছেন। এটা তাঁর জন্য হারাম হয়ে গেছে। এই টাকা তিনি সরকারকে ফেরত দিতে চান। কিভাবে দেবেন সেটা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন।
ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় নিলাম কয়েকদিন। অনেক চিন্তা করে তাঁকে জানালাম, আপনি চাকুরি সময়ে এরকম কতদিন ফাঁকি দিয়েছেন, সেটা আন্দাজে বের করুন। তারপর সেটার সাথে আরও কিছুদিন যোগ দিয়ে ততদিনের বেতন সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত বাবদ ** ২৬৭১ কোডে ব্যাংক চালানে জমা দিয়ে দিন। তিনি তাই করছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
বহুবার অনেকে জানতে চেয়েছেন, তাঁরা বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করেছিলেন অনেকবার। এখন তাঁদের বিবেকে লাগছে। তাঁরা এই ভার থেকে মুক্ত হতে চান। কিভাবে তা ফিরিয়ে দেবেন সরকারি খাতে। অনেকে টিকিট কেটে ভ্রমণ না করে টিকিট ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে তা পরিশোধ করার চেষ্টা করেছেন। আসলে সেভাবে হবে না। আপনি যে টিকিট ছিঁড়ে ফেলেছেন, যাত্রা করেন আর না করেন, সেই টিকিটের টাকাই শুধু সরকার পেয়েছে। আগের বিনা টিকিটে যাত্রায় সরকারের ক্ষতির টাকা তো রয়েই গেল আপনার মাথায়। বরং আপনার ফাঁকা সিট বিক্রি করে কেউ হয়ত অবৈধভাবে লাভবান হয়েছে।
অনেক খোঁজ নিলাম। রেল অধিদপ্তরে এভাবে টাকা ফেরতের কোনো সুযোগই নেই। একটি বিকল্প রাস্তা আছে। সেটা হচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়ের **২৬৭১ কোডে টাকা জমা দেয়া। এখন যে যত টাকা ফাঁকি দিয়েছেন মনে করবেন, তার সাথে আরো অর্থ যোগ করে চালানের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন। এতে অন্তত শান্তি পাবেন। মনের ভার লাঘব হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ক্ষমা করবেন আমাদের। কেউ চাইলে পুরো কোড জানিয়ে দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।
এই যে মানুষের হেদায়েতের সাথে যুক্ত থাকার শান্তি যে কতটা, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এখানেই মনে হয় জীবনটা সার্থক আমার।
আজ রাতে ঘুমাবার আগে সবাই নিবিষ্ট মনে একটু চিন্তা করবেন প্লিজ, মানুষের কত টাকা আমরা মেরে দিয়েছি, পথে বসিয়েছি কত মানুষকে। দেশ ও দশের কত টাকার ক্ষতি করেছি আমরা।
ফেরত দেয়ার সময় সুযোগ পাবেন তো?


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল