নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সকল সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো বাধ্যতামূলক। এই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা জারির ১০ বছর পার হলেও তা মানছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফাইনান্স বিভাগ। এখনও পর্যন্ত বিভাগটির সভাপতির অফিস কক্ষে টাঙানো হয়নি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। অন্যদিকে এতদিন ধরে বিভাগটিতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকলেও বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, এক বছর ধরে বিভাগটির বর্তমান সভাপতির দ্বায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ড. জান্নাত আরা পারভীন। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর সময় পার হলেও তিনি তার অফিস কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙাননি। তাঁর আগে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। তিনিও টাঙাননি বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি। শুধু তার দুজনই নন, এর আগে যারা সভাপতির দ্বায়িত্বে ছিলেন তারাও টাঙাননি। এর জন্য তারা দুষছেন পূর্বের সভাপতিদের।
সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৪-এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতির পিতা’। এখানে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এটা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী একটি গর্হিত কাজ। যারা অফিস কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙাননি তাদের দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনে নামবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, এক সময়ের শিবিরের বড় বড় ক্যাডাররাই এখন এই বিভাগের শিক্ষক। বর্তমানে বিভাগটি জামায়াত অধ্যাষিত হওয়ায় তারা জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু ও দেশের সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে পারছে না। তাই ছবি টাঙাতে তাদের অনীহা। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা জানান, ফাইন্যান্স বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকই বিএনপি-জামায়াতপন্থী। যার কারণে তারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো দরকার মনে করেন না। এটি সংবিধানকে লঙ্ঘনের শামিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘এই বিভাগে এমনিতেই ঝামেলা আছে। বিষয়টি আমি জানি না। আমি খোঁজ নিবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খবর পেলে প্রথমে তাদের শোকজ করা উচিত।’
অফিসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জান্নাত আরা পারভীন বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর আগস্টে। আমিও অনেকদিন ধরে খেয়াল করছি আমাদের বিভাগে ছবি ছিল না। করোনার কারণে আমি অফিসে তেমন একটা যেতে পারিনি। এখন যেহেতু অফিস নরমালভাবে চলছে আমি খোঁজ নিবো আগের চেয়ারম্যানদের সময় কেন ছিলো না। এই বিষয়টা আমার মাথায় আসছে৷ আমি দেখবো।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর যতজন সভাপতি ছিলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি ছবি টাঙাতে দেখি নাই। বিষয়টা এভাবেই চলে আসছে।
পূর্বের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে প্রতিটি সরকারি অফিসের অফিস প্রধানের কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে হবে। আসলে তখন আমাদের বিভাগের সভাপতি ছিলেন সাবেক ডিন জাহাঙ্গীর ভাই। তখন আমাদের মাঝে ইয়ে.. হলো এটা হবে উপাচার্যের অফিসে গেজেট অনুযায়ী। পরবর্তীতে অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে বিভাগে ছবি লাগিয়েছে। বিভাগের সভাপতিরা আক্ষরিক অর্থে ইনস্টিটিউশনের প্রধান অফিস নয়। সে হিসেবে আর লাগানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম সালামত উল্যা ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টা আমি জানি না। যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে উচিত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, দেশের অন্য অফিসের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস প্রধানের কক্ষে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে হয়। ফাইন্যান্স বিভাগের বিষয়টি আমি জানি না। তাদের সাথে কথা বলবো।
সময় জার্নাল/এমআই