হাবিপ্রবি প্রতিনিধি, (দিনাজপুর) : হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে দিনদুপুরে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজির ঘটনায় আজ (১৪ মার্চ) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবার।
জানা যায় শনিবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ তম ব্যাচের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাইসুল হক হিমেলকে মারধর করে ১০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫-৬ জন শিক্ষার্থী।
চাঁদাবাজির স্বীকার রাইসুল হক হিমেল জানান, ঐ দিন দুপুর তিনটার দিকে আমি এবং আমার বান্ধবী ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকের পুকুর পাড়ে বসে গল্প করছিলাম। এ সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫-৬ জন সিনিয়র ভাই এসে আমাদের পরিচয় জানতে চায়। প্রথমে আমি ওনাদের চিনতে না পারায় পরিচয় জানতে চাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করি। এ কথা শুনে তারা আমরা গায়ে হাত তুলতে উদ্যত হলে আমি তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে তারা সবাই আমাকে মারপিট করতে শুরু করে। এসব দেখে আমার বান্ধবী অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় আমি তাকে আমার ঘারে মাথা দিয়ে রেখেছিলাম । এক পর্যায়ে তারা সেই দৃশ্য ভিডিও করতে থাকে। এরপর তারা আমার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ভয় ভীতি দেখাতে থাকে। আমার কাছে এতো টাকা ছিলোনা বিধায় তখন আমি আমার বোনকে ফোন করি। তার কিছুক্ষণ পরেই বিকাশে আমার দুলাভাই টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরপর একজন বড় ভাই আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এছাড়াও আমার বান্ধবীর ফোন নিয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে তার ব্যক্তিগত কিছু ছবি শেয়ার ইটের মাধ্যমে তাদের ফোনে নিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে এই ঘটনার সাথে জড়িত একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ তম ব্যাচের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী মো. মনিরুজ্জামান মামুন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ঐ শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আপনাদের নিউজ করারও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে রনি ভাইয়ের (বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ নেতা) সাথে কথা বলুন। ঘটনার সময় আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান মামুন বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদুল আলম রনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। কয়েকজন জুনিয়র এসে প্রথমে আমাকে ঘটনাটি জানায়। পরে জানতে পারি এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ঐতিহ্য ভাই আমাকে যখন ফোন করে তখন আমি শহরে ছিলাম। ঐতিহ্য ভাই সম্ভবত ঐ শিক্ষার্থীর পরিচিত ছিলো।
এই ঘটনায় ছাত্রলীগ পরিচয়ে কেউ সম্পৃক্ত ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদুল আলম রনি বলেন, প্রথমত ছাত্রলীগ কোন ব্যক্তির দায়ভার নিবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ঐতিহ্য হলো আমরা সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকি। আর আজকের এই ঘটনায় যদি এমন কিছু থেকেও থাকে তাহলে কখনোই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেটা সমর্থন করবে না।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, হিমেল (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) আমার বন্ধুর ছোট ভাই। ওর সাথে যা হয়েছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য। এরসাথে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের সকলকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সাথেও কথা বলবো এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে। আর হিমেলকে জিডি করতে বলেছি। পরে মামলাও করা হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. খালিদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাটি জেনেছি। ব্যাপারটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যেই দোষী হোক না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সময় জার্নাল/ইম