জীবন হক। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলায় বাবা, মা এর অমতে ছেলে মেয়ে বিয়ে করার কারণে ছেলেকে মেয়ের বাবা, মা ও আত্মীয়রা মিলে মধ্যযুগীয় কাঁয়দায় গাছের সাথে বেধে নির্যাতন করেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে ওই মেয়ের মা সেলিনা আক্তার (৪৫) কে আটক করেছে রাণীশংকৈল থানা পুলিশ।
নির্যাতনের স্বীকার নাসিরুল ইসলাম (২২) রানীশংকৈল উপজেলার ভাংবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকার খইরুল ইসলামের ২য় পুত্র। নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে স্থানীয়রা নাসিরুল কে উদ্ধার করে রানীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে নাসিরুলের শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে চরম যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে নাসিরুল।
গত সোমবার ২০ই সেপ্টেম্বর বিকেলে নাসিরুলকে তার বাসার পাশের বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় পাশের গ্রাম বগুড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেয়ের বাবা করিমুল ইসলাম ও তার লোকজন। পরে ভাংবাড়ি বগুড়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি কাঠাল গাছের সাথে ছেলেকে বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধরক মারপিট করে মেয়ের বাবা, মা ও আরো কয়েকজন। এই ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। শুক্রবার দুপুরে রাণীশংকৈল থানার ওসি একটি বাহিনী নিয়ে সেই এলাকায় গিয়ে মেয়ের মা কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী ও ছেলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাণীশংকৈল ভাংবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকার খইরুল ইসলামের ২য় পুত্র নাসিরুল ইসলামের সাথে পাশের গ্রাম বগুড়াপাড়া এলাকার করিমুল ইসলামের মেয়ে কেয়া মনির দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক। নাসিরুল জীবিকার তাহিদে ঢাকায় গার্মেন্টস এ চাকড়ি করে। গত পহেলা সেপ্টেম্বর মেয়ে ছেলেকে বিয়ের চাঁপ দিলে ছেলে ঢাকা থেকে এসে মেয়ের সাথে দেখা করে। পরে ছেলে মেয়ে গত ৯ই সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও আদালতে বিয়ে করে দুজনে ঢাকায় চলে যায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মাতব্বরেরা ছেলে ও মেয়ের পরিবারকে নিয়ে আলোচনায় বসে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় ছেলে মেয়ের বিয়ে মেনে নেওয়া হবে। সেই মোতাবেক ছেলে মেয়েকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু আসার পর থেকে ছেলে মেয়েকে আলাদা রাখা হয়। পরে গত সোমবার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের পরে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুরে পাঠানো হয়। এদিকে এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যামে ভাইরাল হলে ছেলে এলাকা ভাংবাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। শুক্রবার এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে নির্যাতনকারীদের দ্রæত গ্রেফতার ও শাস্থির জন্য ¯েøাগান দিতে থাকে। তারা মানববন্ধন করে আসামিদের দ্রæত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ ইকবাল বলেন, একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে আমরা অভিযান পরিচালনা করে ওই ঘটনার সাথে জরিত সেলিনা আক্তারকে আটক করি। ছেলের পরিবার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়। মামলা হওয়ার পরে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ