কক্সবাজার প্রতিনিধি : করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে খুললো বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
সোমবার (১৯ আগস্ট) সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজার অবস্থিত বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলেছে। পাশাপাশি খুলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল, কটেজ এবং রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
কক্সবাজার সৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, ইনানী, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, ন্যাচারপার্ক, বার্মিজ মার্কেট, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ অন্যান্য স্পটগুলো প্রস্তুত হলেও বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো তোড়জোড় নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তুলানামূলক কম পর্যটক বালিয়াড়িসহ সাগরের লোনাপানিতে আনন্দে মেতেছে। পাশাপাশি স্থানীয়রাও সমুদ্রদর্শনে ঝুঁকেছে। বলতে গেলে সৈকত এখন আর নির্জন নেই।
করোনা পরিস্থিতিতে গেল ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় কক্সবাজারের সকল পর্যটন স্পট। ফলে ৪ মাসের অধিক ধরে সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। একই সঙ্গে বন্ধ ছিল সব পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল মোটেল, রেস্তোরাঁ, বার্মিজ দোকানসহ সব ধরনের পর্যটন ব্যবসা। করোনা মহামারির কারণে প্রায় ৪ মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটন ও বিনোদন স্পটগুলো আবারও স্বরূপে ফিরে আসায় আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত যে পর্যটকরা এসেছেন তারা যে যার মতো আনন্দ হৈ হুল্লোড়ে ব্যস্ত। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়িতে দৌঁড়ঝাঁপ, সূর্যাস্ত দেখাসহ আনন্দমুখর সময় পার করছেন তারা।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, করোনার মহামারীতে পর্যটন শহরের ব্যবসায়ীদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। এই ক্ষতি আগামী কয়েক বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘ সময়ের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজসহ পর্যটন এলাকার সব প্রতিষ্ঠান প্রশাসন খুলে দিয়েছে, তাতে আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
এদিকে সৈকতে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকরা বলছেন, করোনা মহামারীতে ঘরবন্দি থাকতে আর ভালো লাগছে না। অনেকে বিষন্ন। তাই একটু বিনোদনের জন্য সৈকত ভ্রমণে এসেছেন।
বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন অনেকেই। সৈকতে দায়িত্বে থাকা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে তারা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে নামছেন।
হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বেশিরভাগ হোটেল মালিকরা কক্ষভাড়ায় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। কিছু কিছু হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তবে কেউ যেন ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ ভাড়া না দেন, সে ব্যাপারে তদারকি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হোটেল সি-গাল, সায়মান বিচ রিসোর্ট, কক্স-টুডে, লং বিচসহ প্রায় সব বড় হোটেলে কক্ষভাড়ায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, করোনায় স্থবিরতা এসেছে পর্যটন খাতের ব্যবসায়। গত ৫ মাসে এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়ে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে। ব্যবসা সচল থাকলে ব্যবসায় গতি আসবে বলে আশা রাখছি।
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনায় ধুঁকছে সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প। গত বছরের মতো এ বছরও বিপুল লোকসান গুনেছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন ও জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা পর্যটন এলাকার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছে। মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলা হচ্ছে।
সময় জার্নাল/এসএ