বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

রহস্যের চাদরে ঘেরা লালবাগ কেল্লার সুরঙ্গপথ

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
রহস্যের চাদরে ঘেরা লালবাগ কেল্লার সুরঙ্গপথ

রুমানা মির্জা : 

বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য রহস্যময় জায়গা, যার কোন কোনটি সম্পর্কে বেশীর ভাগ মানুষ অবগত থাকলেও বেশির ভাগ সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানেনা।
ঠিক তেমনি ঢাকা লালবাগ
কেল্লার সুরঙ্গপথ।

বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম। আর তা সকলের কাছে বেশ সমাদৃত। এটিই মুঘল সাম্রাজ্যের একমাত্র নিদর্শন বাংলাদেশে।
প্রাচীন এই লালবাগের দুর্গ সম্পর্কে রয়েছে নানা অন্ধবিশ্বাস, কল্প-কাহিনী আর কিংবদন্তি।

লালবাগ কেল্লার তৈরির ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, সুবেদার আজম শাহ ১৬৭৮ সালে ঢাকায় একটি প্রাসাদ দুর্গ নির্মাণে হাত দেন। যুবরাজ আযম শাহ প্রথম এই উদ্যোগ নেন। তিনি অত্যন্ত জটিল একটি নকশা অনুসরণ করে দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি দুর্গের নামকরণ করেন "কিল্লা আওরঙ্গবাদ"।
কিন্তু পরের বছর সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে দিল্লী ফেরত পাঠান। ফলে দুর্গের কাজ অসমাপ্ত রেখে তাঁকে দিল্লী চলে যেতে হয়। এরপর সুবেদার হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা আসেন শায়েস্তা খাঁ। যুবরাজ আযম শাহ তাঁকে লালবাগ দুর্গের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন। শায়েস্তা খাঁ দুর্গের কাজ পুনরায় শুরু করেন। কিন্তু ১৬৮৪ সালে তাঁর অতি আদরের মেয়ে পরি বিবি অকস্মাৎ মারা গেলে তিনি অশুভ মনে করে এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে নির্মাণ করেন চিত্তাকর্ষক পরি বিবির সমাধিসৌধ।
অসমাপ্ত অবস্থায় থাকার জেরে দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় ।
রহস্যের চাদরে ঘেরা লালবাগ কেল্লার সব থেকে রহস্যময় স্থান হচ্ছে লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ-পূর্ব দেয়ালের সঙ্গে যুক্ত "সুড়ঙ্গপদ"। মূলত সুবেদার আমলে লালবাগ কেল্লার নিচে অসংখ্য সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আছে যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না বলে মনে করা হয়। তাই সবার সুরক্ষার জন্য সুড়ঙ্গটি তালাবদ্ধ করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ।
প্রাচীন এই নিদর্শনটি ঘিরে লোকমুখে প্রচলিত রহস্যগুলোর আজও কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা
মেলেনি।
সুরঙ্গ নিয়ে যে সব কথা প্রচল আছে তা হলো,,,,

★মিথ আছে যে,এ রহস্যের শুরু হয়েছিলো যখন
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকে। তখন বিদ্রোহী সিপাহীদের ব্রিটিশরা ধরে ধরে ফাসি দিতে থাকে। সেই সময় কয়েকজন বাংগালী সৈনিককে তাড়া করতে গেলে ওই সৈনিকরা লালবাগকেল্লার মূল সুড়ঙ্গ দিয়ে পালাবার চেষ্টা করে, তাদের ধরতে আরও কয়েকজন ব্রিটিশ সৈন্য তাদের পিছু নেয়। কিন্তু কেউই আর ফিরে আসে নাই।
★এই ঘটনা তদন্তে ব্রিটিশরা প্রথমে শিকল বেধে দুটি কুকুর পাঠায় এবং পরে আরও দুইটা পাঠায় বাট ফিরে আসে নাই কোনটাই( অনেক জায়গায় এ নিয়ে মতবিরোধ আছে)
শিকল ফেরত আসলেও তারা কেউই ফিরে আসেনি। অনেকের ধারনা এর ভেতর এক প্রকার গ্যাস রয়েছে যার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় প্রাণী দেহের হাড়, মাংস গলে যায়।
আবার কারো কারো মতে, এর ভেতরে এমন কোন অজানা শক্তি রয়েছে যার দরুন কোনো প্রাণী ভেতরে প্রবেশ করলে তার পক্ষে জীবিত ফিরে আসা সম্ভব নয় । এরপরে তারা মুখটিকে লোহার শিকল দিয়ে বেধে দেয়।
এরপর আর কোন পরীক্ষা করা হয় নায়।
★আবার এটাও মনে করা হয় যে, এটা পুরোটাই ইংরেজদের বানানো গল্প। হয়ত সিপাহীদের গোপনে এখানে ফাসি দেওয়া হতো। মিথ তৈরি করা হয় যাতে কেউ সাহস করে সুড়ঙ্গ দিয়ে গিয়ে তার প্রমাণ না পারে৷ উল্লেখ্য, সুবেদারের ঘরটিতে একটা কাস্টডি সেল আছে। যেখানে ইংরেজদের বন্দী করে অত্যাচার করা হতো তথ্য পাওয়ার জন্য। হতে পারে ইংরেজরা তার বদলা নিল
★ এটা বলা যেতে পারে যে, যেহেতু দুটি সুড়ঙ্গ শেষ হয় জিনজিরা ভবনের কাছে, এই জিনজিরা ভবনটি বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে তাই মূল সুড়ঙ্গ এইখানে শেষ হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা।
কিন্তু এখনও মূল সুড়ঙ্গ এর শেষ বের করা সম্ভব হয় নাই।
★আবার লোকমুখে শোনা যায়, এই সুড়ঙ্গ দিয়ে পাশেই বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়া যেত। সুড়ঙ্গমুখ থেকে বেরিয়েই নৌকায় চড়ে জিঞ্জিরা প্রাসাদে যাওয়া যেত। এছাড়াও, নদীর বাতাস অনুভবের জন্য ওই সময়ের সেনাপতিরা এই সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করতেন। তবে এসব কথার কোনো দালিলিক প্রমাণ আজো মেলেনি। তবে যুদ্ধের সময় মুঘল সেনারা যখন বুঝতেন পরাজয় নিকটবর্তী, তখন তারা এই সুড়ঙ্গ পথে দুর্গের প্রাচীর পেরিয়ে যেতেন।উল্লেখ্য এই লালবাগ কেল্লায় একটা সুড়ঙ্গ আছে যেটা গোলক ধাধায় (maze) মতো।
★জনশ্রুতি আছে যে সুড়ঙ্গ পথে অনেক ভুতুড়ে কার্মকান্ড ঘটে চলেছে। লোক মুখে শুনা যায়, সুড়ঙ্গের ভীতরে ভয়ন্কর কিছু আছে যায় জন্য কেউ এর ভিতরে ঢুকলে ফিরে আসে না।
পৃথিবীর কতোটুকুই আমরা জানি হতে পারে এর ভীতরে অলৌকিক কিছু রয়েছে। কে বলতে পারে? ভবিষ্যৎ এ হয়ত কখন এ সুড়ঙ্গের রহস্য উন্মোচন হবে। তখন হয়ত সবটুকু জানা যাবে।

যেহেতু, সুড়ঙ্গ পথের রহস্য উদঘাটনের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ হয়নি, তাই এটি আজো সকলের কাছে রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম এ রহস্যের সমাধানের জন্য।

(তথ্য ও ছবি,,, গুগল)


লেখক :


রুমানা মির্জা
লন্ডন। ইউ কে



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল