সময় জার্নাল প্রতিবেদন: ট্রেনে সন্তান প্রসবে সহযোগিতার জন্য ডা. ফারজানা তাসনীমকে সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজশাহীতে পশ্চিম রেলের সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানান রেলওয়ে পশ্চিমের জেনারেল ম্যানেজার মিহির গুহ।
এছাড়াও প্রসব কাজে ডা. তাসনীমকে সহযোগিতা জন্য একজন আইনজীবীসহ আরও নয়জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
অন্য সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন, পাবনা জজ আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী মুক্তা রাণী কর্মকার, ট্রেনটির গার্ড এএম আজিমুল হোসাইন, রুবায়েত হাসান, পরিচর্যক সাব্বির হোসেন ঝলক, মুক্তার হোসেন, বাবুল খান, টিটি মো. সুমন, সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন এবং ট্রেনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী দীপক।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভুতি জানতে চাইলে ডা. ফারজানা তাসনীম বলেন, ‘সম্মননা পেয়ে আমি গর্বিত। এই কাজকে আমার কোনো কৃতিত্ব হিসেবে দেখছি না। এটা আমার দায়িত্ব ছিল, ওই মুহূর্তে আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল, করেছি। আমি দীর্ঘদিন মাতৃসদনে কর্মরত ছিলাম। আমি এই ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। আমার সেই সাহস ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমিই প্রথম না। চিকিৎসকরা সর্বদায় এমনভাবে মানবসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমার ঘটনাটি মিডিয়ার কল্যাণে আলোচনায় এসেছে। তবে আমি কখনোই আলোচিত হতে চাইনি।’
এ ঘটনাটি তরুণ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহিত করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সিনিয়রদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমার জুনিয়র যারা আছেন, তারা অনেক দায়িত্ববান। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বদায় সচেষ্ট থাকবে বলেই আমার বিশ্বস।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে নাটোরের আব্দুলপুর স্টেশনের কাছে এই নারী চিকিৎসকের সহযোগিতায় ট্রেনের কামরায় সন্তান প্রসব করেন সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক প্রসূতি নারী।
সন্তান প্রসবের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে ট্রেনে উঠেছিলেন ওই নারী। তিনি রাত আটটার দিকে ভেড়ামারা স্টেশনে খুলনা ছেড়ে আসা সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগিতে ওঠেন। এর পরপরই তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানতে পারেন ট্রেনের কন্ডাক্টিং গার্ড রুবায়েত হাসান। তিনি বিষয়টি গার্ড ইনচার্জ আজিমুল হোসেনকে জানালে ট্রেনের মাইকে সন্তান প্রসবের ব্যাপারে সাহায্য কামনা করা হয়।
মাইকে ঘোষণা শুনে ডা. ফারজানা তাসনীম তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারিত কামরায় উপস্থিত হয়ে যান। সযত্ন পরিচর্যায় সম্পন্ন করেন বাচ্চা প্রসবের কাজ।
এক নজরে ডা. ফারজানা তাসনীম
ডা. ফারজানা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। এরপর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আরবান হেলথ কেয়ারে চাকরি করেছেন। তিনি ২০০৯ সালে রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১১ রাজশাহীর নিউ গভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২-১৩ সেশনে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন।
৪২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী সার্জন হিসেবে এখন সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
সময় জার্নাল/এমআই