আন্তর্জাতিক ডেস্ক। ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের আফগানিস্তানে হামলার পর প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে শেষ মার্কিন সৈন্যও বিদায় নিয়েছেন। তাদের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিজয় উদযাপন করেছে তালেবান।
৩১ আগস্টের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার টুইট করে নিজেই এই ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকা এবং ন্যাটোর বাহিনী কাবুল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতশবাজি ফাটিয়ে রীতিমতো উৎসব পালন করছে তালেবানরা।
টুইটারে দেশের সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে জো বাইডেন লিখেছেন, 'আফগানিস্তানে আমাদের সামরিক উপস্থিতি শেষ হল। গত ১৭ দিনে আমেরিকার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আকাশপথে সব থেকে বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে আমাদের বাহিনী। ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক, সহযোগী দেশগুলোর নাগরিক এবং আমেরিকার আফগান সহযোগীদের উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে অতুলনীয় সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব এবং দৃঢ়তার ছাপ রেখেছে আমাদের সেনাবাহিনী।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ কথা বললেও পেন্টাগনের তরফে জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি স্বীকার করে নিয়েছেন, যত মানুষকে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
সোমবার কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকারী বিমানে মার্কিন সেনা, কম্যান্ডোরা ছাড়াও আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ফিরে যান।
তালেবানদের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ৩১ আগস্টের পর আফগানিস্তানে আমেরিকা সহ কোনো বিদেশি বাহিনীর থাকা চলবে না। আমেরিকার সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি হয়েছে তাদের। শুধু সামরিক বাহিনীকে ফিরিয়ে নেওয়াই নয়, আফগানিস্তানে নিজেদের কূটনৈতিক উপস্থিতিও বন্ধ করে দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ আপাতত কাতার থেকে চালানো হবে।
যুদ্ধসরঞ্জাম ধ্বংস : ৩০ আগস্ট কাবুল ত্যাগের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জাম বিমানবন্দর এলাকায় প্রস্তুত ছিল। কাবুল ত্যাগের আগে এসব যুদ্ধসরঞ্জাম বিনষ্ট করা হয়েছে, যা আর কখনো ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি।
শেষ ব্যক্তির আফগানিস্তান ত্যাগ : আফগানিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিদায় নিয়েছে। সোমবার রাতে তারা প্রায় ২০ বছর আফগানিস্তানে অবস্থানের অবসান ঘটায়। শেষ আমেরিকান হিসেবে দেশটি থেকে সরে যান আফগানিস্তানে আমেরিকান স্থলবাহিনীর কমান্ডার ও ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত। তারাই শেষ ব্যক্তি হিসেবে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে ওঠেন।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডার বলেন, শেষ ব্যক্তি হিসেবে বিমানে ওঠেন ৮২তম এয়ারবোন ডিভিশনের কমান্ডার ও সেখানে আমার স্থলবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ক্রিস ডোনাহো।
মেরিন জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি পেন্টাগনে সাংবাদিকদের বলেন, আর তার সাথে ছিলেন রাষ্ট্রদূত রস উইলসন।
এক যুদ্ধ, চার প্রেসিডেন্ট : শেষ সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান হলো। প্রায় ২০ বছর আফগানিস্তানে অবস্থানের পর সোমবার দেশটিতে মার্কিন উপস্থিতির সমাপ্তি ঘটেছে। আর এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চারজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
জর্জ ডব্লিউ বুশ ৯/১১-এর জের ধরে ২০০১ সাল আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন।
আর বারাক ওবামা তার দুই মেয়াদের পুরোটাই যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দেশটিতে আমেরিকান সৈন্য ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তালেবানের সাথে চুক্তিও করেছেন।
আর সৈন্য প্রত্যাহারের কাজটি তদারকি করেছেন জো বাইডেন। তিনি গত দুই সপ্তাহে মার্কিনিদের ফিরিয়ে এনেছেন।
বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে এই চার প্রেসিডেন্ট সঙ্ঘাত সামাল দিয়েছেন। তবে আমেরিকান মূল্যবোধ ও স্বার্থ নিয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেও তারা পরিচালিত হয়েছেন।
সময় জার্নাল/আরইউ