এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট:
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পল্লীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় দুই লক্ষ টাকার ১৭টি গাছ অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগসূত্রে জানাগেছে, উপজেলার জিউধরা সেরজন স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছে। ওই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে বিশাল আকৃতির বেশ কয়েকটি চাম্বল গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। রোববার বিকেলে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় গাছগুলো কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কাটা গাছের কয়েকটি টুকরা দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো গাছ কাটার চিহ্ন দৃশ্যমান রয়েছে। বিদ্যালয়ের নাইটগার্ড দেলোয়ার চৌকিদার ও সিমানা প্রাচীর নির্মানে কর্মরত শ্রমিকরা জানালেন, সিমানা প্রাচীরের সেন্টারিং এবং বিদ্যালয়ের বেঞ্চ তৈরির জন্য গাছ কাটা হয়েছে বলে জেনেছি। সর্বমোট ১৭টি গাছ কেটে কিছু গাছ বিক্রি করে গাছকাটা শ্রমিকদের পারিশ্রমীক দেয়া হয়েছে। তবে অপর একটি সূত্র থেকে জানাগেছে, সেন্টারিং ও বিদ্যালয়ের বেঞ্চ বানানোর অজুহাতে একটি গাছের কয়েকটি টুকরো রাখা হলেও দেড় লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রি করা হয়েছে এবং ক্রেতারা গাছ কেটে নিয়েও গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিমানা প্রাচীর নির্মাণ সিমানায় ২/১ গাছ কাটার প্রয়োজন থাকলেও সিমানা প্রাচীরের বাইরে রাস্তার পাশের পুরানো আমলের সবকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো ক্রেতারা নিয়ে গেলেও গাছ কাটার চিহ্ন (গোড়ালী)বিরাজমান রয়েছে।
সরকারি বিধান অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন গাছ কাটা বা বিক্রির প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ ও বনবিভাগের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই সভাপতিকে সাথে নিয়ে পুরোনো আমলের এ গাছগুলি বিক্রি করে দিয়েছেন।
গাছ কাটার বিষয় স্থানীয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসও অবগত নন বলে জানালেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল হান্নান। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা এবং বিক্রির বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায় এ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে যার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান উপজেলা কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করলে উপজেলা কমিটি সভা করে গাছ বিক্রির সিন্ধান্ত নিবে এরপর বন বিভাগ কর্তৃক গাছের পরিমাপ ও মূল্য নির্ধারণ করবে। গাছের মুল্য ৫ লক্ষ টাকার নিচে হলে মাইকিং করে এবং গাছের মূল্য ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করতে হবে।
বিদ্যালয়ের গাছ কাটার বিষয় যথাযত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম একবার বলেন অনুমতি ছাড়া কি গাছ কাটা যায়। আবার ইনিয়ে বিনিয়ে প্রসংগ এড়িয়ে এ প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সাংবাদিকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষাত করবেন বলে প্রলোভন দেখান।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউসুফ আলী মৃধার সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলে তিনি দু'বার রিসিভ করেও কথা বলেননি। পরে অন্য নাম্বার দিয়ে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম স্বপনের কাছে জানতে চাইলে, বিদ্যালয়ের গাছ কাটা বা বিক্রির সিন্ধান্তের বিষয় তিনি অবহিত নন বলে জানান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা বা বিক্রি সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা বা বিক্রির বিষয় তিনি অবহিত নন।
সময় জার্নাল/ইএইচ