বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

করোনার ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ের

সোমবার, আগস্ট ১৬, ২০২১
করোনার ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ের

ডা. কামরুল হাসান সোহেল :

SARS-CoV-2 ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট, যা C-37 নামেও পরিচিত, SARS-CoV-2 এর একটি রূপ, যা COVID-19 সৃষ্টি করে। এটি প্রথম পেরুতে ২০২০ সালের আগস্টে সনাক্ত করা হয়েছিল। ১৪ জুন ২০২১ তারিখে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এটিকে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট নাম দেয় এবং এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসাবে মনোনীত করে। এটি বিশ্বের কমপক্ষে ২৮ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অ্যান্টিবডিগুলিকে নিরপেক্ষ করার জন্য বেশি প্রতিরোধী বলে পরিচিত।

ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট আলফা এবং গামা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে আরো বেশি সংক্রামক এবং ভ্যাক্সিন প্রতিরোধী হতে পারে। ল্যাটিন আমেরিকান দেশ পেরু থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন ‘ল্যাম্বডা’ বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এটি করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বিপদজনক। গবেষকরা বলছেন, এ ভাইরাসটি ডেলটার ধরনের চেয়ে ভয়াবহ। এটি ডেলটার চেয়ে বেশি সংক্রামক। এই নতুন ধরনটি শনাক্ত করেন যে বিজ্ঞানীরা, তাদের একজন হচ্ছেন পেরুর কেয়্টোনো হেরেডিয়া ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট পাবলো সুকায়ামা। চিলিতে গত দুই মাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৩২ শতাংশের শরীরে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট উপসর্গ লক্ষ করা গেছে। আর্জেন্টিনা এবং ইকুয়েডরেও দেখা গেছে নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট। সম্প্রতি সিকোয়েন্সিং করে দেখা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অধিকাংশ নমুনায় ভারতের ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ডেল্টার (B.1.617.2/AY.1/AY.2/AY.3/AY.3.1) উপস্থিতি। তবে এরই মধ্যে পেরুর ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ল্যাম্বডাও (C.37) পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ মিউটেশনই উদ্বেগের কারণ না হলেও যখন স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয় এবং ভাইরাসের বিপজ্জনক চরিত্রগত পরিবর্তন হয় তখন সেটি বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে স্বস্তির বিষয় হলো, বাংলাদেশে পাওয়া ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে তেমন কোনো ক্ষতিকর মিউটেশন দেখা যায়নি। তবে ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন সংক্রমণ এড়াতে চাইলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ ভাইরাস বিভিন্ন সময়ে মিউটেশন হতেই পারে রূপ পাল্টানোর মাধ্যমে। আর তাই ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মাস্ক পরে সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। ইতোমধ্যেই দেশে বিভিন্ন সময়ে নমুনার সিকোয়েন্সিং করে পাওয়া গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত আলফা (B.1.1.7), দক্ষিণ আফ্রিকার বেটা (B.1.351), ব্রাজিলের গামা (P.1)। তবে ডেল্টাসহ চারটি ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলে ঘোষণা করেছে। এছাড়াও দেশে পাওয়া গেছে নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ইটা (B.1.525)। ল্যাম্বডার মতো এই ভ্যারিয়েন্টকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে বিবেচনা করছে এখনও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট তালিকায় থাকা ল্যাম্বডা দ্রুত বিস্তার লাভের ক্ষমতার জন্যই নয়, পেরুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর জন্যেও এটি পরিচিত। এটি বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে। এছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া এবং যুক্তরাজ্যসহ কমপক্ষে ২৮টির বেশি দেশে এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিচারে সার্স কোভিড-২ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট এখনও ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ নয়, বরং ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’। এর মানে হলো এসব ভাইরাসের রোগ ছড়ানোর বা গুরুতর রোগ ঘটানোর বা ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং এসব ভাইরাস বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ঘটাতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পেরুর কায়েটানো হেরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাবলো সুকায়ামা জানিয়েছিলেন, পেরুতে করোনা শনাক্তদের ৮২ শতাংশ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ জনে ৬০০ জন।

তিনি বলেন, ‘এ থেকে বোঝা যায় অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ল্যাম্বডা ভারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্তদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ থেকে মনে হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের পেটের পীড়া হতে পারে। তবে এটি অনেক বেশি ভ্যাকসিন প্রতিরোধি কি না, সেরকম প্রমাণ খুব কম।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে থাকা চারটি ভ্যারিয়েন্ট হলো- ইটা, আইওটা, কাপ্পা এবং ল্যাম্বডা। যার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তার বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শুধু দ্রুত বিস্তার লাভের ক্ষমতার জন্যই নয়, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হারও এই ভ্যারিয়েন্টেই দেখা গেছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে। এছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া এবং যুক্তরাজ্যসহ কমপক্ষে ২৮টি দেশে এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ভাইরাসই ক্রমাগত মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে বদলাতে থাকে। ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরণ তৈরি হয়। কিছু ভ্যারিয়েন্ট আবার অধিকতর ছোঁয়াচে এবং মারাত্মক হয়ে ওঠে। অনেক সময় ভ্যাকসিন দিয়েও একে কাবু করা কঠিন হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের এমনই একটি ভ্যারিয়েন্টের নাম ল্যাম্বডা। করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে C.37। পূর্বে এটি পরিচিত ছিল আন্দিয়ান স্ট্রেইন নামে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০২১ সালের ১৪ জুন, এই ভ্যারিয়েন্টের নাম রাখে ল্যাম্বডা। করোনার ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে, ২০২০ সালের আগস্টে। যদিও এই ভ্যারিয়েন্টের মূল উৎপত্তিস্থল এখনও অস্পষ্ট। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি প্রথম দক্ষিণ আমেরিকাতেই আবির্ভূত হয়েছিল। পেরুর জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অনুসারে, ২০২১ সালের মে, জুন, জুলাই মাসে পেরুতে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের।

ল্যাম্বডার স্পাইক প্রোটিনে সাতটি মিউটেশনের একটি অনন্য প্যাটার্ন রয়েছে। যা ভাইরাসটি মানুষের কোষকে সংক্রামিত করতে ব্যবহার করে। গবেষণাপত্রে বলা হয়, করোনার এই ধরণটি আলফা ও গামা ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক। করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও এই ধরণ ফাঁকি দিতে পারে। গবেষণাপত্রে তারা লিখেছেন, আমাদের ডাটা প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে, ল্যাম্বডার স্পাইক প্রোটিনে থাকা মিউটেশনগুলো অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারে। সেই সঙ্গে সংক্রমণও বাড়ায় এই ধরন। তবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে পাওয়া ভ্যারিয়েন্টটিকে ল্যাম্বডা বলা হলেও এটিতে তেমন ক্ষতিকর মিউটেশন নেই। এটা একটা স্বস্তির বিষয়। তবে ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন সবাইকে মাস্ক পরে ভ্যাকসিন নিয়ে সংক্রমণ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল