শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইশকুল গেলে খামু কি?

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
ইশকুল গেলে খামু কি?

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর: রাজু ও রাসেল। আপন দুই ভাই। স্টেশনে ফেরি করে পান সিগারেট বিক্রি করে। রাজুর বয়স দশ বছর আর রাসেলের বারো বছর। তাদের বাবা শাহজাহান দিনমজুর। দুই ভাই তিন বোন। বাবা কোনো-কোনো দিন শ্রমিক খাটেন, আবার কোনো কোনো দিন বেকার। এতে সাত সদস্যের সংসার চলতে হিমশিম খাচ্ছে। রাজু ও রাসেল লক্ষ্মীপুর জেলার টুমচর এলাকার বাসিন্দা।

করোনা দুঃসময়ে চারদিকে কাম-কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে শাহজাহান কঠিন খাদ্য সংকটে পড়েন। প্রাথমিকে পড়ুয়া ছেলেদের ধার করে টাকা নিয়ে পান সিগারেট বিক্রি করতে নামিয়ে দিয়েছেন বাবা। সকাল সাতটার দিকে বেরিয়ে রাত নয়টা দশটার দিকে ঘরে ফেরে তারা। লক্ষ্মীপুর সদরের ব্যস্ততম উত্তর স্টেশন, কোর্ট চত্বর, ঝুমুর এলাকা, কখনো আবার দক্ষিণ স্টেশনে পান সিগারেট বিক্রি করছে রাজু ও রাসেল।

সারাদিন বেচা বিক্রি করলে ১শ টাকা থেকে দেড়শ টাকা লাভ হয়। দিন শেষে ঘরে ফিরে বাবার কাছে হিসেব জমা দেয়।

মঙ্গলবার দুপুরের পর শহরের উত্তর স্টেশন নুরজাহান হোটেলের সামনে রাস্তার উপর দেখা হয় রাজু ও রাসেলের । তাদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের-

-তোমাদের নাম কি? 
-অ্যাঁর নাম রাসেল আর ওর নাম রাজু।
-তোমার বয়স কতো?
-অ্যাঁর বয়স ১২ বছর আর রাজু’র ১০ বছর।
-তোমরা কি পড়ালেখা করো? 
-হ, অন তো ইশকুল বন্ধ। 
-কোন ক্লাসে পড়ো?  
-অ্যাঁই ক্লাস ফোরে, রাজু টুতে হড়ে।
-স্কুল খুলছে তো?
-জানি না। ইশকুলে গেলে কে খাওয়াইবো! 
-কেনো, তোমরা উপবৃত্তির টাকা পাও না? 
-হাই, এগুন দি কি খানা অয়নি! 

কথাগুলো বলার সময় এই ছোট্ট কচি মুখগুলোতে চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে। যেন তারা রাস্তায় না বেরুলে খাবার জুটবে না। শূন্য হাতে, অভ্যুক্ত থাকতে হবে এই ছোট ছোট মুখগুলো।

অভাব আর দারিদ্র্যতার সাথে যাদের নিত্য লড়াই তাদের পড়ালেখার মতো বিলাসিতা করার সময় কই। অসহায় মা সন্তানের পথ চেয়ে বসে থাকে। অসংখ্য গাড়িঘোড়ার ভেতর, বিপদ আপদের মাঝে নাবালক দুইটি নাড়িছেঁড়া ধন ক্ষুধার তাড়নায় খাদ্যের সন্ধানে সকালে বেরিয়ে রাতে ফেরা, মায়ের কাছে কঠিন এক বাস্তবতা।
 
যে বয়সে এ ছোট সোনামুখেরা থাকবে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত সে বয়সে তারা পরিবারের সহায়ক হয়ে রাস্তায় নেমেছে। কঠিন লড়াইয়ে নেমে নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মানের পথ রুদ্ধ করে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর সব উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও এরকম হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখনো রাস্তায়, পথে ঘাটে দোকান পাটে, মাঠে ময়দানে বিভিন্ন কাম-কাজ নিয়ে বিদ্যালয় থেকে দূরে রয়েছে। তাদের কে ফেরাবে? 

তবে কি তাদের সুন্দর জীবন গঠনে এতো এতো মানবিক মানুষের মাঝে কেউ তাদের পাশে দাঁড়াবে ছাতা হয়ে!

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল