রাগিব হাসান :
আমরা কাপড় চোপড় দিয়ে মানুষকে যাচাই করি। সেটা অবশ্য পৃথিবীর সর্বত্রই আছে, কিন্তু বাংলাদেশে মনে হয় ফর্মাল কাপড় চোপড়, স্যুট টাই এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সে কারণে প্রচণ্ড গরমের দিনেও অনেকেই স্যুট টাই পরে ঘুরে।
আমি টাই বাঁধতে জানি না। বাধ্য হয়ে জীবনে যে কয়েকবার টাই পরতে হয়েছে, ইউটিউব দেখে বেধে রেখেছি কয়েকটা টাই, সেটাই ব্যবহার করেছি। এই ফর্মাল ড্রেসাপ নিয়ে দুইটা ঘটনা মনে পড়ল, সেটাই বলব আজকে।
(১) ২০০৭ সাল, আমি তখন গুগল এ কাজ করছি সামার ইন্টার্ন হিসাবে। গুগলের ক্যাফে খুবই বিখ্যাত, খাবার দাবারের অভাব নাই, আর সব ফ্রি। একাধিক ক্যাফে প্রতি ভবনেই। একদিন ক্যাফেতে খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ মনে হল, আমার সামনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগে। লোকটা একটা ময়লা টি শার্ট আর রঙচটা জিন্স আর কেডস (স্নিকারস) পরা।
ভাল করে তাকিয়ে দেখি, আরে, এ তো গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা মালিকের একজন, সের্গেই ব্রিন!
তখনকার হিসাবে সে বিলিয়নিয়ার, কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক আর বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় প্রথম দিকে আছে।
কিন্তু জমকালো পোশাকের বদলে তার পরণে বাকি সব ইঞ্জিনিয়ারদের মতোই জিন্স আর টিশার্ট। দলবল চামচা নিয়ে না ঘুরে দিব্যি সাধারণ কর্মীদের সাথে লাইনে দাঁড়ানো।
গুগলের সাপ্তাহিক মিটিং যা হত সে সময়, পুরো ঘরে কেবল এক জন হয়তো ফিটফাট টাই পরা থাকত, বলেই দেয়া যেত যে সে হচ্ছে উপরের লেভেল ম্যানেজার বা প্রেসিডেন্ট টাইপের কেউ।
(২) আমি তখন সদ্য অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে আমার ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিয়েছি। আমি আজীবন টিশার্ট আর জিন্স পরে চলি। অ্যাকাডেমিক চাকুরিতে ঢোকার একটা বড় কারণও আসলে এটা -- ফর্মাল ড্রেসাপ আর টাই পরার কোন চাকুরি আমাকে দিয়ে হবে না।
তো, কয়েকমাস পরে ফ্যাকাল্টিদের এক অনুষ্ঠানে গেছি। সহকর্মীর সাথে গল্প করছি। ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট (বাংলাদেশের ভিসি পদের সমতূল্য) আসলেন, তাঁকে কিছু বলার আগেই উনি বললেন, ইউ টু মাস্ট বি ফ্রম কম্পিউটার সাইন্স!
আমি বললাম, ইয়া বাট হাউ ক্যান ইউ টেল?
ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে বললেন, লুক অ্যারাউন্ড। বাকি সবাই সেজেগুজে স্যুট টাই বা কমপক্ষে ফুলশার্ট প্যান্ট পরে এসেছে। আর এই রুমে তোমরা দুইজনই কেবল টিশার্ট আর জিন্স পরে এসেছো। কাজেই তোমরা নির্ঘাত কম্পিউটার সাইন্টিস্ট।
ঘটনা সত্য! রুমের অনেকেই মেডিকাল সাইডের লোকজন। দামী স্যুট লাগানো। আমরা দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিশার্ট আর জিন্স পরে এসেছি। আমি চপ্পল পরে যাইনি ভাগ্যক্রমে!
পোষাক নয়, মানুষের পরিচয় তার কাজে। এই সত্যটা আমাদের প্রতি নিয়তই মনে রাখা উচিৎ। যারা পোষাক দিয়ে মানুষের গুরুত্ব বিচার করে, তাদের বিবেচনাবোধের উন্নতি হোক, সেটাই কামনা করি।
জয় হোক জিন্সের, সাধারণ পোষাকের ...
রাগিব হাসান এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর নিজের অনলাইন উদ্যোগের কারণে গুগলের 'রাইজ' পুরস্কার পেয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য গুগল এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।
সময় জার্নাল/ইএইচ