শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রী নির্যাতনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১১, ২০২১
স্ত্রী নির্যাতনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ

সময় জার্নাল প্রতিবেদক: বিশ্বের যেসব দেশে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার বেশি, সেসব দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশের নাম। দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৫০ শতাংশই জীবনে কখনো না কখনো সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বিশ্বের ১৬১টি দেশ ও অঞ্চলে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাদের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন জীবদ্দশায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

স্বামী অথবা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ কিরিবাতিতে। দরিদ্র এ দেশে ৫৩ শতাংশ নারীই এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। এরপর রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আরও দুটি দ্বীপদেশ ফিজি (৫২ শতাংশ) ও পাপুয়া নিউগিনি (৫১ শতাংশ)। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। হারটি সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ক্ষেত্রেও একই।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের উচ্চ হারের জন্য মানসিকতার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, দেশে পুরুষতন্ত্র এমন পর্যায়ে যে নারীরাও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এর ফলে সামাজিকভাবে নারীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থেকেও ওই পুরুষ নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে শুরু করেন। পুরুষকে উঁচু করে তোলার ভাবনা তাকে বিভিন্ন অপকর্মেও উৎসাহিত করে।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, সামাজিক-পারিবারিক সমতা, সম–অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে তবেই নারীর ক্ষমতায়ন হবে এবং সহিংসতা কমবে।

অবশ্য বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করা বাল্যবিবাহ নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। গত সোমবার তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বালবিবাহের ব্যাপকতা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। করোনা মহামারি মেয়েদের বাল্যবিবাহের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

নারী নির্যাতন সবচেয়ে বেশি যেসব দেশে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তান রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। ৯ মার্চ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় নারী নির্যাতনের যে চিত্র উঠে এসেছিল, তার চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়নি। ঘনিষ্ঠ নয়, এমন ব্যক্তিদের হাতেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন নারী। অল্প বয়স থেকেই তাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতন সবচেয়ে কম (১০ থেকে ১৪ শতাংশ) ঘটেছে ১২টি দেশ ও দুটি অঞ্চলে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের ছয়টি দেশ, পশ্চিম এশিয়ার তিনটি দেশ এবং কিউবা (১৪ শতাংশ), ফিলিপাইন (১৪ শতাংশ) ও সিঙ্গাপুর (১১ শতাংশ)।

প্রতিবেদনে আলাদাভাবে করোনা মহামারির মধ্যে সর্বশেষ ১২ মাসে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারীর শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায়ও ১৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনাকালে দেশে ২৩ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। করোনাকালে নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে, ৩৬ শতাংশ। এর পরে দ্বিতীয় আফগানিস্তান (৩৫ শতাংশ) এবং তৃতীয় পাপুয়া নিউগিনি (৩১ শতাংশ)।

মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’–এর প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, করোনাকালে বাইরে ঘোরাঘুরি কমে গেছে। দীর্ঘ সময় ঘরে থাকার কারণে নানা দুশ্চিন্তা থেকে পুরুষের সহিংস হয়ে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে স্ত্রী বা সন্তানকে নির্যাতন করে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ হিসাবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না তিনি। আবুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সহিংসতার পরিমাপ করে। স্ত্রী–সন্তানকে ধমক দেওয়াকে তারা নির্যাতন বলে বিবেচনা করে। আমাদের সামাজিক কাঠামোয় যা প্রযোজ্য নয়।’

করোনা মহামারির মধ্যে সবচেয়ে কম, ৪ শতাংশ পর্যন্ত নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে তালিকার শেষের দিকে অবস্থান করছে ৩০টি দেশ ও একটি অঞ্চল। এর মধ্যে ২৪টি দেশ হচ্ছে উচ্চ আয়ের। ৩০টি দেশের মধ্যে ২৩টি ইউরোপের। বাকি আটটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, উরুগুয়ে, কানাডা ও হংকং। শেষের দুটি দেশে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৩ শতাংশ। বাকিগুলোতে ৪ শতাংশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ৬ শতাংশ নারী নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন। সম্মানের কথা ভেবে বেশির ভাগই চুপ থাকেন। তাই নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেই ধারণা করা হয়।

নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটে চলেছে। এতে কোটি কোটি নারী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে নির্যাতন আরও বেড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা কোভিড-১৯–এর মতো টিকায় থামবে না। সরকার, সমাজ ও ব্যক্তির দৃঢ় এবং কার্যকর ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। ক্ষতিকর আচরণ পরিবর্তন করতে হবে, নারীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল