শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

যত কাণ্ড এয়ারপোর্টে

সোমবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
যত কাণ্ড এয়ারপোর্টে

জেসমিন আরা বেগম :

হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের গেটে বসে আছি দোহা থেকে ঢাকাগামী কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠবো। আগের ফ্লাইটে ঘুম ভালো হয়নি তাই চোখ জ্বালা করছে। একটু পরে বোর্ডিং এর জন্য অ্যানাউন্সমেন্ট করলো। লোকজন হুড়াহুড়ি শুরু করলো। আমি বাপু ওসব করি না, করলে যদি ঘণ্টা দুই আগে যাওয়া যেতো তাহলে না হয় করতাম। আমি ঘাড় নিচু করে মোবাইলে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমার পাশের জন নেই, তিনি বোর্ডিং করতে চলে গেছেন। কিন্তু পাশের সিটে তাঁর ল্যাপটপসহ ব্যাকপ্যাক পড়ে আছে। উনি ওনার ল্যাপটপ আর ওয়াই-ফাই মানে ওয়াইফ মানে আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছেন।
আমি ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে গিয়ে তাঁকে ধরলাম। রবীন্দ্রনাথের শাস্তি গল্পের সেই বিখ্যাত সংলাপের অনুকরণে বললাম, 'ল্যাপটপ আর ওয়াইফ রেখে কোথায় চলে যাচ্ছো? বঊ গেলে বউ পাওয়া যাবে, কিন্তু ল্যাপটপ গেলে ল্যাপটপ পাবা আনে কোম্মে মনু'?
উনি তাড়াতাড়ি আমার হাত থেকে ল্যাপটপ নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।
এই ফ্লাইটে প্রায় শতভাগ যাত্রী বাংলাদেশী। প্লেনে উঠে দেখি আমার সিটে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন, তাঁর পাশে তাঁর হাজবেন্ড। আমি বললাম, 'এটা আমার সিট, একটু সরে বসেন'। মহিলা যেন আমার কথা শুনতেই পেলেন না। অগত্যা আমি একজন এয়ার হোস্টেসকে ধরে আমার বেদখলকৃত সিট দখল করে দেয়ার জন্য বললাম। এয়ার হোস্টেস বলামাত্র উনি সরে বসলেন। এইসব করার সময় আমি আমার হাতের ব্যাগ আর ল্যাপটপের ব্যাকপ্যাক আমার সিটের উল্টা পাশের খালি সিটে রেখেছিলাম। আমার ট্রলিবাগটা একজন দেশী ভাইয়ের সহায়তায় উপরে তুলে দিয়ে আমার হাত ব্যাগ নিয়ে নিজের সিটে বসে সিটবেল্ট বেঁধে নানা চিন্তা করতে লাগলাম। বিশেষ করে আমার বরের ল্যাপটপ ফেলে আসার কথা। চিন্তা করতে করতে ভাবলাম আমার ল্যাপটপের ব্যাকপ্যাক উপরের তাকে রেখেছি কী না, মনে হয় রাখিনি। তবে কী আমিও ল্যাপটপ গেটের সিটে রেখে এসেছি, না পাশের সিটে আছে? পাশের সিটে তাকিয়ে দেখি ঐ সিট আর খালি নেই, দুইজন দুই সিটে বসে আছে আর মাঝের সিট খালি। আমার ব্যাকপ্যাক কোথাও নেই। আমি একটা হার্টবিট মিস করলাম, ভাবলাম, 'মুই এহন মোর ম্যাকবুক এয়ার পামু আনে কোম্মে'! ভালো করে তাকিয়ে দেখি, আইল সিটে বসে থাকা দেশী ভাইয়ের পায়ের কাছে আমার ব্যাকপ্যাক দাঁড়িয়ে আছে।
আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তার সঙ্গে বললাম, 'Excuse me, that bag is mine’. সঙ্গে সঙ্গে সে আমার ব্যাগ দিয়ে দিলো, আমি সেটা নিয়ে উপরের তাকে রাখলাম। এখন কথা হচ্ছে, আমি খেয়াল করে খোঁজ না করলে কী সে ব্যাগটা নিজের মনে করে নিয়ে নিত? সম্ভাবনা ছিল, না হলে সে বসতে গিয়ে যখন দেখল যে ওখানে একটা ব্যাগ পড়ে আছে, তখনই তো তার উচিত ছিল ব্যাগের মালিককে খোঁজা!
আরো একবার এমন কাণ্ড হয়েছিলো। MATT 2 (Managing At The Top 2) প্রশিক্ষণের বিদেশের অংশ করি ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড ইউনিভারসিটিতে। প্রশিক্ষণ শেষে ম্যানচেস্টার থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা ফিরছি। ঢাকায় প্লেন ল্যান্ড করার পরে সবাই যার যার হ্যান্ড লাগেজ বের করে নিলো উপরের তাক থেকে। আমার ছোটো ট্রলিব্যাগটা আর খুঁজে পাই না। আমি যেখানে রেখেছি সেখানে এবং তার আশেপাশে কয়েকবার খুঁজলাম।আমার সাথের লোকজন সবাই আমার ব্যাগ খুঁজছে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমার সিটের এক সিট পরের একলোক দাঁড়িয়ে আছে, তার সিটের উপরে আমার ব্যাগ, ব্যাগের উপরে তার হাত এমনভাবে রাখা যেন ওর চৌদ্দ পুরুষ এই ব্যাগের মালিক। দেখেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, 'এই তো আমার ব্যাগ'।
ঐ লোক ব্যাগ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, 'I have exactly the same one’. আমি আর কিছু বললাম না। লোকটা স্পষ্টত আমার ব্যাগটা চুরি করার ধান্ধায় ছিল। তোমার যদি এরকম একটা ব্যাগ থেকেই থাকে তবে সেটা এখন কোথায় বাপু?
আমেরিকা ফিরে আসার পথে ঢাকা থেকে দোহা ফ্লাইটে আমার পাশে সুইডেন প্রবাসী এক দম্পতি বসেছেন। বেশ গল্প হলো ভদ্রমহিলার সঙ্গে। দোহায় ল্যান্ড করার পরে নেমে অনেকদূরে আসার পরে দেখি ঐ ভদ্রলোক ছুটে আসছেন আমার নেক পিলোটা নিয়ে, যেটা আমি প্লেনের সিটের উপরে ছেড়ে এসেছিলাম। আমরা এমন ভুলোমনা কেন, কে জানে!
আর এইবার তো প্লেনই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় ফিরছি। সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে ওয়েটিং রুমে দুইটা সিট দেয়ালের দিকে মুখ করে, অন্য সব লোকের দিকে পিছন করে রাখা আছে। প্যান্ডেমিকের মধ্যে যতটুকু সেইফ থাকা যায় ভেবে, আমি বললাম, 'চল ঐ সিটে গিয়ে বসি'। ওখানে বসে অপেক্ষা করছি আর মোবাইল টিপছি কখন প্লেনে ওঠার ঘোষণা আসে!
এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির গলা শুনে দুজনেই চমকে তাকালাম। উনি বলছেন, 'আপনারা কোথায় যাবেন'?
দুজনেই একসঙ্গে বললাম, 'ঢাকায়'।
- তাড়াতাড়ি যান, সবাই চলে গেছে।
সত্যি তাকিয়ে দেখি পুরা ওয়েটিং রুম খালি, আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই। তাড়াহুড়া করে ঐ রুম থেকে বের হয়ে দেখি আমাদের সহযাত্রীরা প্লেনে উঠছে।
কি আশ্চর্য আমরা কেন কোন ঘোষণা শুনলাম না বা টের পেলাম না যে সবাই চলে যাচ্ছে!
দুজন দেখি একবারে সমান কানা (ঠসা)।

লেখক পরিচিতি :

জেসমিন আরা বেগম, 
কেমিকৌশলী, ১৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। 
প্রাক্তন উপ-পরিচালক,  বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি)।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল