বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

প্রসঙ্গ : সীতাকুণ্ডের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনা

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
প্রসঙ্গ : সীতাকুণ্ডের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনা

জসিম মাহমুদ :

অতি সম্প্রতি সীতাকুণ্ড পাহাড় থেকে দু'জন মুসলিম ছেলেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি- পালটা বিবৃতির ঢল নেমেছে। উভয় দিকের বক্তব্যে বেশ উত্তেজনামূলক ও আপত্তিকর উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও যে কোন স্তরের নেতৃবৃন্দ কিংবা জনপ্রতিনিধি এ বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব। অনেকেই আছেন সমাজসেবার নামে যারা ফেবুর পাতা গরম করেন। কেউ কেউতো চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তাদের লালিত দর্শনের বিপরীতে মিশে যান আর শতবর্ষের গেঞ্জী গায়ে চাপায়ে বাহবা কুড়াতে চান কিংবা কার ঘরে চা খেয়েছে, কে উনাদের বাড়ীতে এসেছে এ নিয়ে ফেবুর পাতায় প্রতিদিন কয়েকবার নিজেকে জাহির করেন। এসব সমাজসেবী কিংবা চেতনাধারীরাও ' নীরবতা শ্রেয় নীতি' অবলম্বন করেছেন।

ভুলে গেলে চলবেনা যে --
যদি হই মোরা অন্ধ,
হবে কি প্রলয় বন্ধ?

তাই সকল মহলের ত্বরিত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আমার ধারণা।
তবে সকলের জ্ঞাতার্থে কিছু বিষয় জানানো প্রয়োজন মনে করছি।

সর্বাগ্রে আমিও ছোট ভাই সাইফুরের সাথে ঐক্যমত পোষন করে বলতে চাই, সীতাকুণ্ডের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সবসময়ই ভালো ছিলো এবং ভালো থাকবে।

তবে যেহেতু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে এ ঘটনার জন্ম তাই ধর্মীয় কিছু দিক বিবেচনায় নেয়া বাঞ্চনীয়।
ইসলাম ধর্মমতে সমগ্র পৃথিবী মুসলিমের জন্য জায়নামাজ আর নামাজের আগে আযান দেয়া ধর্মীয় বিধির আওতাভুক্ত। সে বিবেচনায় দুটি মুসলিম ছেলে আযান দিয়ে নামাজ আদায় করে থাকলে ধর্মীয় বিধানই রক্ষা করেছে। তবে কোন অবস্থায় অন্য ধর্মের কোন স্থানের সামান্য বিঘ্ন ঘটানো যাবেনা যা ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাবস্থায় পরিতাজ্য। এটি হয়ে থাকলে অবশ্যই অপরাধ এবং ইসলামের দৃষ্টিতেও দোষণীয়। ভুলে গেলে চলবেনা যে সারা দুনিয়ায় ইসলাম অন্যের মন জয় করেই বিজয় লাভ করেছে। কোনপ্রকার হঠকারিতা এর বিস্তারে ঠিকই বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

সীতাকুণ্ড হিন্দুদের তীর্থস্থান। এটি নিয়ে এখানকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলিমেরা খুবই গর্বিত। এজন্য দেশে- বিদেশে সীতাকুণ্ডের আপামর জনসাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বেশ সম্মান পেয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে সীতাকুণ্ডের সমগ্র পাহাড় এ বিশেষ ধর্মাবলম্বীর আর পাহাড়ে যেতে তিলক পরিধানের যে হাস্যকর দাবী শোনা যাচ্ছে তা শুধু অনভিপ্রেত নয়, অনাকাঙ্ক্ষিতও।

সীতাকুণ্ডে সর্ব মহলে চাওর রয়েছে যে, বিশেষ ধর্মীয় এজেণ্টা বাস্তবায়নের জন্য পূর্বেকার ইউ,এন,ও কে বিশেষ মহলের চাপে সীতাকুণ্ডে পোস্টিং দেয়া হয়েছিলো এবং উনার অনেক কথা- কর্ম নিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অনেককেই উস্মা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
সীতাকুণ্ড বরাবরই শান্তির জনপদ। কিন্তু তাই বলে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার অপচেষ্টা যে অতীতে অনেকবার হয়েছে তা অস্বীকারের উপায় নাই। নিম্নের ঘটনাবলী তারই সাক্ষ্য দেয়।
★ সীতাকুণ্ড মাদ্রাসা ভবন তিন তিনবার কারা পোড়ায়েছে, কেন পোড়ানো হয়েছে এটি সবার জানা।
★ ১৯৭৩ সালে ব্যক্তিগত ঘটনাকে রাঙায়ে এক সকালেই গোলাবাড়ীয়া- পূর্ব ভাটেরখীলের অনেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটিকে দাদা দেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কাছে এমনভাবে পৌঁছানো হয়েছে যে, সীতাকুণ্ডের তখনকার সংসদ সদস্য জনাব এম,আর ছিদ্দিকীর মতো লোকও সুরাহা করতে সাহস করেন নি। তখনকার শ্রমমন্ত্রী জনাব নুর আহমদ ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ না করলে ঘটনা কতদুর ঘটাতো আল্লাহ সোবহানাতালাই জানেন।
★ ১৯৮৩ সালে প্রেমতলায় অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু মুসলিম যুবকের দুর্গা প্রতীমা ভাঙার অপচেষ্টা সত্যি দুঃখজনক। তবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও ঘটনাস্থল থেকে সবুকতগীন ও জামালউল্লাকে পুলিশ গ্রপ্তার করে। এ দু'জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চালান দিতে সে রাতে তখনকার হিন্দু নেতৃবৃন্দের অপতৎপরতা আর মুসলিম নেতাদের রহস্যজনক নীরবতা আমাকে যুগপৎ আহত ও বিস্মিত করেছিলো। আমার ঘনিষ্টতম বন্ধু বিষ্ণু চরণ দাশের তালত ভাই রতন সিংহ সারারাত আমাকে সাহায্য না করলে এ দু'জনকে ঠিকই জেলের ঘানি টানতে হতো।
★ বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ড উপজেলার কোন কোন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তা সবার জন্য শ্লাঘার, লজ্জার। অন্যদিকে তিলকে তাল বানাতে গিয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার 'লজ্জা' বইতে সীতাকুণ্ডকে উপস্থাপন করে সারা দুনিয়ায় একে হেয় করেছে। আর অনেকেই এ বইকে হটকেক হিসাবে ব্যবহার করে হীনস্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছে।
★ গত কয়েক বছর আগে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে গোলাবাড়ীয়া হয়রত ওমর ফারুক ( রাঃ) মাদ্রাসার ছাত্র- শিক্ষকের পিকনিককে কেন্দ্র করে তাদেরকে বিশেষ তকমা পরায়ে গেপ্তারের অপচেষ্টা খুবই অনভিপ্রেত।
ইতিহাসের এ ঘটনাবলী আমাদেরকে ঘটনার নির্মোহ বিশ্লষণ করতে সাহায্য করবে। আর দেখতে হবে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত না হয়। আর এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার স্বনামধন্য অধ্যাপক এ,কে,ফজলুল হক স্যারের কথাটি বেশ প্রণিধানযোগ্য

" জঙ্গীবাদের বিষয়টি আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের কাছে আর মৌলবাদের বিষয়টি পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে ফেরী করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে আমরা অনেকেই তৎপর"।

* ঘটনার সমাধানের জন্য ইউ,এন,ও এর নেতৃত্বে সকল মহলের বৈঠক হতে পারে।

* আটককৃত দু'জনকে ত্বরিত মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। যা ঘটনার শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তিতে সহায়ক হবে।

* একে- অন্যের ধর্মীয় বিধি-বিধান, আচার অনুষ্ঠানের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

* যে কোন ঘটনাকে বাড়তে না দিয়ে ত্বরিত সমাধান করতে হবে।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল