যদিও জাপানে চাকুরীর অভাব নেই, কিন্তু প্রবাসী এবং যাদের জাপাানীজ ভাষাগত দক্ষতা কম তাদের জন্য জাপানে পারমানেনট জব পাওয়াটা বেশ কঠিন ব্যাপার, অবশ্য আইটি সেক্টর হলে ভিন্ন কথা। ইদানিং অবশ্য অনেক জাপানীজ কোম্পানি আমাদের মত প্রবাসীদের নিয়োগের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেই সুবাধে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীরা জাপানীজ কোম্পানিতে চাকুরীর অফার পাচ্ছে। গত কয়েকমাসে আমাকে বেশ কয়েকজন প্রবাসী ফোন করে চাকুরীর ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ চেয়েছে। তাই ভাবলাম জাপানের চাকুরীর বেসিক জিনিসগুলো ফেইসবুক এ লিখলে অনেক প্রবাসী চাকুরি প্রার্থীদের কাজে লাগতে পারে।
ভাইভা বোর্ড :
জাপানের কোম্পানি যখন কাউকে ইন্টারভিও বোর্ড এ ডাকে, তখন কিন্তু ধরে নেয়া হয় তার সিভি ওদের পছন্দ হয়েছে অর্থাৎ চাকুরীটি পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভাইভা বোর্ডে বেশীর ভাগ সময় খুব সাধারণ প্রশ্ন করে থাকে। তবে কোম্পানির প্রতি আগ্রহ, কাজ করার আগ্রহ, কাজের পরিকল্পনা এসব বিষয় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। আত্ববিশ্বাস নিয়ে ইন্টারভিও বোর্ড মোকাবেলা করুন, তাহলেই হবে।
আমাকে বেশ কয়েকজন প্রশ্ন করেছে, বেতনের ব্যাপারে কি ধরনের নেগসিয়েসশন করা উচিত। আসলে প্রতিটি বড় জাপানীজ কোম্পানির কিছু নিয়ম কানুন আছে যাকে আমরা কম্প্লাইএন্স বলি, ওখানে আসলে নিদিষ্ট করে দেয়া আছে, কার বেতন কত হবে, বছরে কত ইনক্রিমেন্ট হবে, বোনাস, বাড়ি ভাড়া, যাতায়তের খরচ নিদিষ্ট করে দেয়া আছে এবং নেগসিয়েসশন এর খুব একটা সুযোগ নেই। তবে আইটি এবং মিড লেভেলের জব এর ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। এন্ট্রি লেবেলের জব এর জন্য সাধারনত 200K~250K (undergrade, Masters), 250K~300K (Ph.D) মাসিক বেতন হয়ে থাকে, বোনাস, বাড়ি ভাড়া, যাতায়তের খরচ আলাদা হিসেব। হেলথ ইন্সিওরেন্স এবং পেন্শন, ইননকাম টেক্স এর জন্য মুল বেতন থেকে টাকা কেটে রাখবে অবশ্য হেলথ ইন্সিওরেন্স এবং পেন্শন এই দুই খাতে কোম্পানি ৫০% দিয়ে থাকে।
চাকুরীর কন্ট্রাক্ট:
ইন্টারভিও পাশ করলে আপনি পাবেন কাঙ্খিত অফার লেটার, আপনি রাজি হলে আপনাকে কোম্পানির কন্ট্রাক্ট লেটারে সাইন করতে হবে। কন্ট্রাক্ট লেটার সাধারনত কতগুলো গৎবাঁধা কন্ডিশন থাকে যা নিয়ে আসলে চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই। এসব কাগজে চোখ বন্ধ করে সাইন করা যায়।
চাকুরী চলে যাওয়া, চাকুরী ছেড়ে দেয়া :
জাপানে কোন পারমানেন্ট এম্প্লয়েী কে চাকুরী থেকে বাদ দেয়া প্রায় অসম্ভব। তবে এম্প্লয়েী চাইলেই একমাসের নোটিশ দিয়ে কোন কারন ছাড়াই চাকুরি ছেড়ে দিতে পারে। কোম্পানি যেসব কারনে চাকুরী থেকে ছাটাই করতে পারে ১। সেক্সচুয়াল হেরাসমেন্ট- এটা জাপানে জগন্য অপরাধ হিসেবে গন্য হয়ে থাকে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আচরণে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা শ্রেয়। ২। ঘুষ, চুরি অথবা আইন ভংগ করলেও চাকুরী থেকে ছাটাই করার সুযোগ থাকে। মোট কথা বড় ধরনের অপরাধ না করলে কোম্পানিগুলি এম্প্লয়েী কে ছাটাই করতে পারেনা।
ছুটি : জাপানে ইদানীং বড় কোম্পানীগুলো এম্প্লয়েীদের বছরে নিদিষ্ট সময় ছুটি নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এমনিতেই জাপানে সরকারী ছুটির পরিমান অনেক, তারপরও কোম্পানীর আইন অনু্যায়ী নিদিষ্ট সময় বাৎসরিক ছুটি নিতে হয়। এখানে বাৎসরিক ছুটির পাশাপাশি বিয়ে, আত্মীয়স্বজন এর মৃত্যু উপলক্ষে ছুটি নিদিষ্ট করা আছে। এটা আসলে অধিকার।
জাপানে চাকুরীর পরিবেশঃ এই ব্যাপারটা আমাদের প্রবাসীদের জন্য একটু কম্পপ্লিকেটেড। ভিন্ন মানসিকতা, কালচার, অভ্যস্ততা প্রায় সময়ই অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন মদ খাওয়া, শুকুরের মাংস খাওয়া ওদের কাছে স্বাভাবিক হলেও আমাদের অনেকের কাছে তা অস্বাভাবিক। তবে এসব ব্যাপারে বেশীরভাগ জাপানীজ আমাদের ব্যাপারটা জানে এবং সম্মান করে।
জাপানে কাজ করে টিম হিসেবে, অর্থাৎ আপনার পারফর্মেন্স এর মূল্যায়ন এর সময় টিম ওয়ার্ক বেশী গুরুত্ব পাবে। নতুন কিছু করতে চাইলে অবশ্যই টিম লিডারের পারমিশন নিয়ে করতে হবে সেটা যত ভাল কাজেই হউক।
জাপানীজরা ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলো কখনও অফিসে শেয়ার করে না তবে ড্রিঙ্কস পার্টিতে ওরা কথার বস্তা খুলে দেয়। অফিস সময়ে ব্যাক্তিগত ফোন, ইমেইল, এসএনএস ও ব্যবহার করে না জাপানিজরা।
জাপানে যেমন অনেক ভাল ব্যাপার আছে ঠিক তেমনি কিছু খারাপ ব্যাপারও আছে। ইজিমে, পাওয়ার হেরাসমেন্ট এর মধ্যে অন্যতম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যাকে নিয়োগ দেয়া হল, সে হয়ত সেই কাজের জন্য উপযুক্ত না অথবা কাজের প্রতি কাজের প্রতি আগ্রহ নেই, অর্থাৎ অফিস এর উদ্দেশ্য যখন সফল হয় না তখন ইজিমে শুরু করে যাতে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হয়। অনেক সময় বদ সিনিয়রা কোন কারন ছাড়াই ইজিমে করে। জাপানীজ সোসাইটি তে ইজিমে একটা বড় সমস্যা, তাই এটার শিকার হলে সিনিয়র/অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়াটা জরুরী।
একটা কথা মনে রাখা দরকার আর সেটা হলে কোন কোম্পানিই কিন্তু ছাটাই করার জন্য কাউকে নিয়োগ দেয় না। এটা গিভ এন্ড টেক এর ব্যাপার, আপনাকে বেতন দিবে কোম্পানি বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে কাজ আশা করবে। আপনি ঠিক মত কাজ করলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। জাপানীজ কোম্পানি নিয়োগ দিয়েই আপনার কাছ থেকে কিছু আশা করবে না, আপনাকে নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ শেখাবে, তারপর ধীরে ধীরে দায়িত্ব দিবে এবনং কোম্পানি আশা করবে আপনি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলেই সমস্যার শুরু হয়।
নতুন চাকুরীতে যোগদানকারীদের প্রতি রইল শুভকামনা।
লিংকন
টোকিও মার্চ ১২, ২০২১
ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে।
সময় জার্নাল/ ইম