সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁশবুনিয়া গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহর (দুই)

রোববার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
বাঁশবুনিয়া গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহর (দুই)

জেসমিন আরা বেগম :
মায়ের বিভিন্ন নাম
আমার মায়ের নাম ছোডগেদু রাখার কারণ তিনি সবার ছোট। তাঁর আগ দুই বোন আছেন। কিন্তু ইতির পরে পুনশ্চের মত আমার একমাত্র মামার জন্ম হয়। পুনশ্চের জন্মের পরে যেমন ইতির নাম পরিবর্তন করা হয় না, তেমনি আমার মায়ের ডাকনাম ছোডোগেদুও পরিবর্তন করা হয়নি।
মায়ের পোষাকি নাম মেহের নেগা (যেটাকে আমার ডাক্তার বোন একটু আর্টিস্টিক করে রেখেছেন মেহের নীগার, নজরুলের নায়িকার নামে)। আমার বোন মেহের নীগার নামে একটা জনকল্যাণমূলক ফাউন্ডেশন করেছেন।
আমি মাকে জিজ্ঞেস করি, 'মা, তোমার নাম কি'?
- আমার নাম মেহের নেগা।
আমি হাসতে হাসতে বলি, 'তাইলে ছোডোগেদু কার নাম'?
- ছোডোগেদুও আমার নাম, বাবা আর মায়ে আদর কইরা ডাকত।
- আহারে, আদরের ডাক তো বেশিদিন থাকলো না। তোমার পরে মামু হওয়ার ফলে মামু হইলো ছোডোগেদু আর তুমি হইলা বড়োগেদু।
আমি মায়ের সঙ্গে ফাজলামি করি। মা হাসেন, বলেন,
- না, তোর মামু হওয়ার পরেও আমারে ছোডোগেদু-ই ডাকত, তোর মামুরে কালাম ডাকত।
মা'র জন্মের অনেক বছর পরে যখন বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেন চিকিৎসা করার জন্য, তখন আমার মেজভাই আমার মায়ের নাম লিখালেন মেহেরুন্নেছা। আমার ভাই তখন বরিশাল মেডিকেল কলেজের ছাত্র। মানুষ তার নিজের ছেলেমেয়েদের নাম রাখে, আর আমার মায়ের ছেলেমেয়েরা তাঁর নাম রাখল। আমাদের ভাইবোনদের জন্ম সনদে ময়ের নাম আছে মেহেরুন্নেছা। মা মারা যাওয়ার পরে আমার শিক্ষানুরাগী পিতা, শুধুমাত্র নিজের নামটি লিখতে পারা আমার মায়ের নামে 'মেহেরুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়' নামে একটি বিদ্যালয় স্হাপন করেন আমাদের গ্রামে।
আগের দিনে মেয়েদের বিয়ে হলে শশুর বাড়িতে তেমন কেউই তাদের নাম ধরে ডাকত না। আমার মায়ের বিয়ে হয়ে শশুর বাড়িতে চলে আসার পরে মুরুব্বিরা সবাই তাকে মেরধার (মৃধার) ঝি বলে ডাকত। যদিও আমার মামুরা হাওলাদার। মা হওলাদার বাড়ির মেয়ে হওয়া সত্তেও কেন তাকে মৃধার ঝি ডাকা হয় এ রহস্য উদঘাটনের জন্য একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম।
মা, তোমাকে কেন মেরধার ঝি ডাকে?
আমার বাবা মেরধা আছিলো, তাই।
নানার কাজটা কি ছিল?
জমি জাগা নিয়া কোন কাজ করত।
বুঝলাম নানার পেশা ছিলো মৃধা, যা কিনা জমির খাজনা আদায়ের সাথে সম্পর্কিত।
পরে অন্তর্জালের সহায়তায় মৃধা বংশের উৎপত্তি ও ইতিহাস জানলামঃ
মৃধা বা মিরধা শব্দ আরবি এবং ফারসি ভাষা থেকে এসেছ । আরবি মির শব্দের অর্থ প্রধান। ফারসি ভাষায় ডিহ শব্দের অর্থ গ্রাম বা ছোট এলাকা। এই ডিহ শব্দেরই অপভ্রংশ বা সংক্ষিপ্ত রূপ ধা। মৃধাগণ ছিলেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত। মৃধাগণ কখনো গ্রামের প্রধান, আবার কখনো একটি জমিদারি এলাকার প্রধান পিয়ন বা বার্তাবাহক (প্রসেস সার্ভার), আবার কখনো জমি জরিপের চেইনম্যান হিসাবে কাজ করতেন।
মূলত মৃধাগণ ছিলেন :
- গ্রাম প্রধান।
- পরিদর্শক।
- নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত (আধা সামরিক কমান্ড)।
- ভূমি জরিপ সার্ভেয়ার।
এছাড়াও জমিদারের নিযুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান। যারা বিদ্রোহী প্রজা ও অন্যান্য জমিদারের আক্রমণ থেকে জমিদারি রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতেন। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই মৃধা পদবী আছে। পদবীধারীগণ বংশ পরস্পরায় নামের সাথে মৃধা শব্দটি ব্যবহার করে মৃধা বংশে পরিণত হয়। তবে আমার মামা এর ব্যতিক্রম। তাঁর নাম কালাম হাওলাদার।
পরে আমার বড় ভাইয়ের জন্ম হলে মাকে আমার আব্বাসহ অনেকেই আতহারের মা বলে ডাকত।আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি আব্বা মাকে আতহারের মা বলে ডাকেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে আমার বড় ভাইয়ের জন্মের আগের কয়েক বৎসর আব্বা মাকে কি বলে ডাকতেন? মা বেঁচে থাকতে এই দুস্ট প্রশ্নটি আমার মাথায় আসেনি, তাই জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমার ভাইবোনদের কেউ জানে বলেও মনে হয় না।
তবে আমার মায়ের মেহের নেগা নামটি আমার সবচেয়ে প্রিয়।

লেখক পরিচিতি :

জেসমিন আরা বেগম, 
কেমিকৌশলী, ১৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। 
প্রাক্তন উপ-পরিচালক,  বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি)।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল