বুধবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১
"অন্দরমহল"
-----------------
১.
ষ্টেশনে পা রেখে বেশ হতাশ হল আনিস, যতটা ভেবেছিল তার থেকেও প্রত্যন্ত জায়গাটা। ভাঙা বিধ্বস্ত একটা সিমেন্টের বোর্ডে "রূপগঞ্জ" লেখা, যার অস্তিত্ব অনেক খেয়াল করলেই বোঝা যায়। একটু হেঁটে সামনে এগোতেই থকথকে কাদায় ঢাকা উঁচুনিচু মাটির রাস্তা চোখে পড়ল। এমন অজপাড়াগায়ে আর কখনও আসা হয়নি, মস্তবড়ো বোকামি হয়ে গেল নাতো! এরা বলেছিল ষ্টেশনে লোক পাঠাবে। সে ডানে বায়ে তাকিয়ে ভাঙাচোরা টুল টায় বসে পড়ল, তেমন কাউকে চোখে পড়ছেনা। দু'একজন কুলি গোছের লোক হাটাচলা করছে শুধু। চিন্তিত মুখে সিগারেট ধরালো সে, টাকার অংকটা শুনে দুম করে রাজি হয়ে গেল, রাজীব অবশ্য বলেছিল 'জায়গাটা একদমই গ্রাম, তবে থাকতে অসুবিধা হবেনা।' রাজীব দায়িত্ববান, না বুঝেশুনে বলেনি নিশ্চয়ই! এত টেনশন না নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা তো করাই যায়!
মোটা কালো বিশালদেহী একজন লোক আচমকা কাছে এসে দাড়ালো, পায়ের কাছে রাখা ব্যাগ দুইটা কাঁধে নিয়ে বলল
"আসেন!" আনিস খানিকটা হকচকিয়ে গেল, লোকটার পেছন পেছন হেঁটে রাস্তা অবধি পৌঁছাতেই একটা ভ্যানগাড়ি চোখে পড়ল। সে বিশালদেহী লোকটার দিকে তাকালো, "ভ্যানে করে যাব নাকি! ইন্টেরেস্টিং তো! আপনার নাম কি ভাই, গাফফার সিং ?
লোকটা তাকিয়ে রইল কয়েক মূহুর্ত, "আমার নাম মোহাম্মদ কোরবান।"
আনিস শিউরে উঠল, কোরবানের একটা চোখ পুরোপুরি সাদা, মৃত মাছের মত। এতক্ষণ বিষয়টা চোখে পড়েনি। "চোখে কি হয়েছে আপনার?"
"ছোটবেলায় খাজুর কাঁটায় খোঁচা লাগছিল, তারপর নষ্ট হইয়া গেছে।"
এমন প্রত্যন্ত জায়গায় চিকিৎসার কথা জিজ্ঞেস করাটাও বোকামি। সে চুপ করে রইল। বাড়ীর প্রধান দরজায় গাড়ী দাঁড়াতেই ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেল আনিস। রবীন্দ্রনাথের লেখা অনেক গল্পে এমন পুরনো রাজবাড়ীর বর্ননা পড়েছে সে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল দীর্ঘক্ষণ। কি অসাধারণ! দীর্ঘদিনের অপরিচর্যায় জৌলুস হারালেও, অদ্ভুত এক সৌন্দর্য্য আর দাম্ভিক অভিব্যক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাড়ীটি।
বৈঠকখানায় বসে আছে প্রায় কুড়ি মিনিট। এরমধ্যে কারুকাজ করা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢাকা বিশাল রেকাবিতে করে নাশতা দিয়ে গেছে একজন। আনিস গুনে দেখল বারোটা বাটিতে বারো পদের খাবার । তার কাছে সকালের নাশতা মানেই রুটি বা পরোটা, সাথে ভাজি। সে তাকিয়ে রইল এই বিশাল আয়োজনের দিকে, ফলই দিয়েছে চার রকমের; কয়েক পদের পিঠা, দুরকমের শরবত, পুরাই বাদশাহী কারবার!
খাওয়ার পর্বের শেষ দিকে বয়স্ক মতো একজন ভদ্রলোক পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন, "সালাম ডাক্তার সাহেব! আসতে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হইছে আপনার! এখানের যাতায়াত ব্যবস্থা মোটেই ভালনা।"
অজান্তেই উঠে দাড়িয়ে গেল আনিস, আনুমানিক ছ'ফিট লম্বা ভদ্রলোকের মুখে ধবধবে সাদা দাড়ি, পরনে পরিচ্ছন্ন সাদা পাঞ্জাবি পাজামা, হাতে কারুকাজ করা বেশ দামী ছড়ি, গা জুড়ে স্নিগ্ধ একটা সুগন্ধ, সম্ভবত চন্দনের। দারুণ আভিজাত্যের এই বেশ মুগ্ধ করল তাকে। "সালাম, তেমন কোন কষ্ট হয়নি আসতে, রাস্তায় একটু কাদা ছিল, বর্ষাকাল, কাদা তো হবেই! আপনি নিশ্চয়ই সৈয়দ সাহেব!"
স্মিত হেসে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন তিনি, "রাজীব এই গ্রামের খান বাড়ীর ছেলে। তার বাবা রশীদ খান আমার বাল্যবন্ধু। সে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বলছে আপনাকে। আমার দুইটা চোখই অকেজো প্রায় তিন বছর ধরে, বলতে গেলে কিছুই দেখিনা। রাজীব দেইখা বলল ছানি পড়ছে দুই চোখে! মেরুদন্ডের ব্যথার কারনে ট্রেন বা বাসে চড়তে পারিনা। একারণে শহরে গিয়ে চিকিৎসাও করাতে পারছিনা। রাজীব এবার ছুটিতে যখন বাড়ী আসল, আপনার কথা বলল। বলল, আপনাদের ব্যাজের যতজন ছাত্র চোখের ডাক্তার হইছে, সবার মধ্যে আপনার নাকি হাত যশ ভাল। নতুন হলেও নাকি অনেক নাম ডাক । ও'ই এই বুদ্ধিটা দিল। আপনার উছিলায় যদি আল্লাহ পাক আবার আমাকে আগের মত চোখে দেখার তৌফিক দেন!"
মানুষটাকে ভাল লাগল আনিসের, সাধারণত এমন সম্ভ্রান্ত বাড়ীর লোকদের একটা চাপা দম্ভ থাকে, কিন্তু সৈয়দ সাহেবের কথা বলার মধ্যে বিনয় আছে, যা মুগ্ধ করে। সে আশ্বস্ত করল, "নিশ্চয়ই! আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।"
"আপনার থাকার ব্যবস্থা দোতলায় করা হয়েছে, যেহেতু বর্ষাকাল, পুরোনো বাড়ী, সাপখোপের উপদ্রব হতে পারে। আপনারা শহুরে মানুষ, ভয় পাবেন। তাই দক্ষিনে আমার বাবার ঘরটায় আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উনি মারা যাবার পর থেকে তালাবন্ধ করে রাখা, মাঝেমধ্যে খুলে কুরবান পরিষ্কার করে, ওখানে কাউকে থাকতে অনুমতি দেয়া হয় নাই কখনও। আপনি সম্মানিত মানুষ, এই সম্মান আপনি পেতেই পারেন!"
খুব সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা আনিস এতটা মূল্যায়ন, আন্তরিকতায় আবেগ আপ্লুত হল, "একটা অনুরোধ করতে চাই সৈয়দ সাহেব, আমি আপনার ছেলের মতো, আমাকে প্লিজ তুমি করে বলবেন। "
কাছে এগিয়ে হাত ধরলেন তিনি, "আমার সত্যিই প্রায় আপনার বয়সী একটা ছেলে আছে। আপনি বললে অবশ্যই তুমি করে বলব, শুকরিয়া!"
২.
গত কয়েকদিনে বেশ কিছু বিষয় নজরে এলো যা রীতিমতো হতবাক করল তাকে, এবাড়ীর একমাত্র ছেলে আরশাদ, মানসিক ভাবে অসুস্থ। গতকাল সকালে তাকে উঠোনে নামিয়ে বাচ্চাদের মত গোসল করাচ্ছিল কুরবান, এত মন খারাপ হল দেখে! প্রায় তার বয়সী একটা ছেলে কেমন হাত পা ছুড়ে বাচ্চাদের মত চিৎকার করছিল, চোখে সাবান ঢুকতেই কেমন অসহায় ভাবে কাঁদছিল! আজ খুব ভোরে পুবদিকের কোন একটা ঘর থেকে কারও চাপাস্বরে কান্নার আওয়াজ আসছিল, প্রচন্ড কৌতুহলে সামনে এগোতেই কুরবান তার বিশাল দেহ নিয়ে সামনে দাড়ালো। "পুব দিকে অন্দর মহল, ওদিকে যাবেননা, নিয়ম নাই।"
আনিস অবাক হল, "কে ওভাবে কাতরাচ্ছে! যেই হোক তার যে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, এটা তো নিশ্চিত। না যেতে পারি, কিন্তু জানতে তো পারি উনি কে!"
"উনি বড় বেগম, দুই বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। কমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ।"
আনিস হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল, "হঠ্যাৎ কিভাবে এমন হলো! চিকিৎসা করানো হয়নি? কি হয়েছিল?"
"খারাপ বাতাস লাগছিলো, তারপর থেইকা এমন। কবিরাজ বলছে ঠিক হইতে সময় লাগব, ওনার দেয়া পুরানা ঘি আর কালিজিরার তেল দিয়া দুই বেলা মালিশ করা হয়। শুইয়া থাকতে থাকতে পিঠে একটু ঘা হইছে, অমাবস্যা পূর্ণিমায় সেই ঘায়ে ব্যাদনা বাড়ে, অখন পূর্ণিমার যোগ।"
আনিস পুবদিকে চোখ বোলালো, অন্দরমহলটাকে দেয়াল তুলে আলাদা করা হয়েছে, মাঝখানে একটা দরজা রাখা হয়েছে। আনিস সেই খোলা দরজায় তাকালো।
"এই দরজা বন্ধই থাকে সবসময়, বড় সাব এখন অন্দরমহলে আছেন তাই খোলা।" কোরবান থপথপ করে সিঁড়ি ভেংগে নিচে নেমে গেল।
নিজের ঘরে ফিরে কিছুক্ষণ গুম হয়ে রইল আনিস। কি অদ্ভুত এদের বোধ, চিন্তাধারা! ছেলেটাকে তো অন্তত চিকিৎসা করাতে পারে! এবাড়ীর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবেও তো উচিৎ ছিল। এব্যাপারে কি সৈয়দ সাহেবের সাথে কথা বলবে! বলাটা কি উচিৎ হবে! নাকি সে একটু বেশীই ভাবছে! বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগতেই ধাতস্থ হল, হাত বাড়িয়ে জানালা টানতেই থমকে গেল সে, চোখ আটকে গেল পুবের ঝুল বারান্দায়। অনবরত আসা বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছে সে, তবুও একমূহুর্তের জন্য চোখ সরাতে পারছেনা।শরীর মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে অদ্ভুত এক মুগ্ধতায়। দরজায় আওয়াজ হতেই কেঁপে উঠল খানিকটা। কুরবানের হাতে দুপুরের খাবার। দরজা থেকে সরে দাড়ালো সে। টেবিলে খাবার সাজিয়ে কুরবান ফিরে যাচ্ছিল। পিছু ডাকল সে, "আচ্ছা, বারান্দায় অই মেয়েটি কে? এবাড়ীর কেউ?"
কুরবানের মুখ অস্বাভাবিক রকম গম্ভীর হল। আনিস বুঝতে পারল প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি, খুব স্বাভাবিক একটা কৌতুহল থেকে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে, কিন্তু এবাড়ীর রীতি অনুযায়ী এটা অনধিকার চর্চা, যেটা তার বোঝা উচিৎ ছিল। নিজের উপর দারুণ বিরক্ত হয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হল আনিস।
"উনি ছোট বেগম। ছোট সাহেব মানে আরশাদ বাবার স্ত্রী।"
গলায় ভাত আটকে প্রায় শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, কোনভাবে নিজেকে সামলে সে তাকিয়ে রইল কুরবানের দিকে। "এসব কি বলতেছ!"
"আপনি জ্ঞানী লোক, বড়সাবের চিকিৎসা করতে আসছেন। চিকিৎসা কইরা টাকা নিয়া চলে যাবেন। অন্য বিষয়ে মাথা দিয়েন না, বড়সাব এসব পছন্দ করেন না, জানতে পারলে গোস্বা করবেন।"
কুরবান চলে যাবার পরও জড় পদার্থের মত স্থির হয়ে বসে রইল আনিস। "আরশাদ বাবার স্ত্রী" কথাটা ভাঙা রেকর্ডের মত মাথায় আটকে গেছে। খাওয়া শেষ করা হলনা আর!
দুপুরের খাবার খেয়ে একটু শোবার অভ্যেস টা পুরানো তার। তন্দ্রাচ্ছন্ন হতেই কাঁচের চুড়ির আওয়াজ এল কানে। বারান্দার মেয়েটি! কি অদ্ভুত মায়া চোখে! বৃষ্টির ছাটে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে খোলা চুল গুলোতে, মুক্তদানার মত বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ভিজিয়ে দিয়েছে গাল, চিবুক, গাঢ় নীল রঙের আঁচল গায়ে লেপ্টে ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে সন্তর্পণে ঢেকে রাখা আদিম সৌন্দর্য! আনিস চোখ খুলল ধীরে ধীরে, তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে প্রচন্ডভাবে, অস্থিরতা নিয়ে উঠে বসল। কি ঘটছে এসব! গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, পানি খেল তৃষার্তের মত। কেন এত অস্থির লাগছে! অদ্ভুত ঘোর নিয়ে সে বসে রইল সারাটা দুপুর, বিকেল। সন্ধ্যার আজান হচ্ছে, কুরবান কাচের ঢাকনা দেয়া মোমবাতি নিয়ে ঘরে ঢুকল, আলোর রেশ পড়ল তার মুখে । "শরীর খারাপ নাকি ডাক্তারসাব! এইভাবে ঘামতেছেন ক্যান!"
অপ্রকৃতিস্থের মত তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, তীব্র এক ঘোরে প্রচন্ডভাবে আচ্ছন্ন সে। কুরবান চলে যাবার পরও সে একই ভাবে বসে রইল দীর্ঘক্ষণ। কিছুটা অভাব, টানাপোড়েন ছাড়া জীবনে জটিলতা বলতে তেমন কিছুই ছিলনা। পেশাগত প্রতিষ্ঠা আর স্বচ্ছলতায় জীবনযাপনই কাংখিত ছিল এপর্যন্ত। যাপিত জীবনে তেমন কোন জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কোন এক অশুভ সংকেত আজ অনবরত বাজছে বুকের মধ্যে, অদৃশ্য যেন কেউ বলছে, 'পালা এখান থেকে, পালা!' অবচেতন মনে অনিবার্য বিপদের ঘন্টা বাজছে ক্রমাগত।
৩.
অনেক ভেবে আজ রাতে কথা বলে ফেলাই সংগত মনে করল আনিস, হাত উলটে ঘড়ি দেখল, সাড়ে ন'টা। সৈয়দ সাহেব ঘরে ঢোকামাত্র উঠে দাড়ালো সে, "মাফ করবেন, কিছু জরুরী বিষয়ে আলোচনা করতে রাতে বিরক্ত করলাম আপনাকে! "
"এইভাবে লজ্জা দেবেন না ডাক্তার সাহেব! অবশ্যই ডাকবেন আপনি! বসেন, এবার বলেন। "
"আপনার চোখের অপারেশনটা দ্রুত করে ফেলতে চাই, যদি আপনার আপত্তি না থাকে।"
অবাক হলেও নিজেকে সামলে গম্ভীর হলেন সৈয়দ সাহেব, "আপনার কষ্ট হইতেছে এখানে, বুঝতে পারতেছি। হওয়াটা স্বাভাবিক, অজপাড়াগা, বিদ্যুৎ নাই, কথা বলার মানুষ নাই! হাঁপায়ে উঠছেন।"
বিব্রত বোধ করল আনিস, "সেসব কিছু না, আসলে বাবার শরীরটা ভাল না৷ তার জরুরী একটা অপারেশনও করাতে হবে। আপনাকে বলতে সংকোচ নেই, টাকার জন্য আটকে আছে সব। তাই যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি, ততই মংগল"
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উঠে দাঁড়ালেন তিনি, তাহলে আর কিছু বলার নাই, আপনার বাবা সৌভাগ্যবান! এমন সন্তানকে তিনি এই দুনিয়ায় এনেছেন। অপারেশনের ব্যবস্থা করেন, চিন্তা করবেন না, টাকা রেডিই আছে।"
প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, বাতাসের দমকে আলোটা কাঁপছে। আনিস উঠে বসল। এখানে দশটা মানেই গভীর রাত, একটানা বৃষ্টি আর থেকে থেকে বজ্রপাতের আওয়াজ! কেমন যেন গা ছমছম একটা অনুভূতি হচ্ছে। এবাড়ীতে কোন মানুষ এখন জেগে নেই সম্ভবত। সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে দিয়াশলাই জ্বালাতেই দরজায় শব্দ হল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দরজার দিকে, মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল, মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছে সে। হাত উলটে আরেকবার ঘড়ি দেখল আনিস। বেশ কিছুক্ষণ ইতস্তত করে দরজার ছিটকানিতে হাত রাখল, আবছা আলোয় দাড়ানো ছায়ামূর্তির আঁচল উড়ছে বাতাসে, তার হাতের মোমবাতিটার আলো কাঁপছে অনবরত। হেলুসিনেশন সম্পর্কে তার ধারণা খারাপ না, মস্তিষ্কে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করা কোন বিষয় বা ভাবনা কে একটা পর্যায়ে মানুষ বাস্তবতায় নিয়ে আসে, বারবার একই বিষয়টি সে চোখের সামনে দেখতে থাকে, এটা মস্তিস্কের অদ্ভুত একটা খেলা। তবুও মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে, ক্রমাগত হাঁটুর কম্পনে পায়ের জোর কমছে, চেয়ারের হাতল ধরে টাল সামলালো কোনমতে সে।
ছায়ামূর্তি এবার এগিয়ে এলো "মাফ করবেন, এত রাতে বিরক্ত করতেছি আপনাকে। আমার শ্বাশুড়ি খুব কষ্ট পাচ্ছেন, ছটফট করছেন যন্ত্রনায়। মেহেরবানী করে যদি একবার আমার সাথে আসতেন! একটু দেখে দিতেন। কিছু না হোক অন্তত উনি মনের শান্তি টুকু পেতেন।"
আনিস পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল, এই অনিবার্য বিপদে পা দেয়ার কোন মানেই হয়না। ব্যাপার টা যেন বুঝতে পেরেই ঘুরে দাড়ালো জোহরা, "ভয় পাচ্ছেন! সৈয়দ সাহেব ঘুমোচ্ছেন আর কুরবান মাতাল হয়ে পুকুর ঘাটের ছাপড়া ঘরটায় পড়ে আছে। আজ পূর্ণিমা, প্রতি পূর্ণিমায় কুরবান মাতাল হয়ে পুকুর ঘাটে কাঁদে। কারণ এমন এক পূর্ণিমাতেই একমাত্র মেয়েটাকে হারিয়েছেন উনি। এখনো দাড়িয়ে থাকবেন?"
আনিস ধাতস্থ হলো, মানবিকতা জলাঞ্জলির গুণটা রপ্ত হয়নি এখনো। সাবধানে পা ফেলে সামনের ছায়া অনুসরণ করতে লাগল, ভয়ংকর এক শংকায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে কপালে। তবুও কিছু দায় এড়ানো যায়না, বিবেক নামক শব্দটা সাংঘাতিক জটিলতা সৃষ্টি করে সবসময়, মানুষ হয়ে জন্মানোর সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হল এটা। একদম শেষের ঘরটায় গিয়ে থামল তারা। পুরানো আমলের একটা খাটে শীর্ণ শরীরের মানুষটার মুখটা যন্ত্রণায় বিকৃত হচ্ছে ক্রমাগত, কিছু একটা বলছে সে, বোঝা যাচ্ছেনা ঠিক, জড়িয়ে যাচ্ছে কথা গুলো। আনিস মেয়েটির দিকে তাকালো এবার, "আমি চোখের ডাক্তার, এবিষয়ে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই! ওনার বিষয়টা সিরিয়াস, এক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি বলুন?"
জোহরার চোখে আকুতি, "কিছু একটা করেন! আম্মা খুব কষ্ট পাইতেছে! আল্লাহর দোহাই আপনার!"
আনিস তাকিয়ে রইল, চোখের পানিতে মেয়েটার কাজল লেপ্টে গেছে, কারো চোখ এত সুন্দর হয়! চোখ ফিরিয়ে নিল সে, "আমি একটা ইনজেকশন দিতে পারি, তাতে ব্যথা কমবে আপাতত। এজন্য আমার ঘরে যেতে হবে, ব্যাগে আছে ইনজেকশনটা। আনিস দ্রুত বের হয়ে গেল।
রাত একটার দিকে চারদিকে শুনশান নিরবতা নেমে এলো, ঝড় থেমে গেছে। একটানা ব্যাঙের আওয়াজ আসছে পাশের ঝোঁপ থেকে। ইনজেকশনের প্রভাবে রোগী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মেয়েটি থেকে থেকে আতংকিত চোখে তাকাচ্ছে।
"ভয় নেই, উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। রাতে আর জাগবেন না আশা করি। আমি আসি এখন" আনিস উঠে দাড়ালো, এভাবে এখানে বসে থাকা মোটেই নিরাপদ নয়! অঘটন ঘটতে পারে যে কোন সময়! কেউ দেখে ফেলা মানে মারাত্মক ভাবে বিপদে পড়া,কোন ভাবেই এটা হতে দেবেনা সে!
দৌড়ে হাত ধরল জোহরা, আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা নেই আমার! আম্মা কতদিন বাদে যে একটু শান্তিতে ঘুমাইতেছে! কত বড় একটা কাজ করলেন আপনি নিজেও জানেন না!"
আনিস মৃদ্যু হাসল, "কিছুই করিনি আমি, ওনার উন্নত চিকিৎসা জরুরী, খুব জরুরী! নয়তো.....! আচ্ছা আসি।"
৪.
বেশ ভালভাবেই চোখের অপারেশন হয়ে গেল, আনিস খুব যত্ন করে নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করেছে সব কিছু। বেশ বয়স হলেও শারিরীক গঠনে এখনো অনেক শক্ত সৈয়দ সাহেব, চোখে সাদা ব্যান্ডেজ নিয়ে সামনের আরাম কেদারায় শুয়ে অপেক্ষা করেন তিনি, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে আবার এই দুনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করার বড় ইচ্ছা তার!
ঘোরাঘুরি আর বইপড়া ছাড়া করার তেমন কিছুই নেই আনিসের। সাথে করে আনা বইগুলোও পড়া শেষ। এবাড়ীর পেছন দিকটায় অনেক বড় বাগান, বাগান না বলে জঙ্গল বললে ঠিক হয়। অবাধ্য ভাবে বেড়ে ওঠা ঘন ঘন গাছগুলো লতাপাতা গুল্মে ঢেকে আছে, কেমন রহস্যময় লাগে! কাল ঢুকে ছিল অল্প, সাহস হয়নি আর। সাপ খোপ থাকাটা অসম্ভব নয়। কোরবান অবশ্য বলেছে 'সাপ নাই, তয় চিনা জোঁক আছে! প্যান্টের মধ্যে দিয়া হাইটা হাইটা সোজা উপরে উইঠা যাইব, টেরও পাইবেন না! পেছন দিয়া সোজা শরীরে চালান হইয়া যাইব।' সে কি রসিকতা করেছে! মুখ দেখে অবশ্য মনে হয়নি, বলার সময় অনেক গম্ভীর মুখ ছিল তার। বাগানটার সামনে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইল অনেক্ষণ আনিস, হঠ্যাৎ মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে এলো, গুণগুণ করে কেউ গান গাইছে। সম্ভবত নজরুলের গান! মন্ত্রমুগ্ধের মত গান শুনল কিছুক্ষণ, তারপর পেছন ঘুরে চট করে উপরে তাকালো, একটানা একটা বারান্দা আছে যেটা অন্দরমহল সংলগ্ন। কেউ নেই সেখানে, কিন্তু এই কণ্ঠ কার বুঝতে সমস্যা হলো না একটুও। মাথার মধ্যে গানের দু'লাইন ঢুকে গেছে, অনবরত বাজছে -- "সে চলে গেছে বলে কিগো, স্মৃতিও তার যায় ভোলা!" পালানো দরকার এখান থেকে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
গত দু'রাত সে মনে মনে অপেক্ষা করেছে, প্রচন্ড ভাবে চেয়েছে মেয়েটি আসুক। অস্থির ভাবে পায়চারী করেছে অন্দরমহলের সামনে, সে জানে খুব অন্যায় এটা, তবুও আচরণে কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না তার! এমন কখনও হয়নি এর আগে, অনেক ঠান্ডা মেজাজের ধীরস্থির মানুষ সে! ফালতু লোকের মত যা করছে, এসব তার সাথে একেবারেই যায়না। ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে সে নিজেই। ভাবতে ভাবতে সিঁড়ির গোড়ায় এসেই ধাক্কা খেলো, মেয়েটি বড়সড় একটা বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই খুব স্বাভাবিক গলায় বলল-- 'আসেন, অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন্য।'
বুকটা ধক করে উঠলো, সেটা সম্পূর্ণ গোপন করে আনিস সরাসরি চোখের দিকে তাকালো 'আপনি কি চান, বলেন তো?'
জোহরা বেশ সহজ ভাবে হাত থেকে বালতি রাখলো 'একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে, উত্তর দেননি।'
সঙ্গে সঙ্গে আনিসের মনে পড়ল গতরাতের কথা। প্রায় ঘুমিয়ে ই পড়েছিল সে! দরজায় খটখট আওয়াজে ঘুম চোখে দরজা খুলে চমকে গিয়েছিল! কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলেছিল -- এইটা একটা ধাঁধা। মেহেরবানি করে অর্থ বলবেন আমারে? আনিস হতভম্ব হয়ে কাগজটা হাতে নিতেই সে চলে গেল ঝট করে, কিছু বলবার সুযোগও দেয়নি! স্বল্প আলোতে কাগজটা খুলে ঝাপসা লাগছিল লেখাগুলো, ভেবেছিল সকালে উঠে পড়বে। কিন্তু সকাল বেলা বেমালুম ভুলে গেল সে! ভাঁজ করা ছোট্ট চিরকুট টা টেবিলেই পড়ে আছে নিশ্চয়ই! আনিস সতর্ক হল, এসবের প্রশ্রয় দেয়া মানেই বিপদ বাড়ানো! তাই সে গম্ভীর চোখে তাকালো--- 'আপনার সাথে আমার রসিকতার সম্পর্ক নয়, আর এসব আমি পছন্দ করিনা। আর আপনার ধাঁধার উত্তর দিতে বাধ্যও নই আমি।'
'কিন্তু ধাঁধাটা আপনার বুঝতে পারা খুব জরুরী, একটু চেষ্টা করেন না! আপনার তো অনেক জ্ঞান! হাত জোর করি!'
আনিস সাংঘাতিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, বাইরে চোখ পড়তেই দেখল কোরবান এদিকে আসছে, কথা বাড়ালো না তাই, সিঁড়ি ভেঙে দ্রুত উপরে উঠে এলো। চেয়ারে বসে সামনের কাগজটা টেনে নিল সে। গোটা গোটা অক্ষরে চার লাইনের একটা কবিতা মত, হাতের লেখা সুন্দর মেয়েটির!
"দূরের গায়ে জংলা ধারে ফুটল যখন একটি ফুল,
দস্যু ডাকাত বিধল তারে, তীরের নাম তিন কবুল।
অমাবস্যায় আসলো ভ্রমর, ভাঙল ফুলের নরম ভাঁজ,
আবাদ হল ভোমরার বিষ, ফুল শুকালো
বিষম লাজ।"
সে আরো কয়েকবার চোখ বুলালো কিন্তু আগামাথা কিছুই বুঝল না। কি বোঝানো হয়েছে এই চার লাইনে! সকাল গড়িয়ে বেলা হল, একটা লাইনেরও কূলকিনারা করতে পারল না সে। পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে গেছে, শুধু তিন কবুল কথাটার অর্থ বুঝতে পারছে, সম্ভবত বিয়ে বোঝানো হয়েছে। ফুল, ভোমরা রুপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এটুকু বোঝা যাচ্ছে। উঠে দাড়ালো আনিস, মাথার ভেতর ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে, একটা কথাই শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার, এই ধাঁধার উত্তর জানা কেন জরুরী হবে তার জন্য! এর সাথে তার কি সম্পর্ক! সাংঘাতিক ক্লান্ত বোধ করছে সে।
দুপুরের খাবার নিয়ে এলো কোরবান, যত্ন করে খাবার বেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ, মাথা তুলল আনিস, "কিছু বলতে চাও কোরবান? "
অকারণে সে কাশল দুবার, "বড় সাবের চোখ খুলবেন কবে, এটা জানতে চাই ?"
"এমনি, কাল খুললে পড়শু যেতে পারবেন, ভ্যানওয়ালারে বইলা ব্যবস্থা করে রাখতে হইব, তারে আগে বইলা না রাখলে সময়মত পাওয়া যায়না।"
আনিস খাওয়া বন্ধ করে কোরবানের দিকে তাকালো, লোকটা চাচ্ছেনা সে এখানে থাকুক। কিন্তু কেন! সে কি কিছু আঁচ করেছে! সাংঘাতিক অপমানিত লাগছে নিজের কাছে। "হ্যা পড়শু চলে যাব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নাও।" উঠে দাড়ালো আনিস, রুচি নষ্ট হয়ে গেছে খাওয়ার।
কোরবান চলে গেলে দরজা আটকিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল, পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজটা মেলে ধরল চোখের সামনে, চারটা লাইন এত দুর্বোধ্য কেন! তার মেধা খারাপ না, তাও এত চেষ্টার পরও বুঝতে পারছেনা। মনের মধ্যে খচখচ করছে সারাক্ষণ। ভাবতে ভাবতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হল একসময়, "লাল কাঁচের চুড়ি পড়া একটা হাত মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার, সেই হাতের উপর হাত রাখতেই সে খিলখিল করে হেসে উঠল, ফিসফিস করে বলল, 'এমন দুষ্টুমি করেন ক্যান!' আনিস নরম হাতে কোমর জড়ালো, মুখ ডুবালো কোলে, 'কি মেখেছ গায়ে জোহরা! এত মিষ্টি ঘ্রাণ!'
ঠোঁটের স্পর্শ পেল কানে, ফিসফিস আওয়াজ এল, 'কিছু মাখিনাই, সুগন্ধি তেল দিছিলাম রাতে।'
জোহরার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস লাগছে ঘাড়ের কাছটায়। প্রতিটি লোমকূপ ফেটে যেন আগুন নিঃসরিত হচ্ছে, আলতো হাতে ধরে রাখা কোমরের বন্ধন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে ক্রমশ, তৃষ্ণার্ত ঠোঁট দুটো উর্ধ্বমুখী হচ্ছে ধীরে ধীরে, আজ নিয়ন্ত্রণ হারাবে সে নিশ্চিত। অদ্ভুত ঘোর নিয়ে উঠে বসল আনিস, এসব কি হচ্ছে তার সাথে! মাগরিবের আজান ধ্বনিত হচ্ছে। আবছা অন্ধকারে ঢেকে গেছে সব। দুপুরে দীর্ঘ সময় ঘুমোলে, জেগে ওঠার পর একধরনের অবসাদ গ্রাস করে। সে জানালায় তাকালো, ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, আজ রাতেও নিশ্চয়ই বৃষ্টি হবে। স্বপ্নের রেশ কাটেনি এখনো, হৃদস্পন্দনের দ্রুত গতি শিথিল হয়নি একটুও! শরীরটা কাঁপছে অনবরত, টিশার্ট ঘামে ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে, দারুণ ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করল সে, পালাতে হবে এখান থেকে, খুব দ্রুত!
লেখক পরিচিতি ঃ
নাঈমা পারভীন অনামিকা। বাবা: বেলায়েত হোসেন। মাঃ মাজেদা বেগম। শৈশব কেটেছে বরিশাল শহরে। বরিশাল ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
লেখালেখির শুরুটা ২০০৯ এর দিকে।শুধুমাত্র নিজের ভাললাগা থেকে শুরু করা। ২০১৬ থেকে অনলাইন ভিত্তিক লেখা শেয়ার করা শুরু করেন।ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাবার পর লেখার উদ্যম, আগ্রহ বেড়ে যায়। সিরিয়াস ভাবে জড়িয়ে পড়েন লেখালেখির সঙ্গে। জাগৃতি প্রকাশনী এবং পেন্সিল এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ করেন নিজের লেখা গল্পের পান্ডুলিপি নিয়ে এবং নির্বাচিত হন। পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম গল্পগ্রন্থ আসে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে --- " বনলতা নই"( গল্পগ্রন্থ - ২০১৮ এর বইমেলা)
অন্যান্য প্রকাশিত বই:
১.ক্ষরণ(উপন্যাস) (পেন্সিল প্রকাশনী- ২০১৯ এর বইমেলা )
২.দ্য হিডেন পার্ট অব লাইফ(উপন্যাস) (পেন্সিল প্রকাশনী- ২০২১ এর বইমেলা