শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে একটি রিক্সা চান ভুমিহীন হতদরিদ্র রিক্সা চালক জয়নাল আবেদীন।
রিক্সাচালক জয়নাল আবেদীন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সরলখাঁ মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আহম্মদ আলী মুন্সির ছেলে।
জানা গেছে, রিক্সার প্যাডেল ঘুড়িয়ে ৫ সদস্যের সংসারের খরচ যোগাতেন ভুমিহীন হতদরিদ্র জয়নাল আবেদীন। দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী আদুরী বেগমকে নিয়ে স্বল্প চাহিদার সংসার ভালই চলত জয়নালের। সন্তানরা মেধাবী হওয়ায় খেয়ে না খেয়ে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন জয়নাল আদুরী দম্পতি। জয়নাল রিক্সা চালাতেন আর স্ত্রী আদুরী বেগম বিড়ি বানানোর কাজ করে সন্তানদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বানানোর স্বপ্ন বুনতেন। সেই স্বপ্নের পথ অনেকটাই এগিয়ে যায় তাদের। বড় ছেলে রাসেল মিয়া পড়ছেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষে। দ্বিতীয় সন্তান আনিসুর রহমান এসএসসিতে জিপিও ৫ নিয়ে লালমনিরহাট সরকারী কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে এবং ছোট মেয়ে জ্যুথী আকতার পড়ছে স্থানীয় সরলখাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে।
কষ্ট হলেও সন্তাদের লেখাপড়ায় বাঁধা হতে ছোঁয়া লাগেনি অভাব নামক দানবের। অভাবের সাথে নিত্য লড়াই করে ঋনের টাকায় কেনা রিক্সার আয়ে সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়েছেন জয়নাল আবেদীন। কষ্টের মাঝে সন্তানদের পরীক্ষার ফলাফল জয়নাল আদারী দম্পতিসহ পুরো গ্রামবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখে। হঠাৎ তাদের সেই হাসি মলিন হয় যায় বিভিষিকার অন্ধকারে।
গত তিন মাস আগে ঋনের টাকায় কেনা ব্যাটারী চালিত রিক্সাটি বিকল হয় যায়। ব্যাটারী নষ্ট হওয়ায় চালানোর সক্ষমতা ছিল না জয়নালের। আয় বন্ধ হলেও ঋনের কিস্তি ঠিকই গুনতে হতো তাদের। উপায়ন্তর না পেয়ে বিকল রিক্সাটি ভাংড়ি হিসেবে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। ঋনের বোঝা মাথা থেকে নেমে পড়লেও সংসার আর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বন্ধ হয়ে পড়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছেলেরাও তার মায়ের সাথে স্থানীয় আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরীতে শ্রমিকের কাজ করে কোন রকম খাদ্যের যোগান ঠিক রেখেছেন। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। ছেলে মেয়েরা আর আয় করতে পারবে না। বরংচ তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হবে। এখন সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন জয়নাল আদুরী দম্পতি।
এখন সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ মেটাতে জয়নাল আবেদীন খুজছেন সেই রিক্সা। কিন্তু একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা কিনতে ৪০ হাজার টাকা দরকার। রিক্সা কেনার জন্য ঋণ করতে বিভিন্ন এনজিওতে নিস্ফল ছুটেছেন মেধাবী সন্তানদের গরিব বাবা জয়নাল। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে একটি রিক্সা দাবি করেছেন তিনি। যে রিক্সার আয়ে আবারও হাসি ফুটবে জয়নাল আদুরী দম্পতির মেধাবী সন্তানের সংসারে।
জয়নালের ছেলে রাসেল বলেন, বাবার রিক্সা বিক্রির পর আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দুই ভাই বিড়ি ফ্যাক্টরীতে কাজ করে সংসার খরচ যোগাতাম। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে আমাকে যেতে হবে। কিন্তু যাওয়ার টাকাও নেই। আর্থিক সহায়তার জন্য একাধিক স্থানে আবেদন করেছি। কোন ফল পাইনি। বাবাকে একটা রিক্সা কিনে দিলে আমাদের পড়ালেখা বন্ধ হবে না। তাই বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করেন তিনি।
জয়নাল আবেদীন বলেন, রিক্সা চালিয়ে দৈনিক ৫-৬শত টাকা আয় হতো। যা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসার চলত। এখন রিক্সা নেই, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হবে। আমার স্বপ্নটাও মরে যাবে। কেউ একটা রিক্সা কিনে দিলে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। সেটা ঋনে হলেও নিতে চান তিনি।
সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক কৃষিবিদ হযরত আলী বলেন, হতদরিদ্র জয়নাল আবেদীনকে একটি রিক্সার ব্যবস্থা করে দিলে তার মেধাবী সন্তানরা ঝড়ে পড়ত না। সহায়তা পেলে তার সন্তানরা দেশের জন্য জনশক্তিতে পরিনত হবে। তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
সময় জার্নাল/ইএইচ