কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের টেকনাফে অপরাধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার হোতা বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ ২৬ পুলিশ সদস্য ও চার মাদক সহচরের বিরুদ্ধে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদন আজ রোববার আদালতে জমা দেয়নি পিবিআই। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রতিবেদন দাখিলে বারবার সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে অদৃশ্য গ্যাড়াকল সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদন জমা দিতে তৃতীয়বারের মতো সময় প্রার্থনা করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে পিবিআইর পরিদর্শক কায়সার হামিদ আবেদন করেন। তবে বিচারকের ছুটিজনিত অনুপস্থিতির কারণে ওই আবেদনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে বহুল আলোচিত সাংবাদিক নির্যাতনের মামলাটি এখনো রেকর্ডবিহীন অবস্থাতেই পড়ে রইলো।
অপরদিকে মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারনে ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে পুলিশের সাজানো ৬টি মিথ্যা মামলা এখন পর্যন্ত বহালই রাখা হয়েছে। ফলে ওসি প্রদীপ পরিচালিত নীপিড়ন, নির্যাতন ও হয়রানির ধকল থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা রেহাই পেলেন না এখনো।
এ ঘটনায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, হতাশা ব্যক্ত করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দও।
তারা বলেছেন, ফরিদুল মোস্তফার নির্যাতনের বিস্তারিত উল্লেখ করে অনলাইন সংবাদপত্র পরিষদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেই আবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় কক্সবাজারের প্রশাসন প্রদীপ স্টাইলেই সাংবাদিক হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা নিজের সকল মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে তার দায়েরকৃত মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের আইনের আওতায় আনতে আবারও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচার বিভাগসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তড়িৎ হস্তক্ষেপের আকুতি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মাদক ও ঘুষের বিরুদ্ধে লিখেছি বলে প্রদীপ ও তার লালিত মাদক ব্যাবসায়ায়ীরা পাশবিক নির্যাতন করছে। ৬ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে টানা ১১ মাস কারাগারে রেখেছে। আমি বর্তমানে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়ে আছি। মামলাগুলো চালানোর মতো সাধ্যও নেই আমার।
সূত্রমতে, চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করেছিলেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। যার নং সিআর ৬৬৬/২০২০ সদর। মূলত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান কর্তৃক প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনতার বাণীতে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ওসি প্রদীপের রোষানলে পড়েন ফরিদুল মোস্তফা।
একপর্যায়ে ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে টেকনাফ থানায় প্রদীপ কুমার দাশ ওসি থাকাকালে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে ঢাকার মিরপুর থেকে তুলে নিয়ে অমানবিক বর্বরতা ও নির্মম নির্যাতন চালায়। ধারাবাহিক নির্যাতন শেষে অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজিসহ পৃথক ৬টি মামলা দিয়ে চালান দেয়া হয়। এসব মামলায় সাংবাদিক ফরিদ টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর চলতি বছরের ২৭ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান।
একপর্যায়ে তিনি শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে প্রধান আসামি করে ২৬ পুলিশ সদস্য এবং ৪ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন সদর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ।
পিবিআইর প্রতিবেদন দিতে দ্বিতীয় সময়ের দরখাস্তের পরবর্তী ধার্য তারিখ ১৪ মার্চ এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও আদালতে আবারও ৩০ দিন সময় চাওয়ার কারণে মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টরা ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে করেছেন।
বাদীর প্রধান আইনজীবী মো. আবদুল মন্নান বলেন, দিবা লোকের মত স্পষ্ট সাংবাদিক নির্যাতনের একটি ঘটনার যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় দেশের বিচার ব্যাবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আদালতের মুল্যবান সময়। ফৌজদারি কার্যবিধিতে তদন্তের বিধি বিধানের সময়সীমা অতিক্রম করা স্বত্তেও প্রতিবেদন দাখিলা না করায় অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি মামলাটি তদন্তের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সিনিয়র এই আইনজীবী।
এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
সময় জার্নাল/এমআই