ডা. আব্দুন নুর তুষার :
আমার খালারা আমাকে খুব আদর করতেন। আমার জন্মের আগেই আমার বড়খালা স্বপ্নে আমাকে দেখেছিলেন। একথা তিনি আমার মাকে বলেছিলেন। আমার বড় খালাই আমাকে আমার প্রথম স্টেথো আর বিপি দেখার মেশিন কিনে দিয়েছিলেন। এই যন্ত্রটির নাম স্ফিগমোম্যানোমিটার। লোকে কখনোই এই নামে ডাকে না।
আমার মেজো খালা জোরে জোরে কথা বলতেন। আমাকে গল্পের বই দিতেন আর কালোজাম খাওয়াতেন। একবার একজোড়া জুতার বায়না ধরেছিলাম। মার কাছে টাকা ছিলো না। তাই কিনে দেয় নাই। সেটা কি আর আমি বুঝি?
দিন দুয়েক পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি ভোর সাতটায় আমার বড় আর মেঝো খালা জুতার বাক্স হাতে আমার মাথার কাছে বসা। আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি।
আমার জ্বর হলে এই খালাদ্বয় আমার জন্য খাবার পাঠাতেন। আর আমারও বার বার জ্বর হতো। কেন যে এত জ্বরে ভুগতাম কে জানে।
আর ছিলেন আমার সেজো খালা। তাকে ডাকতাম খালাম্মা। তিনি দেখতে ছিলেন বড়ই সুন্দর। শিশুর মতো মন ছিলো। আর তিনি সবচেয়ে বেশী আদর করেছেন আমাদের দুই ভাই ও বোনকে। আমার বোন বেশীদিন তাকে পায় নাই।
খালার বাসায় প্রায় প্রতিদিন আমি ও আমার ছোটভাই স্কুল থেকে ফিরতাম। কারণ স্কুলের পাশেই ছিলো তার বাসা। আমি ও আমার খালাতোভাই একই স্কুলে পড়তাম।
খালা আমাদের জন্য টেবিলে খাবার রেখে দিতেন। আমরা সে খাবারও খেতাম আবার ভাতও খেতাম। আমার খালাতো ভাই ছিলো আমার ফেলুদা। আমি তার সাথে সাথে নানা রকম অ্যাডভেঞ্চার করতাম।
এই খালা আমাদের দুজনকে তার সন্তানদের মতোই আদর শাসন করতেন। আমার খালা যখন মরে যান আমার তখন প্রথম প্রফেশনাল চলছে। আমি তাকে দেখতে যেতে পারি নাই।
আমার মেঝোখালা ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন।
বড় খালা বাসাতে। শেষের দিকে তার ডিমেনশিয়া হয়েছিলো। অনেক কিছু মনে করতে পারতেন না। কিন্তু আমাকে ঠিকই চিনতেন।
আমার খালারা আমাকে মায়ের মতোই আদর করেছেন। সবচেয়ে বেশী করেছেন আমার খালাম্মা মানে সেজো খালা।
আমার পেশাগত জীবন শুরু করার আগেই আমার দুই খালা চলে গেছেন।
গতকাল আমার জন্মদিন ছিলো। আমার খুব মনে পড়েছে আমার খালাদের কথা। তারা নাই। আমাকে স্নেহ করার মানুষগুলি কমে গেছে। আমাদের জীবন এভাবে ধীরে ধীরে স্নেহহীন মায়াহীন হয়ে যায়।
আমরা যেন আজ যাদের স্নেহ পাচ্ছি তাদের মূল্য দেই। যে মানুষগুলি আমাদের ভালোবাসে তাদের ভালোবাসি।
তারা চলে গেলে আর কিছু করার জায়গা বা উপায় থাকে না।
আমি ঠিক করেছি আমার শৈশবস্মৃতিতে খালাদের নিয়ে আলাদা করে লিখবো।
আল্লাহ যেনো আমার প্রিয়, মাতৃসমা খালাদের বেহেশত নসীব করেন।